শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যা অবনতির শঙ্কা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

নতুনধারা
  ১৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় দেশের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল নতুন করে পস্নাবিত হয়েছে বলেই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল। এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, নতুন করে নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হওয়ার অর্থ হলো মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখতে হবে। বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, নাটোর, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা রয়েছে।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, গেল সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির মধ্যে দুর্গতদের অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িঘরে ফিরেছিল। আর হঠাৎ দুদিনের ঢলে ফের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হতে শুরু করায় ফের দুর্ভোগের বিষয়টি সামনে আসছে। যদিও পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। আমরা উলেস্নখ করতে চাই, বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, নদ-নদীর ১০১টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ৭৬টি পয়েন্টেই পানি বেড়েছে। এর মধ্যে বিপদসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে ১৬টি পয়েন্টে। ২৩টি স্টেশনে পানি কমেছে; দুটি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীর পানি বাড়ছে। উজানের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নীলফামারীতে তিস্তার পানিও শনিবার বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা, যমুনা, সুরমা, সারিগোয়াইন, যদুকাটা ও গুড় নদীর সাতটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানা গেছে। অর্থাৎ বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কাই সামনে আসছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে দুর্ভোগ মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

আমরা বলতে চাই, একদিকে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের মধ্যে মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। নানা ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ সচেতন থাকার বিষয়টি বারবার বলা হচ্ছে। আবার এর মধ্যে যদি মানুষ হঠাৎ এই বন্যা পরিস্থিতিতে পড়ে তবে তা কতটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে এমন বিষয় সামনে এসেছিল, কেউ পানিবন্দি আবার কেউ কেউ পাশের নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে আবার কেউ রাস্তা বা বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ ঘরে খাট চৌকি দিয়ে মাচাং বানিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চরম বিপাকে পড়ার খবর উঠে এসেছিল বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী আর শিশুদের। এ ছাড়া অব্যাহত বন্যায় ডুবে গিয়েছিল উঠতি ফসল বাদাম ও ভুট্টাসহ নানান জাতের সবজি। এসব এলাকায় শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছিল। এখন যখন আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা সামনে আসছে, তখন সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ জারি রাখার বিকল্প নেই।

আমলে নেওয়া দরকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার-এনডিআরসিসি জানায়, রোববার পর্যন্ত এবারের বন্যায় ১৫ জেলার ৭২টি উপজেলার ৩৯৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল উপদ্রম্নত হয়েছে। এসব এলাকায় ২ লাখ ৭৩ হাজার লোক পানিবন্দি এবং ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও জানা যাচ্ছে, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে এবং মজুতও আছে। আমরা বলতে চাই, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণসহ যথাযথ উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি একটি বড় সংকট এবং পানিবাহিত রোগের শঙ্কা থাকে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখেও সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব। এখন যখন ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় দেশের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল নতুন করে পস্নাবিত হয়েছে এমনটি জানা যাচ্ছে এবং বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কার বিষয় উঠে আসছে, তখন মানুষের দুর্ভোগ ও সার্বিক চিত্র আমলে নিতে হবে। সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক এমনি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105756 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1