শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয় ঢাকা শহর রক্ষায় এগিয়ে আসুন

নতুনধারা
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

পৃথিবীর নিকৃষ্ট শহরের তালিকায় ঢাকার নাম আবারও দ্বিতীয় অবস্থানে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বসবাসের অযোগ্যতার পরিমাপে রানাসর্আপের মযার্দা অজর্ন করল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। বিশ্বের ১৪০ রাষ্ট্রের ওপর করা এই পরিসংখ্যানে ঢাকা শহর ১৩৯তম অবস্থানে। যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রকাশিত একটি তালিকায় বেরিয়ে এসেছে এমন অশুভ তথ্য। তালিকার সবের্শষ অবস্থানে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহরের তকমা জুটেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের রাজধানী দামেস্কের। অথার্ৎ বসবাসের অযোগ্যতায় ঢাকা শহরের পরে একমাত্র শহর দামেস্ক। সিরিয়া একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ; সে দেশে গৃহযুদ্ধ লেগেই রয়েছে, সে হিসেবে দামেস্কের এমন অবস্থান হতেই পারে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজধানীর সে ধরনের সমস্যা না থাকলেও দ্বিতীয় শীষর্ অযোগ্য নগরীতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি আসলে হতাশার কারণ এবং দুভার্গ্যজনক। অবকাঠামোগত অবস্থা, রাজনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা, সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিবেচনা করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। সাবির্কভাবে ঢাকার অজির্ত পয়েন্ট ১০০ মধ্যে ৩৮। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিকায় সবচেয়ে নিচে থাকা নগরীগুলোয় নাগরিক জীবনের অনেক সুবিধাই পাওয়া যায় না। তালিকায় সবচেয়ে ভালো নগরীর মযার্দা অজর্ন করেছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা।

ঢাকা মহানগর ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। মানুষের ভারে প্রায় কুঁজো হয়ে পড়েছে এ নগরী। সব ধরনের সরকারি অফিস-আদালত এবং বেসরকারি বড় বড় অফিসের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকায়। এ ছাড়া নানা ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে এ শহরের বড় অংশজুড়ে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের সব থেকে বড় অথৈর্নতিক কমর্সংস্থান সৃষ্টিকারী গামের্ন্ট ফ্যাক্টরির অবস্থান চোখে পড়ার মতন। ঢাকা শহরের কঁাচা টাকা এবং নানান ধরনের পেশা গ্রামীণ মানুষকে বারবার হাতছানি দিয়ে যায়। তাই তো তারা কাজের খেঁাজে পাড়ি জমায় রাজধানী শহরে। এ ছাড়া অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং স্কুল ব্যাঙের ছাতার মতো শহরের অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। অথার্ৎ শিক্ষাথীর্ থেকে শুরু করে সব শ্রেণি পেশার লোকদের ঢল নেমেছে এ শহরে। তারা চিন্তা করে এখানে জীবনধারণ খুবই সহজ এবং আরামদায়ক। কিন্তু বাস্তবে এটার অবস্থা উল্টো। এহেন নানাবিধ কারণে গ্রাম হয়ে পড়ছে জনশূন্য এবং ঢাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ছে।

বিভিন্ন জরিপে ঢাকা শহর বসবাসের যোগ্যতার তালিকায় এত নিম্নে চলে আসার পিছনে নানাবিধ কারণের মধ্যে আরও রয়েছে দূষণ, জলাবদ্ধতা, যানজট। ডাস্টবিন থাকা সত্তে¡ও যত্রতত্র ময়লা-আবজর্না ও অব্যবহৃত জিনিসপত্র ফেলে সুন্দর পরিবেশকে ভাগাড়ে পরিণত করছি। শহরগুলোতে শব্দ দূষণের মাত্রা প্রকট আকারে রূপ নিয়েছে। কলকারখানায় যন্ত্রাদির তীব্র শব্দ, সড়ক যানবাহনে হনের্র অতিরিক্ত ব্যবহার এবং মাইক ও সাউন্ড বক্সের অতিরিক্ত শব্দের কারণে শহরের মানুষ জনশ্রæতি সমস্যায় ভুগছে। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভোগে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। পানি নিষ্কাশনে নেই কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা। পযার্প্ত পরিমাণ খাল এবং ড্রেনের অভাব রয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় ঢাকার নিম্নাঞ্চলগুলো। ঢাকা ওয়াসার এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। বষার্ মৌসুমে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে খেঁাড়াখুঁড়ির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়, বাড়িয়ে তোলে জনদুভোের্গর মাত্রা। প্রায় সময় সড়ক সংস্কারের নামে চলে সড়ক খেঁাড়াখুঁড়ির এক রমরমা ব্যবসা। যানজটের কারণে আজকাল হেঁটে আগানোও কষ্টকর। মাঝেমধ্যে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার গাড়ি থেমে থাকে, চলার কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। যানজটের কারণে শহরের কমর্গতি ধীর হয়ে পড়ছে, বছর শেষে গুনতে হচ্ছে লক্ষ কোটি টাকা। তীব্র যানজটে নানা ধরনের মানসিক সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। এমন অবস্থায় সম্পৃক্ত কমর্কতার্-কমর্চারীদের এগিয়ে আসতে হবে এবং দূষণ, যানজট ও জনদুভোর্গ নিরসনে সুনজর দিতে হবে।

