শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালি সংস্কৃতিতে বৃদ্ধাশ্রম কেন

মো. তাসনিম হাসান (আবির) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

পৃথিবীতে মহান সৃষ্টিকতার্র পরেই হচ্ছে মা-বাবার স্থান। ইসলাম ধমের্ মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এ সম্পকের্ বাণী দিয়েছেন। তেমন প্রত্যেক ধমের্ই সৃষ্টিকতার্র পরেই মা-বাবাকে সম্মান দেয়া হয়েছে। আমরা এই পৃথিবীতে মহান সৃষ্টিকতার্র রহমতে মা-বাবার মাধ্যমে এসেছি। একজন মা তার সন্তানকে দীঘর্ ১০ মাস ১০ দিন গভের্ রেখে পৃথিবীর আলো দেখায়। শুধু একজন মা বোঝে এই প্রসব যন্ত্রণা। আজকে তারা সারাজীবন কষ্ট করে নিজে খেয়ে না খেয়ে তার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলে। সামনে যত বাধা-বিপত্তিই আসুক না কেন তাদের চিন্তা থাকে আমাদের সন্তানকে কীভাবে সমাজের একজন উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো। সেই আমরা যখন বড় হয়ে যাই, যখন তথাকথিত মানুষ হয়ে যাই তখন জন্মদানকারী মা-বাবাকে ভুলে যাই। তথাকথিত আধুনিক সভ্য সমাজ থেকে মা-বাবাকে দূরে ঠেলে দিই। যে সময়টাতে একজন মা-বাবার সব থেকে বেশি প্রয়োজন তার সন্তানকে, ঠিক সে সময়ে আমরা তাদের অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ঠেলে দিই। যেখানে আছে শুধু হতাশা, কষ্ট আর একাকিত্ব। অথচ একজন সন্তানের হতাশা, কষ্ট, একাকিত্বের সময় তার মা-বাবাই হয় তার সবর্ক্ষণের সারথী। সেই মা-বাবাকে আমরা আজকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছি। আমরা বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আনন্দ করছি। আমাদের মনে রাখতে হবে আজকে যারা সন্তান তারাও আগামীতে বৃদ্ধ মা-বাবা হবে। আজকে আমরা আমাদের মা-বাবার সঙ্গে যে ব্যবহার করছি ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানদের কাছ থেকেও আমরা সেই একই ব্যবহার পাবো। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি এমন একটি সংস্কৃতি যা অন্যদের থেকে সম্পূণর্ ভিন্ন এবং একটি সমাজব্যবস্থার জন্য পরিপূণর্। একান্নবতীর্ পরিবারের সংস্কৃতি আমাদের এই বাঙালি জাতির থেকেই উদ্ভব। অতীতে আমরা সকলে মিলে একটা একান্নবতীর্ পরিবারের সঙ্গে সুখে-শান্তিতে বাস করতাম। কিন্তু এখন সেই একান্নবতীর্ পরিবারের কথা ওই রূপকথার কল্পকাহিনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আজকে আমরা অন্য সংস্কৃতির ধারা প্রভাবিত হয়ে একান্নবতীর্ পরিবারের ধারণা থেকে বের হয়ে একক পরিবারের দিকে ঝুঁকছি। আজকে বাংলাদেশে বেশির ভাগ জায়গায় ওই একক পরিবার। যেখানে থাকে শুধু স্বামী-স্ত্রী, সন্তান। আর মা-বাবাকে তারা বোঝা মনে করে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে। এরপর আর কখনো ফিরেও তাকায় না। আজকাল পত্রিকা বা টেলিভিশন খুললেই দেখা যায় সন্তান তার মা-বাবার ওপর অত্যাচার করে ঘর থেকে রাস্তায় বের করে দেয় বা তাদের ঠঁাই হয় গোয়ালঘরে। এগুলো এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি। বিবেকবোধ বিসজর্ন দিয়ে আমরা এগুলো করছি, আবার অন্য কেউ ভুল ধরিয়ে দিলেও আমরা অনুতপ্ত হই না। যে মা-বাবা তার সন্তান অসুস্থ হলে রাতের পর রাত জেগে বা খেয়ে তার সন্তানের সেবা করে তাকে সুস্থ করে তোলে, সেই সন্তান হয়ে আমরা আমাদের অসুস্থ মা-বাবাকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি। এগুলো সব বতর্মানে আমাদের দেশে হচ্ছে, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে হচ্ছে। ইদানিং বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যা আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়কেই ইঙ্গিত করে। অথচ আমরা যারা নিজেদের মা-বাবাকে ওই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসি তাদের কাছে বলবো তারা যাতে নিজেরা প্রথমে গিয়ে ওখানে দেখে আসে। কি নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করে ওখানকার হতভাগ্য মানুষ! তাদের সন্তানদের কাছে পাওয়ার আকুতি ওখানকার পরিবেশকেও ভারী করে তোলে। আমরা সবসময় মনে রাখবো যে মা-বাবার দ্বারা আমরা পৃথিবীতে এলাম, যাদের জন্য আজকে আমরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত, তাদের প্রতি আছে আমাদের অনেক দায়িত্ববোধ। আর যেসব স্ত্রীরা স্বামীদের থেকে তাদের মা-বাবাকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন তারাও মনে রাখবেন আপনারও কোনো মায়ের সন্তান, কোনো বাবার আদরের কন্যা। তাই আপনারা আপনাদের স্বামীকে বিপথে নেয়ার বদলে তাদের এসব ঘৃণ্য কাজ করা থেকে বিরত রাখবেন। কারণ আমাদের এই রক্তে অজির্ত মহান বাঙালি সংস্কৃতিতে বৃদ্ধাশ্রম খুবই বেমানান। আমাদের সংস্কৃতি বলে মা-বাবাসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে একান্নবতীর্ পরিবারের মধ্যে বাস করতে। তাই আমরা নিজেরা নিজেদের ভালোবাসবো, মা-বাবাকে তাদের উপযুক্ত সম্মান দেবো এবং সবসময় তাদের প্রয়োজন বলার আগেই পূরণ করব আর অসুবিধা দূর করব। কারণ আমাদের দ্বারা যদি তারা কষ্ট পান তাহলে ইহজগতেও আমরা সুখী হবো না, আর পরকালেও সৃষ্টিকতার্র অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হবো। এই মহান বাঙালি সংস্কৃতির প্রত্যেকটি বাঙালির চিন্তাভাবনা হওয়া উচিত কীভাবে দেশ থেকে এই বৃদ্ধাশ্রম প্রথা উঠানো যায়। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব মা-বাবা, ভালো থাকুক সকল সন্তানেরা আর অটুট থাকুক এই মহান বাঙালি সংস্কৃতি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22936 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1