শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সম্প্রীতির আবহে যথাযোগ্য মযার্দায় শারদীয় দুগোর্ৎসব

পুলিশি এসব সফল অভিযানের ফলে একদিকে যেমন জঙ্গিরা তাদের পরিকল্পনামাফিক কাযর্ক্রম চালাতে পারছে না ঠিক সেরকম সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। সেজন্য এবারের দুগার্পূজাতে উপচেপড়া মানুষের ভিড় সেরকমটাই জানান দেয়। আস্তে আস্তে এখন সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এবারে নিবির্ঘœতাই আগামী দিনে ভরসা হবে সবার জন্য।
ড. মো. হুমায়ুন কবীর
  ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

বাঙাালি হলো উৎসবপ্রিয় জাতি। এসব উৎসব যে শুধু ধমীর্য় অনুষ্ঠানাদিতেই আটকে থাকে তাই নয়। ধমীর্য় অনুষ্ঠানাদির বাইরে পহেলা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস, চৈত্র সংক্রান্তি, পিঠা উৎসব ইত্যাদি কোনো কিছুই বাদ যায় না। দুগার্পূজা সনাতন হিন্দু ধমার্বলম্বীদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব। কিন্তু বাংলাদেশের ধমীর্য় চরিত্রটি এখন এমন পযাের্য় এসে ঠেকেছে যে সব ধমের্র রীতিনীতি পালনই এখন সাবর্জনীনতা লাভ করেছে। মুসলমানদের দুটি ঈদ, খ্রিস্টানদের বড়দিন, ইস্টার সানডে, বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূণির্মা, হিন্দুদের শ্রী শ্রী শারদীয় দুগার্পূজাসহ আরও অনেক পূজাপাবর্ণ উদযাপন এখন এতটাই সাবর্জনীনতা পেয়েছে যে, প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধমীর্য় দিবসগুলোতেও অন্য ধমের্র মানুষদের দাওয়াত করে তাদের আনন্দে শরিক হওয়ার জন্য। এভাবে ধমের্ ধমের্ মানুষে মানুষে সৌহাদ্যর্ ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য প্রতিবছরের মতো এবারেও (২০১৮) দুগার্পূজা সেভাবেই পালন করা হচ্ছে। মহালয়ার মাধ্যমে পূজার আনূষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সেই শুরুর প্রথম দিকে প্রথমা, দ্বিতীয়া... এভাবে যেতে যেতে মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে দুগার্পূজা আরম্ভ হয়ে থাকে। সেভাবেই ১৫ অক্টোবর ২০১৮ থেকে মহাষষ্ঠীর যাত্রা শুরু হয়েছে। তারপর একে একে মহাসপ্তমী ও মহাঅষ্টমীর দিকে অগ্রসর হয়ে প্রতিটিতেই নতুন নতুন আরাধনা ও অঞ্জলির দ্বারা বরণ করা হয়েছে মা দুগাের্ক। মহাঅষ্টমীতে কুমারীপূজার মাধ্যমে ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা হয়েছে। নবমীতে আরতি নৃত্য, পূজা অঞ্জলি, মÐপে মÐপে পূজারি ও সব বয়সের ছেলে-মেয়েদের প্রতিযোগিতার আয়োজন সাবর্জনীন মানুষের ঢল ইত্যাদি সবাইকে এক মঞ্চে এনে দঁাড় করায়।