পরিকল্পিত নগরায়ণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেই কোনো সুচিন্তিত নিয়ম-কানুন। যে যেখানে ইচ্ছা নতুন নতুন ভবন গড়ে তুলছে, তোয়াক্কা করছে না রাজউক প্রণীত নিয়ম-কানুনের। মাঝেমধ্যে দেখা যায়,খাল ও নালা ভরাট করে তৈরি করছে আকাশচুম্বী ভবন। ফুট-ওভার ব্রিজ ও ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন সরকারি অফিস-আদালতের পাশে গড়ে উঠছে বস্তিঘর। অথচ এগুলো দেখার কেউ নেই। কলকারখানা ও গামের্ন্ট ফ্যাক্টরির বজর্্য পতিত হয় নদীগুলোতে। ফলে নদী হয়ে পড়ে দূষিত, স্রোতের গতি হয়ে পড়ে মন্থর। আস্তে আস্তে নদীটি মরতে শুরু করে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, পিএম ২.৫ মাইক্রোনের চেয়ে ছোট কণার কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১.৯ বছর কমে গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরীতে এ ঘটনা ঘটছে। বছর দেড়েক আগে বিবিসির এক রিপোটের্ প্রকাশিত হয়েছিল, ঢাকার বায়ুদূষণ এমন বিপযর্স্ত অবস্থা তৈরি করেছে যে, ৯ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের ফুসফুসের কাযর্কারিতা কমে যাচ্ছে। বাড়ছে হঁাপানি ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ। বড়দের তুলনায় ছোটদের এ রোগ হওয়ার কারণটাও বেশি। ছোটদের ওপর গবেষণা করা হয়েছে এমন একটি রিপোটের্ দেখা যায়, বতর্মানে দেশে ৮৫ ভাগ মানুষ শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমায় ভুগছে। ৭৫ লক্ষ মানুষ ব্রঙ্কাইটিস এবং সিওপিডিতে আক্রান্ত বায়ুতে ধুলাদূষণের কারণে। এক জরিপে এসেছে, বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতিবছরে ৭০ লাখ লোক অকালে মারা যাচ্ছে। অথচ এ থেকে পরিত্রাণের ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পরিকল্পিত কমর্সূচি হাতে নিতে হবে। রাজধানীকে রাজধানীর মযার্দা দিতে সবাের্গ্র প্রয়োজন এ শহরের সব শিল্প-কারখানাকে পযার্য়ক্রমে বিশেষ অথৈর্নতিক অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া। ব্যাপকহারে বৃক্ষ রোপণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গবেষকদের মতে, শহরাঞ্চলে বৃক্ষ রোপণের ফলে একশতাংশ হলেও বায়ুদূষণ কমিয়ে আনতে পারে। সবুজ গাছপালা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দারুন ভ‚মিকা পালন করে। ঢাকার ভিতরে ও বাইরে যে খাল ও নদীগুলো রয়েছে তা সংস্কার করা এবং প্রবহমান রাখা। দেশের প্রতিটি শহরের যথাযত বিকাশ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সেখানকার পরিবেশ, জনসংখ্যা, বসবাসকারীদের রুচি, পছন্দ ও জীবনাচারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাযর্কর ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা, উন্নত আধুনিক কৌশল ও গরব্যবস্থাপনা নীতি-গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।

মো. ফেরদাউস খান

শিক্ষাথীর্, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13298 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1