দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, 'আগামী রোববার (৫ এপ্রিল) রাত ৯টায় আমি আপনাদের কাছ থেকে ৯ মিনিট সময় চাইছি। ওই সময়ে বাড়ির সব আলো নিভিয়ে ঘর বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মোমবাতি, প্রদীপ বা ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালান। এতেই মহাশক্তির প্রকাশ ঘটবে। এই শক্তির মাধ্যমেই প্রকাশ পাবে আমরা কেউ একা নই, একসঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আছি।' শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে মোদি এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, এনডিটিভি
মোদি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে যে ভাবে দেশজুড়ে সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে হবে। গত ২৫ মার্চ ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন তিনি। ঠিক তার ৯ দিনের মাথায় শুক্রবার ফের ভারতবাসীর উদ্দেশে করোনা নিয়ে ভাষণ দিলেন মোদি। তিনি বলেন, 'লকডাউনের আজ নবম দিন। আপনারা যেভাবে সরকারকে সহযোগিতা করেছেন, তা প্রশংসনীয়।' সরকার, প্রশাসন এবং দেশবাসী সকলে মিলে যেভাবে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সামলানোর চেষ্টা করছেন, তা এক কথায় অভূতপূর্ব।'
ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, 'দেশবাসীর মধ্যে এই ভাবনা বিরাজ করছে, করোনার বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করতে হবে।' পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, 'অনেকের মনে হতে পারে, একা লড়াই করব কী করে? এই প্রশ্নও মনে আসতে পারে, কত দিন লকডাউনের মতো পরিস্থিতি চলবে? তাদের উদ্দেশে বলি, এটা লকডাউনের সময় ঠিকই। কিন্তু আপনারা কেউ একা নন। ১৩০ কোটি দেশবাসী একসঙ্গে লড়ছে।'
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভারতজুড়ে ২১ দিনের লকডাউন চলছে। লকডাউন শেষ হলে করোনা ঠেকাতে ভারতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্যগুলোর কাছে পরামর্শ চেয়েছেন মোদি। বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাস মোকাবিলায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি 'এগজিট স্ট্র্যাটেজি'র ওপর জোর দেন। এদিনের বৈঠকে মোদি বলেন, লকডাউন শেষ হলে কী হবে, সে বিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে 'এগজিট স্ট্র্যাটেজি' বানাতে হবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। আর এতে দেশটিতে মৃতু্য হয়েছে মোট ৭২ জনের। ভারতে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে এমন ২০টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সেখানে করোনায় তিনজনের মৃতু্য হয়েছে। তবে এর আগেই বৃহস্পতিবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি সাংবাদিকদের জানায়, পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে সাতজনের মৃতু্য হয়েছে। ফলে এ রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে দুই রকম তথ্য আসায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানান, ৫৩ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ৫০ জনের মধ্যে ৯ জন আক্রান্তের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। বাকি ৪১ জনের মধ্যে সাতজনের মৃতু্য হয়েছে। তাই এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪।
এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশ্বের ২৫টি দেশকে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। এর মধ্যে শুধু ভারতই পাচ্ছে ১০০ কোটি ডলার। বৃহস্পতিবার ব্যাংকের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।