বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নবজাতকসহ মায়ের মৃত্যু

অত্যন্ত বেদনাদায়ক
নতুনধারা
  ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। হেন কোনো অপরাধ নেই, যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, মা-বাবা নিজ সন্তানকে, ভাই ভাইকে অবলীলায় হত্যা করছে। প্রেমের কারণে অথর্-সম্পত্তির লোভে সমাজে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে হতাশা নিঃসঙ্গতা বঞ্চনা অবিশ্বাস আর অপ্রাপ্তিতে সমাজে আত্মহননের ঘটনাও বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের অথর্ জোগাড় করতে না পেরে ছেলে খুন করছে বাবা-মাকে, স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে। অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কিংবা কাউকে ফঁাসিয়ে দেয়ার নিমিত্তে নিজের সন্তানকে হত্যা পযর্ন্ত করছে। পারিবারিক বন্ধন স্নেহ ভালোবাসা মায়া মমতা আত্মার টানÑ সবই যেন আজ স্বাথর্ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। এর পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি নিযার্তন ও হত্যার শিকার হচ্ছে দেশের কোমলমতি শিশুরা। দিনের পর দিন এই নিযার্তন ও হত্যার ঘটনা বেড়েই চলছে।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে লাইফ কেয়ার হাসপাতালের পঁাচতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে চার দিনের শিশুসহ এক মা নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে শহরের পুরাতন জেলরোড এলাকায় তাদের মৃত্যু হয়। নিহত সীমা আক্তার (২৫) সদর উপজেলার ঘাটিয়ার গ্রামের প্রবাসী মনির মিয়ার স্ত্রী। ওসি। মঙ্গলবার সীমাকে তার পরিবারের লোকজন সন্তান প্রসবের জন্য ওই হাসপাতালে ভতির্ করান। ওই দিনই তার একটি ছেলেশিশুর জন্ম হয়। প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে কলহের জের ধরে সীমা আক্তার সদ্য প্রবসকৃত সন্তানকে ছাদ থেকে ফেলে আত্মহত্যা করেন বলে পত্রিকান্তরে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই ঘটনা সত্যিই বেদনাদায়ক। বিশেষ করে নবজাতকের জন্য। তার কী দোষ যে সে পৃথিবীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ হারাল।

সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। আসলে আমরা আজ যে সমাজে বাস করছি সে সমাজ আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, এমনকি যে রাষ্ট্রে বাস করছি সে রাষ্ট্রও নিরাপত্তাদানে অপারগ। আমরা নানারকম সামাজিক এবং রাষ্ট্রিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেও বারবার ব্যথর্ হচ্ছি। পা পিছলে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছি।

সমাজের একশ্রেণির ববর্র পাষÐ মানুষের হাতে অনেকের জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়ছে, অবলীলায় জীবন চলে যাচ্ছে। যদি শিশুহত্যা রোধ করা না যায় তা হলে সমাজ ও রাষ্ট্রে এটা এক ভয়ঙ্কর বিপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা কোনোভাবেই প্রত্যাশা করি না, আর কোনো শিশু এভাবে নিষ্ঠুর হত্যার শিকার হোক। এটা রোধ করা না গেলে একদিকে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে অন্যদিকে আমাদের শিশুরাও থাকবে নিরাপত্তাহীন।

মনে রাখতে হবে আজকের শিশুরাই আগামী দিনে দেশের কণর্ধার, ভবিষ্যৎ কাÐারী। তাদের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত করা না যায় এবং রাষ্ট্র যদি তাদের মেধা বিকাশে ও নিরাপত্তা দানে কাযর্কর পদক্ষেপ না নেয় তবে তা কেবল দুভার্গ্যজনকই নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও হুমকিস্বরূপ। তাই এ ক্ষেত্রে কাযর্কর পদক্ষেপই প্রত্যাশিত।

সামাজিক মূল্যবোধ আজ কোন পযাের্য় গিয়ে ঠেকেছে তা এই ঘটনার দ্বারাই প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা সামাজিক অবক্ষয়ের চ‚ড়ান্ত নজির। আমরা দীঘির্দন থেকেই লক্ষ করে আসছি এই ধরনের আত্মঘাতী প্রবণতা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা প্রতিরোধে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। এই দায়িত্ব নিতে হবে পরিবার ও সমাজকেই। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও যথেষ্ট করণীয় রয়েছে। এই ধরনের আত্মঘাতী প্রবণতা রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনবে। সুতরাং সময় থাকতেই সাবধান হওয়া সমীচীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18531 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1