শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে করোনায় মৃত্যু দুই হাজার

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন
  ০৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৬ জুলাই ২০২০, ১০:৪৭

করোনাভাইরাস এক মহাতঙ্কের নাম। এ এক অদৃশ্য আততায়ী। করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্বে সোয়া ৫ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। কোভিড-১৯ এ বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ১৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে শেষ ১০ লাখ শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৬ দিনে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মারা গেছে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার জন। মৃতু্যর তালিকায় এর পরই আছে যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিল। অনেক দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ঘাটতি থাকায় এবং কোনো কোনো দেশ হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের হিসাবের মধ্যে না আনায় করোনাভাইরাসে প্রকৃত মৃতু্যর সংখ্যা অনেক বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় বিশ্বে যত মানুষ মারা যায়, করোনাভাইরাসে ৬ মাসে এর চেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটল- যা সত্যিই বিস্ময়কর। করোনাভাইরাসে প্রথম মৃতু্যর খবর পাওয়া যায় গত ১০ জানুয়ারি চীনের উহানে, গত বছর ২৯ ডিসেম্বর উহানে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। করোনাভাইরাস চীনের ল্যাবরেটরিতে তৈরি এমন অভিযোগ করেছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য তা বাতিল করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থাও সন্তোষজনক নয়। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। মোট আক্রান্ত এক লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন। এ পর্যন্ত মৃতু্য হয়েছে ২ হাজার ৫২ জনের। গতকালই ৫৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। যদিও আক্রান্তের অনুপাতে মৃতু্যর হার আমাদের দেশে এখনো কম। ইউরোপ আমেরিকার মতো দক্ষিণ এশিয়ায় আক্রান্তের হার দ্রম্নত বাড়ছে। ভারত পাকিস্তানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। প্রতিদিন যতগুলো নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে তার মধ্যে ২০ থেকে ২২ শতাংশ মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এটি প্রকৃত চিত্র নয় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কারণ, টেস্ট ঠিকমতো হচ্ছে কি না সেটি নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ এখনো শুরু হয়নি, কারণ প্রথম ধাক্কাই এখনো কাটেনি। করোনাভাইরাস এত শিগগিরই যাচ্ছে না। আরও বহু মানুষ এতে আক্রান্ত হবেন, মারাও যাবেন অনেকে। মনে রাখতে হবে, মানুষের হয়তো করোনাভাইরাস মহামারির ওপর আগ্রহ কমে গেছে, কিন্তু মানুষের ওপর করোনার আগ্রহ মোটেও কমেনি। করোনাভাইরাস কতটা ছড়াবে তা নির্ভর করে মূলত সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ওপর। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা যায় তিনটি ধাপে- টেস্টিং, ট্রেসিং (শনাক্ত) ও আইসোলেশন। এগুলো যদি ব্যর্থ হয় তবে করোনার ঝুঁকি থাকবেই। করোনার ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবাইকে অনুরোধ করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। মূল সমস্যাটা হচ্ছে, উপযুক্ত ওষুধ বা প্রতিষেধক ছাড়া ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে মানুষের সামাজিক আচরণের ওপর। মাস্ক সংক্রমণ রোধে সাহায্য করলেও অনেকেই সেটি পরতে রাজি নয়। হাতধোয়া ভাইরাস নিধন করে, কিন্তু অনেকেই পুরনো অভ্যাস ছাড়তে পারছে না। মহামারির মধ্যে ভিড় বাড়ানো বিপজ্জনক, কিন্তু তরুণদের তাতে থোড়াই কেয়ার। তার ওপর, সময় যত যাচ্ছে মানুষের অর্থের সংকটও তত বাড়ছে। ফলে কাজের প্রয়োজনেই বাইরে বের হচ্ছেন অনেকে। যদি স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব হয় তা হলে আক্রান্ত ও মৃতু্য দুটোই কমে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সুতরাং সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে