বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

থশুরুতেই প্রতিরোধ করতে হবে

মাদকের সাথে সামাজিক আইনশৃঙ্খলার একটি সরাসরি সম্পকর্ রয়েছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে না পেরে মাদকসেবীরা চুরি, ছিনতাই খুন থেকে শুরু করে মারাত্মক সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তবে এনপিএস বা ইয়াবা যাই হোক সব মহলে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।
অলোক আচাযর্্য
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

দেশে মাদক এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এই অভিযানের মধ্যেই দেশে নতুন এক মাদকের সন্ধান পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই নতুন মাদকের ডাক নাম ‘খাট’। তবে এর শুদ্ধ নাম হলো ’এনপিএস’। এই মাদক নাকি ইয়াবার চেয়েও ভয়ঙ্কর। চলমান অভিযানে অনেক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, বহুসংখ্যাক গ্রেফতার হয়েছে আর অনেকেই চলমান অভিযানের ভয়ে দেশ থেকেই পালিয়ে গেছে। অভিযানের মধ্যেও দেশে ইয়াবা ঢুকছে। ইয়াবা হলো বতর্মান সমাজের সবচেয়ে বড় কাটা। এর বিরুদ্ধে সবার্ত্মক যুদ্ধ করেও সমাজে এর ব্যবহার কমানো যাচ্ছে না। তারপর আবার মড়ার উপর খঁাড়ার ঘা হিসেবে হঠাৎ এনপিএসের আবিভার্ব। ইয়বার চেয়েও ভয়ঙ্কর এই মাদকের কয়েকটি চালান ইতিমধ্যেই আইন-শৃঙ্খলার হাতে ধরা পড়েছে। ইয়াবাই এখন পযর্ন্ত মাদক গ্রহণকারী এবং ব্যবসায়ীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এনপিএস সবেমাত্র এদেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এটা নাকি আরও সহজে বহনযোগ্য। এ দেশের এক ব্যবসায়ীর নামে এই আফ্রিকান দেশের মাদকের কয়েকটি চালান দেশে এসেছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পূবর্ আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া থেকে আসা নতুন ধরনের এই মাদকের নাম ‘খাট’। আর এর বৈজ্ঞানিক নাম ’এনপিএস’ (নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস)। এখন পযর্ন্ত আমাদের দেশে না হলেও সারা বিশে^ ইয়াবাকে পেছনে ফেলেছে এই ‘খাট’ নামের মাদক। বিশে^ মাদক সেবনপ্রবণ ৮০টি দেশ এবং অঞ্চল জরিপ করে ৭০ টিতেই এনপিএসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গত বছর জাতিসংঘ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমস (ইউএনওডিসি) এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, এনপিএস সেবনকারীরর শেষ গন্তব্য ধীরে ধীরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়।

এই মাদক সেবনের পর ইয়াবার চেয়েও ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তবে এই মাদকের পাচারের পথ সড়কপথ বা নৌপথ নয় বরং আকাশপথ ব্যবহার করে এই মাদক পাচার করা হয়। এই মাদকের ৮৬১ কেজি ওজনের একটি বিশাল চালান আমাদের দেশে ধরা পড়েছে। চালানটি পূবর্ আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া থেকে কয়েক দিন আগে গ্রিনটির প্যাকেটের আড়ালে আনা হয়েছিল। এনপিএসে ক্যাথিনিন জাতীয় পদাথর্ থাকে যা ইয়াবার মিথাইন এমফিটামিনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এটি সাধারণত যৌন আকাক্সক্ষা বাড়াতে, রাত জেগে থাকতে ব্যবহার হলেও এটি সেবনে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝঁুকির মধ্যে পরতে পারে এই মাদক সেবনকারী। পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, মাদকবিষয়ক আন্তজাির্তক জানার্লগুলোর মতে ‘এনপিএস’ বিষয়ে স্পষ্ট করে পরিভাষার বিশ্লেষণ করা কঠিন। তবে এনপিএসকে সংজ্ঞায়িত করা হয়, অপব্যাবহারের পদাথর্, যা ১৯৬১ সালের প্রচলিত মাদক আইন অথবা ১৯৪১ সালের ওষুধ আইনে নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়। অনেক এনপিএস প্রথমবারের মত সংশ্লেষণ বা সমন্বয় হয় ৪০ বছর আগে। কিন্তু সম্প্রতি এটি বাজারে ক্ষতিকারক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ধরনের মাদক প্রচলিত নয় বলে এর নাম মাদক দ্রব্যের তালিকায় নেই।

জনপ্রিয়তার দিক থেকে ইয়াবাই এখনও মাদক ব্যবসায়ী এবং ব্যবহারকারীর কাছে এগিয়ে। এর পাশাপাশি ফেনসিডিল, গঁাজা, হেরোইন এসব মাদক ব্যবহার হচ্ছে। তবে ইয়াবার বিস্তার এত ভয়ঙ্কর আকারে হয়েছে যে, তা শিক্ষাথীর্র ব্যাগে পযর্ন্ত স্থান করে নিয়েছে। মাদকে আসক্ত কেন হয়। কেনই বা তারা বই খাতা কলম ছেড়ে মাদকের মত সবর্নাশের পথে পা বাড়ায়। এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা কতটুকু সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে। কোন অন্যায় প্রতিরোধে আইন যথেষ্ট নয়। আইনের সাথে সচেতনতা মিলে রোধ করা সম্ভব একটি অপরাধকে। একটি ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকাতে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে পরিবারকে। তারপর সমাজের সকল স্তরের মানুষকে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় আমাদের গ্রামে গঞ্জে ছোট ছোট ছেলেদের মাদকের সাথে পরিচয় ঘটে পরিবারের সদস্যদের হাত ধরেই। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। প্রথম তামাক জাতীয় নেশা সেখানেই প্রত্যক্ষ করে। হাতের নাগালের মধ্যেই সেগুলো থাকে। আমাদের দেশে গ্রামে গঞ্জে এমনকি শহরে খুব প্রচলিত তামাকজাত দ্রব্য হলো বিড়ি বা সিগারেট, জদার্ (যা বেশিরভাগ পরিবারের নারী-পুরুষই পানের সাথে খায়), ও গুল। এসব এতটাই সহজলভ্য ও হাতের নাগালে থাকে যে ইচ্ছা করলেই এসব কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা তা পরখ করতে পারে। ছাত্রছাত্রীরা এই সময়টাতে থাকে কৌত‚হলী। যে কোনো জিনিসের প্রতি থাকে অদম্য কৌতুহল। এভাবে আনতে আনতে এবং তা বাড়িতে কাউকে খেতে দেখে সেও তা মুখে নেয়। দেখা যায় প্রথমে কৌতুহল বশত অনেকেই শিশু বয়সেই মাদকের সংস্পশের্ আসে।

ইয়াবার আকষর্ণীয় ছোবলে আজ ধংসের অনেক কাছে পৌছে গেছে দেশ। প্রতিদিন পাচার হয়ে দেশের ভেতর ঢুকছে ইয়াবা। ইয়াবার কারণে কত ছেলে তার মার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে তার হিসাব কে রাখে। কত ভাই তার বোনের স্নেহ থেকে দূরে গেছে তারও হিসাব নেই। সেসব হিসাব রাখাও সম্ভব নয়। তবে এর জন্য কেবল প্রশাসনের দারস্থ হয়ে বসে থাকলে লাভের লাভ কিছুই হবে না। সমাজের প্রতি দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে ইয়াবা তথা মাদকের বিরুদ্ধে সচেষ্ট হতে হবে। আর এই কাজটি করতে হবে স্কুল কলেজের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এসব মাদকের কুপ্রভাব বোঝানোর মাধ্যমে। তারা যেন কোনোভাবেই কোনো বন্ধু বা অন্য কোনো উপায়ে অসৎ সঙ্গের পাল্লায় পরে ইয়াবা আসক্ত না হয় পরিবারের সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কোনো কাজ যত চ্যালেঞ্জেরই হোক না কেন তা চেষ্টা করলে করা সম্ভব। মাদকদ্রব্যগুলোর মধ্যে ইয়াবা নিয়ে বেশি আলোচনা করার কারণ ইয়াবাই আজ গ্রামে-গঞ্জে এমনকি কুঁড়েঘরে পযর্ন্ত পেঁৗছে গেছে। এর সহজে বহনযোগ্যতা এবং আকষর্ণীয় রং এবং ইয়াবা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ইয়াবাকে মাদকাসক্তের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তবে ইয়াবার ব্যাবহার ছাড়াও অন্যান্য মাদকদ্রব্য যেমন ফেনসিডিল বা গঁাজাও মাদকসেবীদের কাছে বেশি প্রিয়। আগেই বলেছি মাদকাসক্তের ব্যবহার কমাতে কেবল প্রশাসনই যথেষ্ট নয়। পরিবার থেকে আরও বেশি সচেতনতা বা সন্তানদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ পরিবার যদি কঠোর ভূমিকা পালন করে তাহলে প্রতিটি পরিবার থেকে মাদকাসক্তের পরিমাণ কমবে। কারণ মাদকাসক্তের পরিবারই জানে একজন মাদকাসক্ত সন্তানের কি যন্ত্রণা। তাছাড়া দেশের অনেক মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন ওঠে। এসব কেন্দ্রের পরিবেশ আরও উন্নত করতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের মূল হোতাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ যারা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে তাদের ধরার সাথে সাথে বেশি গুরুত্বপূণর্ হলো যারা এসব মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে। দেশে মাদকদ্রব্য ঢোকার উৎসমুখ দিয়ে যাতে ইয়াবা না ঢুকতে পারে সে ব্যাপারে সবোর্চ্চ সতকর্তা রাখতে হবে। বড় বড় সব রাঘববোয়ালকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। এসব রাঘব বোয়ালই দেশের যুব সমাজের মধ্যে নেশার বীজ বুনছে। পাশ্চাত্য ও পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের দেশে পরিবার ব্যবস্থা আজ ভঙ্গুর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যেসব পরিবারের সদস্যদের ভেতর সম্পকের্ অস্থিরতা বিরাজমান সেসব পরিবারের সন্তানরাই মাদকাসক্ত। গ্রাম গঞ্জের পরিস্থিতি বাদ দিলে শহরের আধুনিক ও ব্যস্ত পরিবারগুলোতে এ হার বেশি। সন্তানের সাথে মা বাবার দুরত্ব থাকার কারণে নিঃসঙ্গতার জন্ম হচ্ছে। নিঃসঙ্গতা কাটাতে তারা মাদকের আশ্রয় নিচ্ছে।

মাদকের সাথে সামাজিক আইনশৃঙ্খলার একটি সরাসরি সম্পকর্ রয়েছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে না পেরে মাদকসেবীরা চুরি, ছিনতাই খুন থেকে শুরু করে মারাত্মক সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তবে এনপিএস বা ইয়াবা যাই হোক সব মহলে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।

অলোক আচাযর্্য: কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13300 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1