শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ অভিবাসন ও মৃতু্যর দায়

মানবপাচারকারীদের কবলে পড়ে অনেক পরিবার আজ সর্বস্বান্ত হয়েছে। বিনষ্ট হচ্ছে সমাজ-জীবনের স্বাভাবিক কর্মধারা ও শান্তি। অতএব, অবৈধ মানবপাচারকারী-দালালচক্রের দৌরাত্ম্য ও নৈরাজ্য বন্ধের দায়িত্ব সরকারের। আর তাই নিরীহ অভিবাসীদের অপমৃতু্যর ঘটনার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আসুন, আমরা সবাই অবৈধ মানবপাচারকারী ও দালালচক্রের মোকাবিলা করে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলি এবং নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করি।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
  ০৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির আশায় এ দেশের বিভিন্ন শ্রেণির দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী বিদেশমুখী হয়েছে। বিদেশে উপার্জিত অর্থে তাদের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটাতেই গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্য ও ইরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মরত থেকে পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে এবং একই সঙ্গে দেশের জিডিপির ধারাকে শক্তিশালী করছে। এই আগ্রহকে পুঁজি করে মানবপাচারকারী চক্র আমাদের দেশের তরুণদের টার্গেট করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থের জন্য অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি জমাতে তাদের প্রলুব্ধ করে থাকে। আর সৈই প্রলোভনে পড়ে আমাদের তরুণরাও জীবন বাজি রেখে লিবিয়া হয়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে সলিল সমাধি হচ্ছে। এশিয়া-আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ির পুরো রুটে মানবপাচারকারী বিশাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। লিবিয়ায় এখন রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্রগোষ্ঠী দেশটির নানা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। আর আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্র ও স্থানীয় দালালদের যোগসাজশে অভিবাসীদের বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখে নির্যাতন করছে এবং জোরপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করছে। চাহিদামতো মুক্তিপণ দিতে না পারলে অভিবাসীরা নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে।

অতি সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা যায়, লিবিয়ায় মিজদা শহরে অপহরণকারীরা ২৬ জন বাংলাদেশিসহ ৩০ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ত্রিপোলিতে শ্রমবিষয়ক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, মানবপাচারকারীদের কাছ থেকে একদল বাংলাদেশি ও সুদানি নাগরিক অপহৃত হওয়ার পর তাদের হাতে একজন অপহরণকারী খুন হন। এর প্রতিশোধ নিতেই অপহরণকারীরা গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে। হত্যাকান্ডের সময় গুলিতে আহত হন ১১ জন। তাদের জিনতান হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, গুলিতে নিহত ৩০ অভিবাসীর মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি। অন্য চারজন আফ্রিকান। এই ঘটনায় ১১ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। লিবিয়া হয়ে এরা সবাই ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশিরা মানবপাচারকারীদের সহায়তায় নানা দেশ ঘুরে লিবিয়া পৌঁছাচ্ছে এবং সেখান থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সমুদ্রে নৌকা ডুবে বহুসংখ্যক বাংলাদেশির মৃতু্য হলেও ঝুঁকিপূর্ণ এ প্রবণতা বন্ধ হয়নি। শুধু বাংলাদেশিদের কাছে নয়, এশিয়া ও আফ্রিকার আরও বহু দেশের অবৈধ অভিবাসীদের জন্য কীভাবে ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে উঠলো লিবিয়া। অন্যদিকে, লিবিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ২০০৮ সালের দিকে প্রচুর বাংলাদেশি লিবিয়ায় কাজের জন্য যেতে শুরু করেন। তখনই ইতালিতে থাকা বাংলাদেশিরা তাদের আত্মীয়স্বজনদের সেখানে নিয়ে যেতে অথবা টাকার বিনিময়ে ইউরোপে লোকজন নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে শুরু করেন। এ সময়ই তারা লিবিয়াকে একটা রুট হিসেবে বেছে নেন।

বিদেশ পাড়ি দেওয়ার নামে মানুষের প্রতারণা ও হয়রানির মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশ গমনে যুবকদের অতি উৎসাহের বিষয়টিকে সহজেই পুঁজি করে নিচ্ছে একশ্রেণির দালাল। সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অনেকেই নানানভাবে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে পৌঁছে গিয়ে নিজেকে বসবাসের উপযোগী করে নিচ্ছেন। নিজে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই করে নিলেই শুরু হয়ে যায় দেশ থেকে সঙ্গী-সাথী, আত্মীয়-পরিজনকে নেওয়ার প্রস্তুতি। আর এ ক্ষেত্রেই দেখা দিচ্ছে নানান বিপত্তি। তাদের কোনো ট্রাভেলস নেই, রিক্রুটিং লাইসেন্সও নেই। শুধু অভিজ্ঞতা রয়েছে চোরাইপথে কীভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দেওয়া যায়। ান্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএমের ২০১৭ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি ঢোকার চেষ্টা করেছে যেসব দেশের নাগরিকরা, বাংলাদেশিরা রয়েছেন সেরকম প্রথম পাঁচটি দেশের তালিকায়। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর দিয়ে যত মানুষ ইউরোপে প্রবেশ করার চেষ্টা করে, সেই তালিকায় বাংলাদেশও আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যে দেশগুলো শীর্ষ তালিকায় আছে সেগুলো হলো- সিরিয়া, নাইজেরিয়া, গায়ানা, আইভরি কোস্ট, মরক্কো, ইরাক, আলজেরিয়া, ইরিত্রিয়া এবং গাম্বিয়া। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশের নাগরিকরা কেন আফ্রিকা বা যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার নাগরিকদের সঙ্গে এভাবে সাগর পাড়ি দিচ্ছে?

অনেক বাংলাদেশেরই জানা নেই, ইউরোপের পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। ইউরোপ এখন আর অবৈধভাবে আসা লোকজনকে আশ্রয় দিতে রাজি নয়, বরং কাগজপত্রহীন মানুষকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। নিউইয়র্কে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউর অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী ইউরোপ থেকে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। অনিয়মিত অভিবাসন দেশের জন্য খুবই অস্বস্তিকর। সিরিয়া, লিবিয়ায় না হয় যুদ্ধ চলছে, তাই সেখানকার নাগরিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুমদ্রপথ পাড়ি দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশিরা কেন জীবনের এত ঝুঁকি নিচ্ছেন? শুধুই কি ভাগ্য অন্বেষণ, নাকি যে কোনোভাবে বিদেশে যাওয়ার নেশা। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম সম্প্রতি তরুণদের মধ্যে যে জরিপ করেছে, তাতে দেখা গেছে- আরও ভালো জীবনযাপন এবং পেশার উন্নতির জন্য বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৮২ শতাংশ তরুণই নিজের দেশ ছেড়ে চলে যেতে চান। এসব তরুণ মনে করেন না যে- নিজের দেশে তাদের ভবিষ্যৎ আছে। তা ছাড়া এমনিতেই বাংলাদেশিদের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন ভয়াবহ। তারা মনে করেন- বিদেশে গেলে ভাগ্য বদলে যাবে। অনেকের ভাগ্য বদলাচ্ছে সেটাও সত্য।

অভিবাসন বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা লাখ লাখ অভিবাসীকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দেয়। কর্তৃপক্ষ সঠিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে অভিবাসন কার্যক্রম পরিচালনা করলে দেশে কোনো অভিবাসীই বিপাকে পড়ত না। এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়, বিশ্বের সব দেশের জন্যই একই বিষয়। তবে উন্নত দেশগুলোর অভিবাসন প্রক্রিয়া যথেষ্ট স্বচ্ছ। তাই তাদের অভিবাসন নিয়ে তেমন কোনো সমস্যার উদ্ভব হয় না। আমাদের দেশে অভিবাসীদের প্রতি যথাযথ নজর না দেওয়ায় বিভিন্ন দেশে অভিবাসীরা নানা ধরনের সমস্যায় রয়েছেন। এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে ভবিষ্যতে এই খাতে বড় রকমের বিপর্যয় দেখা দেবে। অভিবাসীদের সুরক্ষায় অবৈধ অভিবাসনও বন্ধ করতে হবে। শুধু নিজ দেশের নাগরিকদের নয়, একটি দেশের সীমানার মধ্যে যে সব লোকজন থাকবেন তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশের। এ ছাড়া অভিবাসী প্রেরণকারী দেশগুলোকেও নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের জন্য অভিবাসন জরুরি। তবে অত্যাবশ্যকীয় নয়। একজন নাগরিককে বিপদে ফেলে দেওয়া রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না। বিশ্বজুড়ে এখন অভিবাসন ও শরণার্থী সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এক পরিসংখ্যানে বলেছে, ২০১৫ সালেই গৃহহীন ও শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৫৩ লাখ। এর আগে বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকট আর কখনো ঘটেনি। অভিবাসন একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। দিন দিন বিভিন্ন কারণে অভিবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে প্রতিবছরই ভাগ্যোন্নয়নের আশায় অবৈধপথে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। অবৈধপথে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পথে নির্যাতনের শিকার হন তারা। পথিমধ্যে গভীর জঙ্গলে ও সাগর পাড়ি দিতেই মৃতু্যর শিকার হচ্ছে। যাত্রাপথে চরম অনিশ্চয়তায় কাটে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত। এই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা।

শরণার্থী-অভিবাসীদের সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য জার্মানি, সুইডেন ও ব্রিটেন। এরপর আছে, ফ্রান্স, ইতালি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি দেশ। ইউরোপ অভিমুখে শরণার্থীদের ঠেলে দিতে নেপথ্যে কাজ করছে সুসংগঠিত আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্র। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংকট সৃষ্টির প্রধান কারণ- সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোর যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর উত্থান। দ্বিতীয় প্রধান কারণ- এশিয়া ও আফ্রিকান দেশগুলোর অতিদরিদ্র, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিশ্চিত জীবিকার আকাঙ্ক্ষা বা জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্ন। জাতিসংঘের হিসাবমতে প্রায় প্রতি বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অন্ততপক্ষে ৮ লাখ ৫০ হাজার মানুষ শরণার্থী হিসেবে ইউরোপে প্রবেশ করে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, লাখ লাখ মানুষ ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে আফ্রিকা থেকে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করে প্রায় প্রতি বছর। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার যেসব দেশ থেকে শরণার্থীরা আসছে, সেসব দেশকে আর্থিকভাবে এবং মানবপাচার প্রতিরোধে সহযোগিতা দেওয়ারও চিন্তা করছে জাতিসংঘ। মূলত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সি যুবকরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম পথে পা বাড়াচ্ছেন। অবৈধভাবে অভিবাসী হওয়ার ইচ্ছা সবাইকেই পরিত্যাগ করা দরকার। নিজেকে তৈরি করতে হবে দক্ষ জনশক্তি, মেধাবী মানুষ হিসেবে। আর মেধাবীদের জন্য বিশ্বের দরজা সব সময়ই অবারিত-কথাটি ভুলে গেলে চলবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দালালদের পাশাপাশি যারা অবৈধভাবে বিদেশে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। এভাবে তারা তাদের জীবন বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়ার সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করছে। দালালদের পাশাপাশি ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশগামীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করলেই এ ধরনের প্রবণতা বন্ধ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশেই এখন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করছে। বিদেশে যেতে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে যুবকদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ও বিদেশগামীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া হচ্ছে, যে-ই বিদেশে যাবে তার চাকরির নিশ্চয়তা, থাকার নিশ্চয়তা, ঠিকমতো বেতন যাতে পায় তার দিকে লক্ষ্য, তার সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও মানুষ কেন অনিশ্চিত জায়গায় ছুটছে? সবাই যে অভাবের তাড়নায় যাচ্ছে তা নয়। মনে হচ্ছে, তারা একটা সোনার হরিণের পেছনে ছুটছে। বাইরে গেলেই মনে হয় অনেক টাকা পেয়ে যাবে। তিনি বলেন, এই যে সাগরে ভেসে চলে যাওয়ার চেষ্টা এর করুণ পরিণতি সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই। কোথায় যাবে তারা, কী করবে? বন-জঙ্গলে এখন লাশ পাওয়া যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ভবিষ্যতে কেউ যেন অবৈধভাবে বিদেশ না যায় সে ব্যাপারে বিশেষ নজরদারি রাখতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

মানবপাচারকারী অনেক সময় গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। গা ঢাকা দিয়ে বা পালিয়ে থেকে বাঁচতে পারে কতক্ষণ? তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন বা কারা? কোন ক্ষমতাবানের আশ্রয়ে থেকেই এমন অপকর্ম করে থাকতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রভাবশালী বা ক্ষমতাসীনরা কারা? কোনো প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবানের আত্মীয়স্বজন মানবপাচারের কাজের সঙ্গে জড়িত তা কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে বেরিয়ে আসবেই। কর্তৃত্বের বা ক্ষমতার অপব্যবহার যেন আমাদের দিক থেকে না ঘটে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মাদকসেবী, সন্ত্রাসী, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের যেভাবে ধরা হয়, একই কায়দায় অবৈধ মানবপাচাকারী চক্র ও দালালদের গ্রেপ্তারের জালে আটকাতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতিতে অভিযান পরিচালনা করে আইনের আওতায় এনে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। অবৈধ অভিবাসীরা এ দেশেরই নাগরিক। অভিবাসনের নামে সমুদ্র সাগরে বা কোনো মানবপাচারকারীদের হাতে বন্দি হয়ে থাকা বা মৃতু্যমুখে ঠেলে দেওয়া কোনো সুস্থ মানুষের কাম্য হতে পারে না। এ দেশের একজন মায়ের বুক খালি হয়ে যায় বা মায়ের আহাজারি শুরু হয়ে যায় এ ধরনের কোনো কুকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকা কখনোই কাম্য নয়।

মানবপাচারকারীদের কবলে পড়ে অনেক পরিবার আজ সর্বস্বান্ত হয়েছে। বিনষ্ট হচ্ছে সমাজ-জীবনের স্বাভাবিক কর্মধারা ও শান্তি। অতএব, অবৈধ মানবপাচারকারী-দালালচক্রের দৌরাত্ম্য ও নৈরাজ্য বন্ধের দায়িত্ব সরকারের। আর তাই নিরীহ অভিবাসীদের অপমৃতু্যর ঘটনার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। আসুন, আমরা সবাই অবৈধ মানবপাচারকারী ও দালালচক্রের মোকাবিলা করে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলি এবং নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করি।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ: সাবেক উপ-মহাপরিচালক বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। কলামিস্ট ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<104922 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1