বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ০২ জুন ২০২০, ০০:০০

ক্ষোভ, বেদনা, হতাশা, পারিবারিক কলহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে অহরহ, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, যারা শিক্ষার্থী তাদের সামনে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ। ফলে এই বোধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগ্রত করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, অকৃতকার্য হওয়া মানেই জীবন অনর্থক হয়ে যাওয়া নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, আবারও পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটল। প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, এসএসসি পরীক্ষায় ফেল ও জিপিএ-৫ না পাওয়ায় শরীয়তপুরে, ঝিনাইদহে, শায়েস্তাগঞ্জ, শ্রীপুরে, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। শরীয়তপুরে এক কিশোরী জিপিএ সাড়ে ৪ পেয়েছিল কিন্তু জিপিএ-৫ না পেয়ে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঝিনাইদহে এসএসসি পরীক্ষায় 'সি' গ্রেড পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছে একজন এক শিক্ষার্থী। এক কিশোরী ফলাফল দেখার পর ফেল করায় রাগে ও অপমানে বিষপান করে। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কেউ জিপিএ-৫ না পাওয়া, কেউ আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে না পারায় আত্মহত্য করেছে।

আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক এই পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে এর পরিপ্রেক্ষিতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে যেন শিক্ষার্থীদের মধ্য জীবনবোধ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় আর সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর আগে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে, সারা দেশেই আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রবণতা কিশোর-তরুণদের মধ্যে বেশি। এ ছাড়া প্রতিদিনের সংবাদপত্রে চোখ রাখলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তুচ্ছ কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এখন যখন এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কিংবা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে না পারায় আত্মহত্যার মতো ঘটনা সামনে আসছে। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে যা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই শিক্ষার্থীদের মানসিকতা বিশ্লেষণ সাপেক্ষে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখা জরুরি, আজকের শিশু-কিশোররাই দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাত দিয়েই দেশ এগিয়ে যাবে। ফলে অকালেই মূল্যবান প্রাণ এভাবে ঝরে যাবে এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এর আগে বিভিন্ন সময়েই বিষণ্নতা, শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা থেকেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আমরা মনে করি, জীবন যে অত্যন্ত মূল্যবান কিংবা একবার অকৃতকার্য হওয়া মানেই জীবন অর্থহীন হয়ে যাওয়া নয়- এই বোধ সৃষ্টি করতে হবে শিক্ষার্থীদের ভেতর। একবার অকৃতকার্য হলে আবার চেষ্টা করার মানসিকতা তৈরি করতে হয়- এমন সচেতনতা বাড়াতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিনিয়তই ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, অপ্রাপ্তি, অসহ্য মানসিক চাপ, মানসিক ও যৌন হয়রানি, সহিংসতা, যৌতুকের চাপ, দাম্পত্যকলহ প্রভৃতি কারণে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি থেকে সাময়িক নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় যা অত্যন্ত বেদনদায়ক। এই বিষয়টির সঙ্গে মানসিক চাপ মোকাবিলার দক্ষতার অভাব ও ব্যক্তিত্বের ভঙ্গুরতা সম্পর্কযুক্ত। মনে রাখতে হবে, মানসিক চাপ মোকাবিলার দক্ষতা ও ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা অর্জন আত্মহত্যা প্রতিরোধে জোরালো ভূমিকা রাখে। ফলে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, জিপিএ-৫ পাওয়া বা স্কুলে কে ফার্স্ট হবে এ ধরনের প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে শিশু-কিশোরদের মানসিক ভারসাম্য এবং বিকাশ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেটি লক্ষ্য রাখতে অভিভাবকদেরও ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। অকারণে বকাঝকা করা বা ভর্ৎসনা করা এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সবারই দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের ভেতর জীবনবোধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া। অকৃতকার্য হয়ে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার মতো পথে যেন পা না বাড়ায় সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100935 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1