বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
৬০ দিনের জন্য কার্যকর

গ্রিনকার্ড স্থগিতাদেশে ট্রাম্পের স্বাক্ষর

নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে কম বয়সিদের স্ট্রোকও ঘটাচ্ছে করোনা
যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ এপ্রিল ২০২০, ১০:৩৮
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

অবশেষে গ্রিনকার্ড সাময়িক স্থগিত রাখার নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পদক্ষেপ আগামী ৬০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে। তারপর এ সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, 'করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়া মার্কিনিদের সুরক্ষা দেওয়াই তার এই পরিকল্পনার লক্ষ্য।' সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস ব্রিফিংয়ে বুধবার ট্রাম্প বলেন, 'আমাদের অর্থনীতি চালু হওয়ার পর সব খাতের কর্মহীন মার্কিনিই চাকরির লাইনের প্রথমে থাকবেন, এই পদক্ষেপ তা নিশ্চিত করেছে।' এই পদক্ষেপ গ্রিনকার্ডধারীদের তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা করার আবেদন করা থেকে বিরত রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাকে 'চেইন মাইগ্রেশন' আখ্যা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে মার্কিন নাগরিকদের জীবনসঙ্গী এবং তাদের ২১ বছরের কম বয়সি অবিবাহিত সন্তানদের ক্ষেত্রে এই নির্বাহী আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এই আদেশে ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারিও স্থগিত থাকবে, যার আওতায় প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার গ্রিনকার্ড ইসু্য করা হয়। যেসব গ্রিনকার্ড আবেদনকারী এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাস করছেন ও কর্মরত আছেন এবং যারা চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা পেশায় যুক্ত হতে চাইছেন, এমন হাজার হাজার লোকও ছাড়া পাবেন বলে বলা হয়েছে। অস্থায়ী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ব্যক্তিদের ওপরও এই সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাব পড়বে না। দীর্ঘদিন ধরে কঠোর অভিবাসন নীতির যে প্রতিশ্রম্নতি ট্রাম্প দিয়ে আসছেন, এখন নির্বাচনের বছরে করোনাভাইরাস মহামারির অজুহাত দেখিয়ে তিনি সেটিই বাস্তবায়ন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সমালোচকরা। মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার যে অভিযোগ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উঠেছে, সেখান থেকে মনোযোগ অন্যদিকে সরাতেই এই সময়ে এমন উদ্যোগ নিলেন কিনা- সেই প্রশ্নও তুলেছেন কোনো কোনো সমালোচক। করোনাভাইরাস মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েছে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ লাখ, মৃতু্য হয়েছে প্রায় ৪৭ হাজারের বেশি মানুষের। এই সংকটে অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গতমাসে দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করতে যাচ্ছেন তিনি। এরপর মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে এসে তিনি বলেন, বুধবারই তিনি সেই নির্বাহী আদেশে সই করতে পারেন। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। সোমবারের টুইটে ট্রাম্প অভিবাসন বন্ধের কথা বললেও ব্যবসায়ী নেতাদের কয়েকজনের সমালোচনার পর তিনি খামার শ্রমিক এবং প্রযুক্তিকর্মীদের মতো বিশেষ খাতের অভিবাসীকর্মীদের নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখেন। মঙ্গলবারের ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংকটে যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, 'ভাইরাসের কারণে কাজ হারানো মার্কিনিদের জায়গায় যদি অভিবাসী শ্রমিকরা এসে চাকরি পান, তাহলে সেটা আমাদের নাগরিকদের প্রতি অন্যায় হবে।' যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ১০ লাখের মতো গ্রিনকার্ড অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ পান এমন অভিবাসীরা, যাদের আত্মীয়-স্বজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। আর পেশা-সংশ্লিষ্ট গ্রিনকার্ডের ৮০ শতাংশ এমন অভিবাসীদের দেওয়া হয়, যারা আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। একজন গ্রিনকার্ডধারী অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস এবং কাজ করার অনুমতি পান। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের জন্যও আবেদন করার সুযোগ পান। কম বয়সিদের স্ট্রোকও ঘটাচ্ছে করোনা এদিকে, নতুন করোনাভাইরাসে বয়স্ক ও অসুস্থদের ঝুঁকির কথা এতদিন বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা কম বয়সিদের ক্ষেত্রে নতুন একটি প্রবণতা চিহ্নিত করেছেন। তারা দেখেছেন, ৫০ বছরের কম এমন বেশ কয়েকজন রোগীর স্ট্রোক হয়েছে, যাদের অন্য কোনো রোগ তো ছিলই না, কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গও ছিল মৃদু। চীন থেকে সংক্রমিত নতুন এই করোনাভাইরাস সারাবিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করলেও এর সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু বিজ্ঞানীদেরও অজানা। বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষেত্রে ভাইরাসটি তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে গবেষকদের কৌতূহল রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে