শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জরুরি বৈঠকে মোদি

ভারতে ভয়াবহ গ্যাস দুর্ঘটনা মৃত-অসুস্থ বাড়ছেই

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ অসুস্থ সহস্রাধিক স্থানীয় বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ মে ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ মে ২০২০, ১০:৪১
একজন অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে 'এলজি পলিমার ইনডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড'র রাসায়নিক কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস (সিরাইটিন) 'লিক' হয়ে অন্তত ১৩ জনের মৃতু্য হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে অঞ্চলটির এক হাজারের বেশি বাসিন্দা। এরই মধ্যে কমপক্ষে ২০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে সময় যত যাচ্ছে, মৃত ও অসুস্থের সংখ্যা বাড়ছে। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ ১৯৬১ সালে হিন্দুস্তান পলিমার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটিকে ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার 'এলজি কেম' কিনে নেয়। তারপরই এই সংস্থাটির নতুন নাম হয় এলজি পলিমারস ইনডিয়া। এই পস্নান্টটি মূলত পলিসট্রিন তৈরি করে, যা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পস্নাস্টিকের খেলনা এবং অন্যান্য পস্নাস্টিকের জিনিস তৈরি করা হয়। আর সেই কাজে ব্যবহার করা হয় সিটাইরিন নামের গ্যাস। যা মানব শরীরের জন্য বিষাক্ত। রাসায়নিক কারখানাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোরে এলজি পলিমার ইনডিয়া নামের ওই কারখানা থেকে যে গ্যাস লিক হচ্ছে, তা প্রথম টের পায় কাছাকাছি থাকা স্থানীয় বাসিন্দারাই। আরআর ভেঙ্কটাপুরাম গ্রামের বাসিন্দারাই জানায়, তাদের চোখ হঠাৎ করে খুব জ্বালা করছে ও শ্বাস-প্রশ্বাসে ভয়ঙ্কর কষ্ট হচ্ছে। এরপরই অসুস্থ হয়ে পড়া ওই ব্যক্তিদের স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৩টা নাগাদ ওই কারখানা থেকে গ্যাস লিক হওয়া শুরু হয়। সে সময় কারখানায় ছিলেন শুধু নিরাপত্তারক্ষীরা। গ্যাস লিক হওয়ায় অচেতন হয়ে পড়েন তারা। ফলে তখন উদ্ধারকাজের জন্য খবর দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে থাকে লোকালয়ে। সাড়ে ৪টার দিকে আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের চোখ জ্বালা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হতে থাকে। এতে ঘুম ভেঙে যায় অনেকের। এরপর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধারকাজে নামে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল। গ্যাস লিক হওয়ার খবর টের পাওয়ার পর বিশাখাপত্তনম পৌর করপোরেশন টুইট করে স্থানীয়দের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। টুইটে বলা হয়, এলজি পলিমারে ছিদ্র দেখা গেছে, সেখান থেকেই বিষাক্ত গ্যাস বাইরে এসেছে। সাধারণের সুরক্ষায় সবাইকে বাড়িতে থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।' উদ্ধারকারীদের ধারণকৃত মোবাইল ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই এলাকায় কমপক্ষে ১০ জন ব্যক্তি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছে। এর ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, বিশাখাপত্তনমের ভয়াবহ গ্যাস দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেকেই। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে গভীর শোক জানানো হয়েছে মৃতদের উদ্দেশে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে জানিয়েছেন, অসুস্থদের দ্রম্নত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও জরুরি বৈঠকে বসেছেন মোদি। এছাড়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'বিশাখাপত্তনমের ঘটনা উদ্বেগজনক। বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা উদ্ধারকাজে নেমেছে। পুরো বিষয়টির ওপর নজর রেখেছে কেন্দ্র।' দুর্গতদের সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে সরকার। অচেতনদের উদ্ধারে দরজা ভেঙে বাড়ি বাড়ি ঢোকে উদ্ধারকারীরা এদিকে, ভারতের বিশাখাপত্তনমের রাসায়নিক কারখানায় গ্যাস লিক হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বহু মানুষ অচেতন হয়ে পড়ে। উদ্ধারকর্মীরা বাড়ি বাড়ি প্রবেশ করে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অন্ধ্রপ্রদেশের পুলিশ মহাপরিদর্শক গৌতম স্বয়ং বলেন, মৃত ১৩ জনের মধ্যে দুইজন গ্যাস লিকের পর কুয়ায় ঝাঁপ দেওয়ার পর মারা যান। ঘটনার পরপরই আশপাশের গ্রামে ছুটে যাওয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আক্রান্ত অনেক ব্যক্তি রাস্তাতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এছাড়া এলজি কেম-এর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কারখানা থেকে যে গ্যাস লিক হয়েছে, তা গ্রহণ করা হলে শ্বাসকষ্ট ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রম্নত চিকিৎসার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে। সিউলে কোম্পানিটির এক মুখপাত্র জানান, রাতের শিফটে কর্মরত এককর্মী প্রথম ট্যাংক থেকে গ্যাস লিক হওয়ার ঘটনা খেয়াল করে। ভারতজুড়ে লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কারখানাটি পুনরায় উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলেও জানান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্যদিকে, ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের দুর্ঘটনাকবলিত ওই কারখানা ঘিরে পাঁচ কিলোমিটার এলাকা থেকে মানুষ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা শত শত মানুষ ওই বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হওয়ায় মৃত ও অসুস্থের সংখ্যা বাড়তে পারে। অনেকেই হয় অজ্ঞান হয়ে পড়েছে, নয়তো শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগছে। পানি ছিটিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের পানিতে ভেজা মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারখানার দেড় কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অবস্থিত ভেঙ্কাতাপুরাম গ্রামটি বিষাক্ত গ্যাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই গ্রামের ১১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও পাঁচটি গ্রাম সম্পূর্ণ খালি করে ফেলা হয়েছে। আর বাকিগুলো খালি করার চেষ্টা চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মোট ৯টি গ্রামের ওপর এই গ্যাসের প্রভাব পড়েছে জানিয়েছেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, গ্যাসের তীব্রতায় গাছের রং বদলে যাওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় কমিশনার শ্রম্নজানা বলেন, বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত ১৮০ জনকে কিং জর্জ হাসপাতাল ও অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ভেঙ্কাতাপুরাম গ্রামের ১৫০০ বাড়ি খালি করে ফেলা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে