বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
করোনার প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রে আপাতত অভিবাসন বন্ধ

মার্কিনিদের চাকরি বাঁচাতেই এ সিদ্ধান্ত, যুক্তি ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে এক শহরের সব বাসিন্দার করোনা পরীক্ষা
যাযাদি ডেস্ক
  ২২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২২ এপ্রিল ২০২০, ১১:২৪
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সুযোগ সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার এক টুইটবার্তায় তিনি বলেছেন, অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করতে যাচ্ছেন তিনি। করোনাভাইরাস মহামারির প্রেক্ষাপটে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চাকরি রক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে যুক্তি দিয়েছেন ট্রাম্প। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে। দেশটি করোনা নিয়ন্ত্রণে লড়াই করে যাচ্ছে। এমন সময়েই অভিবাসন বন্ধের ঘোষণা দিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে কতদিন পর্যন্ত অভিবাসন বন্ধ থাকবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। আক্রান্ত ও মৃতু্যতে দেশটির ধারে কাছেও নেই কোনো দেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে আরও ২৮ হাজার মানুষ। অপরদিকে মারা গেছে এক হাজার ৯৩৯ জন। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত সাত লাখ ৯৩ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪২ হাজারের বেশি। এরই মধ্যে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৭২ হাজার ৩৮৯। তবে ১৪ হাজারের বেশি লোকের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবকটিতেই এ ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতু্যর সংখ্যা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে যত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, তার অধিকাংশই নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের। পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে করোনাভাইরাস। এদিকে, সোমবার হোয়াইট হাউসে প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে, যা প্রশাসনের অনুমান থেকে অনেক কম। এর আগে গত মাসের শেষের দিকে দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফৌসি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে এক থেকে আড়াই লাখ মানুষ মারা যাবে। এমনকি মার্কিনিরা যদি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি মেনে চলে তারপরও এত সংখ্যক প্রাণহানি ঘটবে। যুক্তরাষ্ট্রে এক শহরের সব বাসিন্দার করোনা পরীক্ষা এদিকে, স্বাস্থ্যকর্মীরা ক্যালিফোর্নিয়ার মেরিন কাউন্টির একটি শহরের সব বাসিন্দার করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু করেছেন। সোমবার থেকে করোনাভাইরাস ও এর অ্যান্টিবডি শনাক্তে সমুদ্র তীরবর্তী শহর বলিনাসের বাসিন্দাদের শ্লেষ্মা ও রক্তের নমুনা পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর হাতে গোনা যে কয়েকটি শহরে সব বাসিন্দার নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সিলিকন ভ্যালির নিকটবর্তী বলিনাস তার অন্যতম। সম্পদশালী এ শহরটির কর্তৃপক্ষ এক হাজার ৬৮০ জন বাসিন্দার সবার নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করেছে। এ পরীক্ষায় ক্যালিফোর্নিয়া-সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয় (ইউসিএসএফ) তাদের সহযোগিতা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী অধ্যাপক ড. এনর সয়ার বলেন, মহাসড়ক থেকে তিন কিলোমিটার দূরের এই শহরটি অবস্থানগতভাবে কিছুটা বিচ্ছিন্ন, রোগটি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা বোঝার জন্য এ ধরনের একটি শহরই উপযুক্ত স্থান। তিনি বলেন, 'কার্যত আমরা প্রায় বিচ্ছিন্ন, গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এখানকার পরিবেশও বেশ স্থিতিশীল। যে কারণে এ এলাকায় ভাইরাসটির পদচিহ্ন অনুসরণ করা চিত্তাকর্ষকই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।' বিনা পয়সার এ পরীক্ষায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে স্বেচ্ছাসেবকরা বাসিন্দাদের শহরের চারটি স্থানে অবস্থিত পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে যাবেন; এসব কেন্দ্রে নারী-শিশু-পুরুষ সবার শ্লেষ্মা এবং আঙুল থেকে রক্ত নেয়া হবে। শ্লেষ্মা পরীক্ষা করে দেখা হবে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি; রক্ত জানাবে কোনো ব্যক্তি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর তার শরীরে কোনো ধরনের অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হয়েছে কিনা। বলিনাসে এখন পর্যন্ত কারও দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। শহরটির অধিকাংশ বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব হওয়ায় একবার কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। করোনাভাইরাস শনাক্তে কেবল বলিনাস শহরেই সব বাসিন্দার পরীক্ষা হচ্ছে, তা নয়। কলোরাডোর টেলুরাইড ও ফ্লোরিডার ফিশার আইল্যান্ডও তাদের সব বাসিন্দার কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে