নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কর্মহীনদের তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা দিতে আরও ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং ৯ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা ত্রাণ হিসেবে বিতরণের জন্য এবং ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিশুখাদ্য কিনতে। দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এই ত্রাণ বরাদ্দ দিয়ে দুর্যোগব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি পাঠিয়েছে।
দেশে লকডাউন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৬৪ জেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তার জন্য সরকার ১১০ কোটি ৩৭ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকা এবং ১ লাখ ৯১ হাজার ৮১৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিল। জেলা প্রশাসকদের দুর্যোগ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা অনুসরণ করে এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে বলা হয়েছে। পৌর এলাকায় বেশিসংখ্যক কর্মজীবী মানুষ বসবাস করে বলে জেলা প্রশাসকদের বরাদ্দের ক্ষেত্রে পৌর এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, ত্রাণসামগ্রী হিসেবে শাক-সবজি, আম ও লিচু কিনে বিতরণ করা যেতে পারে। প্রত্যেক ত্রাণ গ্রহণকারীকে কমপক্ষে পাঁচটি করে গাছ লাগানোর অনুরোধ করা যেতে পারে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে চলমান অচলাবস্থায় সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে দেবে সরকার। প্রথম দফায় ১০ লাখ পরিবারকে এ অর্থ দেওয়া হবে। এর পরবর্তী ধাপে ৪০ লাখ পরিবারকে এ অর্থ দেওয়া হবে। বিতরণ কার্যক্রম শুরুর মধ্যে কিছু বিপত্তি দেখা দিয়েছে। সাত লাখ ফোন নাম্বারে গড়মিল দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি এসব আগে থেকেই যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল।
আমরা মনে করি করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হা?সিনার এই উদ্যোগ ইতিবাচক। তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিকরাও। এটা সত্য- দেশ দীর্ঘ ছুটিতে থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবীরা। তাদের ঘরে খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যদিও আজ থেকে লকডাউন তুলে দেওয়া হয়েছে। মানুষ আবার কাজে ফিরতে পারবে।
আমরা জানি এই সরকার দরিদ্রবান্ধব। এই সরকারের নানা ইতিবাচক উদ্যোগের কারণে দেশে দরিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় অনেক আগে থেকেই দেশের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এবার করোনাকালে সরকার বিভিন্ন খাতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।
আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকার কর্মহীন হতদরিদ্রদের জন্য যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ করেছিল, সে চাল আত্মসাৎ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তাদের নিয়োগকৃত ডিলাররা। এ জন্য অবশ্য অর্ধশতাধিক জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে করোনা পরিস্থিতি স্থায়ী আসন গেড়ে বসতে পারে, যা বিশ্বের জন্য একটি বিপজ্জনক বার্তা। সুতরাং এ থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে সরকারকে সহযোগিতার হাত আরও প্রসারিত করতে হবে। কার্যকর ও পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে দেশের গরিব মানুষকে এ দুর্যোগের সময় বাঁচাতে।