বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আস্থার সংকটে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৩ এপ্রিল ২০২০, ১০:৩১

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। উদ্দেশ্য ছিল বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার সঙ্গে অবধারিতভাবে জড়িয়ে পড়েছে ডবিস্নউএইচও। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি-ধামকিতে বৈশ্বিক এই সংস্থাটি পড়েছে চরম আস্থার সংকটে। অথচ মহামারির এ সময় ঐক্যবদ্ধ থাকাটাই ছিল সঙ্গত। ডবিস্নউএইচও'র বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, সংস্থাটি করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য গোপন করেছে এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সংস্থাটি খুব বেশি 'চীনঘেঁষা'। ফলে বার্ষিক ৪০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে তথ্য-উপাত্ত বলছে, গত ৭ ফেব্রম্নয়ারি এক বৈঠকের পর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলে অর্থায়নের পরিমাণ কমানোর কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। ডবিস্নউএইচও'র বিরুদ্ধে তখন 'চীনঘেঁষা' বা 'তথ্য গোপনে'র অভিযোগ ছিল না। ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা মনে করেন, ডবিস্নউএইচও করোনাভাইরাস সম্পর্কে আগে থেকে সতর্কবার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি চীনের স্বচ্ছতার বিষয়ে একেবারেই নীরব। অথচ জানুয়ারির প্রথম দিকেই ডবিস্নউএইচও করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে দেয়। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বিমান যোগাযোগ বন্ধ করার আগেই 'জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা' ঘোষণা করে ডবিস্নউএইচও। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নিজ দেশেই সমালোচনার শিকার হচ্ছেন ট্রাম্প। ঠিক তখনই তিনি উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর খেলাটা খেললেন। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনকে দায়ী করে ভাইরাসটিকে 'চায়নিজ ভাইরাস' বলে উলেস্নখ করতে শুরু করলেন। সংকট মোকাবিলায় খাপছাড়া অবস্থা হওয়ায় পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দায়ী করলেন। এরপর রাজ্য গভর্নরদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোর পাশাপাশি ডবিস্নউএইচওকে 'বলির পাঁঠা' বানালেন। তবে শুধু ট্রাম্পকে এক তরফা দোষ দিয়ে ডবিস্নউএইচও'র অভ্যন্তরীণ সংকট ও ব্যর্থতার বিষয়টি বোঝা যাবে না। করোনাভাইরাসের আগে ২০১৪-১৫ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছিল ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ। তখন ডবিস্নউএইচও'র প্রধান ছিলেন মার্গারেট চ্যান। তিনি ইবোলা মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে দায়িত্বে অবহেলার পরিচয় দিয়েছিলেন। তখন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংস্থাটিকে নতুন করে সাজানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাতে রাজি ছিলেন না। চীনের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন কমিশনের তদন্তে বলা হয়েছিল, ডবিস্নউএইচও'র তহবিলে অর্থায়নের পরিমাণ বহু বছর ধরে বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালে ডা. টেড্রোস অ্যাডহ্যানম গেব্রেইসুস সংস্থাটির সংস্কার ও তহবিল বাড়ানোর প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতা রয়েছে ঠিকই; কিন্তু করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তার যে পদক্ষেপ, তাতে কোনো ঘাটতি দেখতে পাননি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অর্থায়ন বন্ধে ট্রাম্পের ঘোষণা দেওয়ার অনেক আগে থেকেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা অর্থ সংকটে ভুগছে। এটি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক গণস্বাস্থ্য বিষয়ের চেয়ারম্যান দেবী শ্রীধর বলেন, 'করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময় সংক্রমণ ঠেকাতে ডবিস্নউএইচও মূলত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করছে। এই সময়ে সংস্থাটির আরও অর্থ দরকার ছিল। অথচ এমন এক সংকটময় মুহূর্তে ট্রাম্প অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিলেন। এদিকে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় (ডবিস্নউএইচও) মার্কিন তহবিল স্থগিতের বিষয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। এক টুইটে বিল গেটস বলেন, 'বিশ্বস্বাস্থ্যের এমন সংকটময় মুহূর্তে বিশ্বস্বাস্ব্য সংস্থায় তহবিল স্থগিতের সিদ্ধান্ত বিপজ্জনক। তাদের কাজে করোনাভাইরাস বিস্তারের গতিকে ধীর করে দিচ্ছে। এই মুহূর্তে যদি কোনো সংস্থা এ ভাইরাসের বিপক্ষে লড়াই করতে পারে তবে সেটি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। অন্য কেউ তাদের স্থান নিতে পারবে না। সংস্থাটিকে এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন।' অন্যদিকে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় (ডবিস্নউএইচও) অর্থায়ন বন্ধ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়ার পরই এ নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও। তিনি বলেন, 'এখন এটা করার সময় নয়'। তিনি আরও বলেন, 'এখন এই সময়ে মহামারি ভাইরাসকে ঠেকানো।' সংবাদসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে