শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১০ মহররম ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

হজরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (রা.) সম্পকের্ মহানবী (সা.) বলেছেন, জান্নাতের যুবকদের সরদার তারা। তাদের উভয়ের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহতায়ালার কাছে এই দোয়া করতেন যে, হে আল্লাহ! আমি তাদের ভালোবাসি, তুমিও তাদের ভালোবাস।
মাহমুদ আহমদ
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মহানবী (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র, ন্যায়ের মূতর্ প্রতীক হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে এই পবিত্র মহররম মাসের ১০ তারিখে নিমর্মভাবে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেন। সেদিন প্রকৃত ইসলাম ও সত্যের জন্য হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদ বাহিনীর কাছে মাথানত না করে যুদ্ধ করে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। তিনি সেদিন ন্যায় ও সত্যের জন্য চরম আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা অনুকরণীয়। ধমের্র জন্য তার যে ত্যাগ তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে অপরকে কষ্ট দিয়ে শোক প্রকাশের কোনো শিক্ষা ইসলামে নেই আর শোক দিবস পালনের কোনো অনুমতিও শ্রেষ্ঠ রাসুল (সা.) তার উম্মতকে দেননি। তবে হজরত রাসুল (সা.) মৃত ব্যক্তির জন্য মাত্র তিন দিন শোক পালনের অনুমতি দিয়েছেন আর মৃত স্বামীর জন্য স্ত্রীর পক্ষে চার মাস ১০ দিন ইদ্দতকাল পালনের নিদের্শ রয়েছে। পক্ষান্তরে শহীদে কারবালায় হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) বলে গেছেন- ‘আমি শহীদ হলে তোমরা আমার জন্য উহ্! আহ্! কর না, অঁাচল ছিঁড় না, বরং ধৈযর্ ধারণ করে থাকবে’। নিঃসন্দেহে আমরা বলতে পারি হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলামে একক নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নিজ দেহের শেষ রক্তবিন্দু পযর্ন্ত দান করে গেছেন, যুগ যুগ ধরে তার এই ত্যাগ মুসলিম উম্মাহকে এক ইমামের ছত্রছায়ায় জীবন অতিবাহিত করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।

হজরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (রা.) সম্পকের্ মহানবী (সা.) বলেছেন, জান্নাতের যুবকদের সরদার তারা। তাদের উভয়ের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহতায়ালার কাছে এই দোয়া করতেন যে, হে আল্লাহ! আমি তাদের ভালোবাসি, তুমিও তাদের ভালোবাস।

অতএব, যারা রাসুলুল্লাহর দোয়ার কল্যাণ এতটা লাভ করেছেন আর একই সঙ্গে যারা শাহাদতের পদমযার্দাও লাভ করেন এমন মানুষ অবশ্যই আল্লাহর প্রতিশ্রæতি অনুসারে জান্নাতে মহান জীবিকা লাভ করবেন এবং তাদের হত্যাকারী অবশ্যই খোদার গযব এবং ক্রোধের শিকার হবে। এই মহররম মাসে আজ থেকে চৌদ্দশ’ বছর পূবের্ দশ তারিখে নিষ্ঠুর পাষানরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই প্রিয়কে শহীদ করে। যে শাহাদতের ঘটনা শুনে গা শিউরে ওঠে। এই পাষানরা এক মুহ‚তের্র জন্যও সেদিন চিন্তা করল না যে, কাকে আমরা খড়গাঘাত করতে যাচ্ছি। মহানবী (সা.) সেই সমস্ত কুপ্রথা এবং সামাজিক রীতি-নীতিকে মেটাতে এসেছেন যার কারণে মানবিক মূল্যবোধ পদদলিত হয়। তিনি (সা.) কাফেরদের প্রতিও মাজর্না ও ক্ষমার নিদের্শ দিয়েছেন কিন্তু খোদার এই প্রিয় রাসুলের অত্যন্ত আদরের দৌহিত্র যার জন্য তিনি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন যে, হে আল্লাহ আমি একে ভালোবাসি তুমিও তাকে ভালোবাস। এরপর তিনি (সা.) এও বলেছেন, যে আমার এই দৌহিত্রকে ভালোবাসে সে আমাকে ভালোবাসবে, যে আমাকে ভালোবাসে সে আসলে আল্লাহ পাককে ভালোবাসে, আর আল্লাহকে ভালোবাসার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

ইমাম হোসাইন (রা.) শান্তি চেয়েছিলেন, তিনি এজিদের প্রতিনিধিদের এ কথাও বলেছিলেন, আমি যুদ্ধ চাই না, আমাকে যেতে দাও, আমি গিয়ে আল্লাহর ইবাদত করতে চাই বা কোনো সীমান্তে আমাকে পাঠিয়ে দাও যেন ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতে করতে আমি শাহাদাতবরণ করতে পারি। কিন্তু এজিদ বাহিনী তা গ্রহণ করেনি। আল্লাহতায়ালারও প্রতিশোধ নেয়ার নিজস্ব রীতি আছে যেভাবে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) নিজেই বলেছিলেন, আল্লাহতায়ালা আমার হত্যার প্রতিশোধ নিবেন আর আল্লাহ প্রতিশোধ নিয়েছেনও। এজিদ বাহ্যত সাময়িক সফলতা লাভ করেছে। প্রশ্ন হলো এজিদের নেকির কারণে কী আজকে কেউ তাকে স্মরণ করে? যদি তার সুখ্যাতি থাকত তাহলে মুসলমান নিজেদের নাম এজিদই রাখত কিন্তু কোনো ব্যক্তি নিজের সন্তানের নাম আজ এজিদ আর রাখে না। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর জীবনের একটি উদ্দেশ্য ছিল। তিনি কখনো রাষ্ট্র ক্ষমতা অজের্নর লোভ রাখতেন না, তিনি সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। যে ন্যায়ের জন্য ইমাম হোসাইন দÐায়মান হয়েছিলেন অথার্ৎ খেলাফতের নিবার্চনের অধিকার রাষ্ট্রবাসীর ও সব মুসলমানের। কোনো ছেলে পিতাকে উত্তরাধিকার সূত্রে এই অধিকার দিতে পারে না। তিনি বলেন, এই নীতি আজও সেভাবেই পবিত্র যেভাবে পূবের্ পবিত্র ছিল। তার শাহাদাত এই অধিকারকে আরও স্পষ্ট করেছে। তার ত্যাগ, কোরবানি আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রেখে গেছে। তাই অশান্ত বিশ্বকে শান্তিময় করার জন্য আবারও সত্য ইমাম হোসাইনের মতো নেতার প্রয়োজন।

মুসলিম জাহান আজ চরম বিপযের্য়র সম্মুখীন। শ্রেষ্ঠ নবীর (সা.) অনুসারীরা আজ সবর্গ্রাসী অবক্ষয়ের শিকার হয়ে বিধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। অধঃপতিত মুসলমানরা আজ প্রকৃত ইসলামের স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সমস্ত মুসলিম আজ শতধা বিভক্ত হয়ে পরস্পর ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়েছে, আর মুসলমানদের এই অনৈক্যের কারণেই ভ্রাতৃঘাতী দ্ব›দ্ব সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়তে দ্বিধাবোধ করছে না। ইরান-ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, মিয়ানমার ইত্যাদি দেশসমূহে যে রক্তক্ষয়ী সংঘষর্ প্রতিদিন ঘটছে আর এতে অগনিত নিরীহ মুসলসান এবং নিষ্পাপ শিশু নিহত হচ্ছে এর প্রতিকারের জন্য কি কারো কোনো মাথাব্যথা আছে? ইতিহাস থেকে জানা যায়, যখন থেকে মুসলমানরা ভ্রাতৃঘাতি দ্ব›দ্ব সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে তখন থেকেই তাদের উন্নতি ও অগ্রগতি থেমে গেছে।

পৃথিবীর বতর্মান যে পরিস্থিতি, চারদিক দিয়ে মুসলমানরা আজ নানান সমস্যার সম্মুখীন এবং সবের্ত্র তারা মার খাচ্ছে এর কারণ কী? এর একমাত্র কারণ হলো মুসলিম উম্মাহর মাঝে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর মত সত্য ও ন্যায়পরায়ণ কোনো নেতা নেই। মুসলমানদের এ অধঃপতন থেকে উদ্ধারের জন্য সত্য ইমাম হোসাইনের প্রয়োজন আবার। যিনি এসে অশান্ত বিশ্বকে শান্তিময় করে তুলবেন, যিনি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ইমাম হবেন, যার নেতৃত্বে ইসলামের বিশ্ব বিজয় সংঘটিত হবে। যিনি রক্তাক্ত বিশ্বকে তরবারির পরিবতের্ ইসলামী দলিল প্রমাণের মাধ্যমে শান্ত করবেন। মুসলিম বিশ্বে যে কারবালা সংঘটিত হচ্ছে, তা তিনি দূর করবেন।

শ্রেষ্ঠ নবীর, শ্রেষ্ঠ উম্মতের এই চরম অধঃপতন ও বিপযর্য় থেকে উদ্ধারের জন্য সত্য ইমাম হোসাইনের বিকল্প নেই। মহানবী (সা.) বিশ্ববাসীকে ধ্বংস ও পতন থেকে রক্ষা করে পুণ্যের পথে চালিত করার জন্যেই এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি ঐশী নেতৃত্বের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য স্বীকার করে একতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন সুদৃঢ়তর করে প্রগতির পথে চলতে বলেছেন। আজ সমগ্র মুসলিম জাহান কোন পথে চলছে? আজ মুসলমানদের মাঝে কোনো ঐশী ইমাম নেই, যার ফলে সারা মুসলিম জাহান যেন আজ এক রক্তপিÐে পরিণত হয়েছে। আমরা জানি, প্রিয় নবীর (সা.) অন্তধাের্নর পর মুসলমানদের মধ্যে একক নেতৃত্বের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কিন্তু যখন থেকে মুসলমান একক নেতৃত্বকে ভুলে বসলো তখন থেকেই মুসলিম উম্মাহর রক্ত ঝরা শুরু হয়। তাই মুসলিম বিশ্বকে পুনরায় এক পতাকা তোলে একত্রিত করার জন্য একজন সত্য ইমাম হোসাইনের বড়ই প্রয়োজন।

মাহমুদ আহমদ: ইসলামী গবেষক ও সহ-সম্পাদক, আহŸান

সধংঁসড়হ৮৩@ুধযড়ড়.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13490 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1