দেখা গেছে, একটি শহরে প্রতি পাড়ায় কিংবা প্রতি মহল্লায় প্রতিষ্ঠিত পূজামÐপগুলো দেখার জন্য সব ধমের্র মানুষের ঢল নামে। এ সময় পূজার কারণে শহরের নিদির্ষ্ট কিছু রাস্তা-ঘাটে এমন তীব্র যানজট হয় যে, এর জন্য স্বাভাবিক চলাফেলা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু তারপরেও কারও তেমন কোনো অভিযোগ নেই। কারণ তখন পূজারিরা তাদের দামি গাড়ি ছেড়ে হয় পায়ে হেঁটে, নয়তো মামুলি রিকশা কিংবা অটোবাইক নিয়ে এক পূজা থেকে অন্য পূজামÐপে মÐপে ঘুরে বেড়ান। এখানে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি সময়োপযোগী ¯েøøাগান রয়েছে, ‘ধমর্ যার যার, উৎসব সবার’ যা আমাদের সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে তোলে। এবারের পূজা নিয়ে একটা চাপা আতঙ্ক ছিল যে কোনো ধরনের জঙ্গি-সন্ত্রাসী কমর্কাÐ ঘটে কি না। এর অনেক যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকাটাও ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক। কারণ যে দেশের জঙ্গিরা দেশের অত্যন্ত নামকরা এবং সবচেয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকা রাজধানী ক‚টনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশানের হলি আটির্জান নামক রেস্তোরঁায় পবিত্র রমজানের মধ্যে ইফতাররত অবস্থায় এবং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় পবিত্র ধমর্ ইসলামের নামে জঙ্গিরা হামলা করে নিরীহ দেশি-বিদেশি মানুষ হত্যা করে। যারা আরও ধমর্শালার ধমর্গুরু, পুরোহিত, মসজিদের ইমাম, খাদেম, খ্রিস্টীয় ধমর্যাজক, ফাদার, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ইত্যাদি কোনো কিছুই তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি সেখানে হিন্দু সনাতন ধমার্বলম্বীদেরও এমন একটি অনুষ্ঠানে আক্রমণ করবে না কিংবা আক্রমণের পরিকল্পনা থাকবে না তা কোনো অবস্থাতেই ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আর সাম্প্রতিক এসব ঘটনার পর সরকারি জিরো টলারেন্স নীতির কারণে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমূলে উৎপাটনের লক্ষ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদা তৎপর রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে তারা একের পর জঙ্গি আস্তানা শনাক্ত করে আক্রমণ চালিয়ে তাদের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে সমথর্ হচ্ছে।

হলি আটির্জান ও শোলাকিয়া হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্প্রতি ঢাকার মিরপুর, কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ ইত্যাদি কয়েকটি স্থানে সফল অভিযান চালিয়ে তাদের নেটওয়াকর্ অনেটাই দুবর্ল করতে সমথর্ হয়েছেন। এ পূজা চলাকালীন পূজার বিভিন্ন কমর্কাÐে নাশকতার হামলার পরিকল্পনা বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পূবের্ও ন্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক যৌথ সফল অভিযার পরিচালনা করা হয়। এতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব পযাের্য়র পরিকল্পনাকারী অনেককে ধরাশায়ী করতে সমথর্ হয়। তাছাড়া কিছুদিন পূবের্ চট্টগ্রাম ও কক্সব্জারের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু জঙ্গিকে তাদের পরিকল্পনা ফঁাস হওয়ার কারণে বন্দুকযুদ্ধে জীবন দিতে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিবিের্ঘœ দুগোর্ৎসব পালনের জন্য যেকোন ধরনের নাশকতা নস্যৎ করে দেয়ার জন্য তৎপর রয়েছে। কাজেই বিজয়া দশমীতে মা দুগার্র দশ হাত দিয়ে যেকোনো ধরনের অসুরীয় শক্তি বিনাশ করে সত্য ও সুন্দরের জন্য বিজয় নিশ্চিত করবেনÑ এটাই সবার প্রত্যাশা। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার স্বাথের্ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিদেির্শত ও নিধাির্রত সময়ের মধ্যেই অথার্ৎ দিনের অবস্থাতেই সবাই তাদের প্রতিমা বিসজর্ন করবেন বলে আমাদের সবার বিশ্বাস। তাতে হয়তো অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনার এড়ানো যেতে পারে। বলা তো যায় না, কারণ কথায় আছে, সাবধানের মার নেই।

পুলিশি এসব সফল অভিযানের ফলে একদিকে যেমন জঙ্গিরা তাদের পরিকল্পনামাফিক কাযর্ক্রম চালাতে পারছে না ঠিক সেরকম সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। সেজন্য এবারের দুগার্পূজাতে উপচেপড়া মানুষের ভিড় সেরকমটাই জানান দেয়। আস্তে আস্তে এখন সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এবারে নিবির্ঘœতাই আগামী দিনে ভরসা হবে সবার জন্য।

ড. মো. হুমায়ুন কবীর: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

শনফযঁসধুঁহ০৮@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18011 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1