মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বাড়বে

নতুনধারা
  ২৩ মে ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বহু দেশ থেকে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বাড়বে। করোনাভাইরাস সংকটের অর্থনৈতিক পরিণতি বিশ্বের ৬ কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ কথা বলে সতর্ক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস। বর্তমান পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয় বলেও মনে করেন তিনি। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। তার এ মন্তব্য খুবই উদ্বেগজনক।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে চরম দারিদ্র্য বলতে ওই মানুষকে বলা হয়েছে, যিনি প্রতিদিন ১ দশমিক ৯০ ডলারের (১৬১ টাকা) চেয়ে কম অর্থে জীবনযাপন করেন। বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা করছে ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক উৎপাদন পাঁচ শতাংশেরও বেশি সংকুচিত হবে। যা দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর গত তিন বছরে প্রচেষ্টা মুছে ফেলবে।

এ কথা সত্য, করোনাভাইরাসের থাবায় ইতিমধ্যে লাখ লাখ জীবিকা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চাপের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে স্বাস্থ্যগত ও লকডাউনের কারণে যে অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে, তা মারাত্মক। এর ফলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ একেবারে দরিদ্র হয়ে যাবে।

আশার কথা, দরিদ্র দেশগুলোকে সংকট মোকাবিলায় সহায়তায় বিশ্বব্যাংক গ্রম্নপ ১৬০ বিলিয়ন ডলারের অনুদান এবং ১৫ মাসের স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ কর্মসূচি নিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১০০টি দেশের জন্য ইতিমধ্যে জরুরি অর্থ ছাড় করা হয়েছে। এই ১০০ দেশে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ বাস করে। এই অর্থ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহে প্রদান করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, বিশ্বব্যাংক যে পরিমাণ অর্থ সরবরাহ করছে, তা পর্যাপ্ত নয়। বিশ্বের অন্যান্য অর্থ প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাকে এ ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের হার বাড়লেও বাংলাদেশে এর তেমন প্রভাব পড়বে না বলেই আমরা মনে করি। বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে যে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি, এর বেশিরভাগই সম্ভব হয়েছে শ্রম আয় বৃদ্ধি এবং বর্তমান সরকারের দরিদ্র-বান্ধব নানা ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে। ২০১০-২০১৬ সময়ে ৮০ লাখ বাংলাদেশি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমাচ্ছে। তবে দারিদ্র্য কমছে তুলনামূলক ধীরগতিতে। তবে করোনাকালে দেশে দারিদ্র্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে লকডাউনের কারণে।

এটা স্বীকার করতেই হবে, ২০১০ সাল থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমছে। দারিদ্র্য হার কমিয়ে আনতে সব দরিদ্র পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের এ ধরনের নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ অত্যন্ত ইতিবাচক। করোনাকালে সরকার দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছে।

পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকে দারিদ্র্য দূর হোক এটাই আমরা চাই। তবে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে না পারলে দারিদ্র্য পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। এ কারণে আমাদের যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা সে অবস্থায় এখনো যেতে পারিনি। এসব বাধা দূর করতে পারলে দারিদ্র্য আশানুরূপ হ্রাস করা সম্ভব। সম্ভব পর্যায়ক্রমে মধ্যম আয়ের ও উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাও। তবে করোনার জন্য বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে তার প্রভাব যে বাংলাদেশে পড়বে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। সুতরাং আমাদের সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100399 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1