মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ওয়াশিংটন-বেইজিং দ্বন্দ্ব

চীন আমার পুনর্নির্বাচিত হওয়া ঠেকাতে চায় :ট্রাম্প

মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের কোনো আগ্রহ নেই :চীন
যাযাদি ডেস্ক
  ০১ মে ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০২ মে ২০২০, ১০:৪১
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

করোনাভাইরাস মহামারির জন্য শুরু থেকেই চীনকে দায়ী করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার দেশটির বিরুদ্ধে তার অভিযোগের তালিকায় যোগ হলো নির্বাচনী ইসু্যও। ট্রাম্পের দাবি, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার পুনর্র্নির্বাচিত হওয়া ঠেকাতে চায় চীন। বুধবার মার্কিন গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন ট্রাম্প। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে। এ মহামারি প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে। তবে বরাবরই এর দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়েছেন ট্রাম্প। ওই সাক্ষাৎকারেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। ট্রাম্প বলেন, 'করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে বিশ্ববাসীকে আরও আগেই জানানো উচিত ছিল চীনের। আর এই সংকটের কারণে অনেক বড় ফল ভোগ করতে হবে বেইজিংকে।' তবে তাদের বিরুদ্ধে কবে কী ধরনের ব্যবস্থা নেবেন, তা পরিষ্কার করেননি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ লড়াইয়ে দ্বিতীয়বার জয়ী হওয়ার পথে ট্রাম্পের 'তুরুপের তাস' ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভাষ্য। তবে করোনা মহামারিতে মাত্র কয়েক মাসেই ধসের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'এই দৌড়ে আমাকে হারাতে চীন যে কোনো কিছুই করতে পারে।' রিপাবলিকান এ নেতার দাবি, তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট নেতা জো বাইডেনকে জয়ী করতেই উঠেপড়ে লেগেছে বেইজিং। তবে নির্বাচনে বাইডেন জিততে পারেন তা বিশ্বাস করেন না ট্রাম্প। তিনি বলেন, 'আমি এ জরিপ বিশ্বাস করি না। আমার বিশ্বাস এই দেশের জনগণ বুদ্ধিমান। তারা কোনো অযোগ্য ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসাবে না।' এর আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প হারতে চলেছেন, এমন জরিপের বিষয়ে গত শুক্রবার রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এদিন উপদেষ্টাদের সঙ্গে রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, আগামী নির্বাচনে ফ্লোরিডা, উইসকনসিন ও অ্যারিজোনায় ট্রাম্প হারতে পারেন, এমন সন্দেহ রয়েছে তার অনেক সহযোগীর মনেই। এরই মধ্যে মিশিগানে জয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছে রিপাবলিকানদের নির্বাচনী টিম। জরিপের খবর মন মতো না হলেও এখনো হাল ছাড়েননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি প্রচারণা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্স কলেও তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, 'আমি জো বাইডেনের কাছে হারব না।' গণমাধ্যমের তথ্যমতে, এদিন ফ্লোরিডা থেকে কল করা প্রচারণা ব্যবস্থাপক ব্রাড পার্সকেলের ওপর চটেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আলাপের একপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দেন ট্রাম্প। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির জন্য চীনকে দায়ী করে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রেই ৬০ হাজারের বেশি মানুষের মৃতু্য হয়েছে। আর মার্কিন অর্থনীতি পড়েছে এক ভয়াবহ মন্দার মধ্যে। ফলে আরও চার বছরের জন্য ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়াকে ফেলে দিয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে। চীনের বিরুদ্ধে নতুন করে শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করছেন কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, 'আমার অনেক কিছুই করার আছে। কী ঘটছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।' তিনি বলেন, 'আমাকে এই নির্বাচনে হারাতে যা কিছু সম্ভব তার সবকিছুই করবে চীন।' তিনি আরও বলেন, 'চীনের ওপর বাণিজ্য ও অন্য নানা ইসু্যতে যে চাপ তিনি তৈরি করেছেন, তা শিথিল করতে বেইজিং চায় ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন বিজয়ী হোক।' ট্রাম্প প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মার্চের শেষ দিকে এক ফোনালাপে ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাগ্‌?যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে অনানুষ্ঠিকভাবে সম্মত হয়েছিলেন। তবে এখন তার অবসান হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই সময়ে দুই নেতা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রম্নতি দেন। তবে সম্প্রতি ওয়াশিংটন ও বেইজিং ভাইরাসটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ বাড়িয়েছে। ট্রাম্প ও তার শীর্ষ সহযোগীরা চীনবিরোধী বক্তব্যের পরিমাণ বাড়ালেও সরাসরি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সমালোচনা বন্ধ রেখেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বরাবর তাকে নিজের বন্ধু হিসেবে আখ্যা দিয়ে এসেছেন। মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের কোনো আগ্রহ নেই : চীন এদিকে, মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের কোনো আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছে চীন। বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বুধবার গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চীন প্রসঙ্গে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের জবাব দেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং সুহাং। মার্কিন নির্বাচনকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'বেইজিং আশা করে মার্কিনিরা এই নির্বাচনের মধ্যে চীনকে জড়াবে না।' ওই মুখপাত্রের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র মহামারি মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সেই ব্যর্থতা ঢাকতেই তারা চীনের দিকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সরাসরি আক্রমণ না করে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরা নির্লজ্জ ভাবে অসত্য প্রচার করছেন। উহানের যে ল্যাবরেটরির বিরুদ্ধে ভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে, তার প্রধানও মুখ খুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যারা এসব কথা বলছেন, তাদের কাছে কোনো তথ্য সূত্র নেই। সম্পূর্ণ মনগড়া অভিযোগ করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে