শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
করোনার হানা

বসন্তে অবরুদ্ধ ভালোবাসার শহর

যাযাদি ডেস্ক
  ০২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

মহামারি রূপ নেওয়া কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস চীনে ব্যাপকভাবে ছড়ানোর সময় বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হলেও তখনো দেশটিতে একদিনে মৃতু্যর সংখ্যা দেড়শোর বেশি হয়নি। সেদিক থেকেও ইতালি চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়ানোর নতুন কেন্দ্রস্থল ইউরোপের এই দেশটিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পরও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে সে দেশের সরকার।

রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের শহর রোমে এখন ভরপুর বসন্ত। কিন্তু ভালোবাসার শহর বলে খ্যাত রোমে চলছে না কোনো 'রোমান হলিডে'। অন্য শহরের মতো অবরুদ্ধ রাজধানী রোমও। অবরুদ্ধ সময়ে জীবন কেমন কাটছে রোমবাসীর তা উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদক বলেন, মার্চের গোড়ার দিকে এক সকালে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে আমি উড়োজাহাজ ছাড়ার অপেক্ষা করছিলাম। আমার গন্তব্য ছিল ইতালি; করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিবেদন করতে হবে। রোমে এটাই আমার প্রথম যাত্রা। অথচ পেস্ননে গুটিকয়েক যাত্রীর মাঝে বসে আমি কেমন যেন অস্থির, চিন্তিত আর ভয় পাচ্ছিলাম।

কালো চুলের একটি মেয়ে বসেছিল আমার কাছেই। যুক্তরাজ্য থেকে ইতালিতে পরিবারের কাছে ফিরছে মেয়েটি। শহরটি পুরোপুরি অবরুদ্ধ হওয়ার আগেই ফিরতে চায় বলে আমাকে জানাল সে। পেস্নন থেকে যখন নামলাম রোমে তখন উষ্ণ ও উজ্জ্বল একটি দিন। কিন্তু তা ছাপিয়ে ভয় গ্রাস করেছিল আমাকে। লক্ষ্য করলাম, এখানে কেউ কারও চোখের দিকে সরাসরি তাকাচ্ছে না; সবারই মাস্কে মুখ ঢাকা।

বিমানবন্দরের এক কর্মী বেশ জোরেই কথা বলছিলেন। মাস্ক পরে থাকার কারণে একটু চাপা কণ্ঠ শোনালেও বেশ ভালোভাবেই বুঝিয়ে বলা হলো, আমরা সবাই যেন একে অপরের কাছাকাছি না দাঁড়াই। রোমে পর্যটনের সঙ্গে মিশেছে প্রাচীন ইতিহাস ও ধর্ম। ছাদবিহীন মঞ্চ রোমান কলোসিয়াম, ভ্যাটিকান সিটির সেইন্ট পিটারস স্কয়ার, পুরানো মন্দির প্যানথিওন পর্যটকদের টানে। অন্য সময় লোকে লোকারণ্য হলেও এসব স্থাপনাগুলো এখন জনমানবশূন্য যেন মরুভূমি।

সুনসান শহরের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে মনে হলো যেন এক ভুতুড়ে নগরী। ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্টে এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, জরুরি কারণ ছাড়া ঘুরে বেড়ানো যাবে না একেবারেই। সরকারের এই নির্দেশনা মানতে বাধ্য করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মাঠে নেমেছে।

গির্জায় ঘণ্টার আওয়াজ ছাড়া রোমজুড়ে এখন শুধুই নৈঃশব্দ। আমরা এখানকার ফ্যাশন নিয়ে শুটিং করছিলাম। সড়কের ধারে সারি করে ছিল নামকরা ডিজাইনারের দোকান। হঠাৎ পরিবেশটা পাল্টে গেল। দেখলাম আশপাশের বাড়ি থেকে বারান্দায় জড়ো হচ্ছেন বাসিন্দারা। আমাদের দেখে হাত তালি দিয়ে উঠলেন।

ওদের সবার তালির ছন্দে মুহূর্তেই খান খান হয়ে গেল সবটুকু মৌনতা। কেউ কেউ বারান্দা থেকে চিৎকার করে বললেন, 'এটা আমাদের ঐক্য ও প্রতিরোধের জন্য। ঘরে থাকার এই নিয়মকে আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ ভাইরাসটিকে ধ্বংস করার জন্য এটাই জরুরি এখন।'

ইতালির সবচেয়ে আক্রান্ত এলাকা লমবার্দিতে তখন পরিস্থিতি বেশ খারাপ। হাসপাতালগুলো যথাসাধ্য চেষ্টা করছে বাড়তে থাকা মৃতু্যর মিছিল রোধ করতে। কিন্তু তাদের কিট ফুরিয়ে আসছিল; অভাব তৈরি হয় বিশেষজ্ঞ সহায়তারও। প্রেসিডেন্ট কড়া ভাষায় দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, নিজেরা ঘরবন্দি না হলে এত স্বল্পসংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে সেবা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না কোনোভাবেই।

এক চিকিৎসক আমাকে বললেন, 'যুদ্ধক্ষেত্রের মতো অবস্থা এখানে।' এদিকে রোমে পুলিশকে সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকতে হচ্ছে; ৪৫ লাখ মানুষের শহরটিতে কোথাও জটলা দেখলেই ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চিত্র ছিল শহরের সর্বত্রই। একদিন সকালে একটি সুপারমার্কেটের বাইরে শুটিং চলছিল। এক বৃদ্ধা আমার প্রযোজক ও আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললেন, আমরা দুজন যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলছি না। যেতে যেতেও বৃদ্ধা আমাদের উদ্দেশে বলছিলেন, একটু দায়িত্বশীল হতে হবে।

এটাই এখন রোমের বাস্তবতা। শহরের খাবার আর ওষুধের দোকানগুলো খোলাই ছিল। কিন্তু সেখানে কেনাকাটার কোনো হিড়িক চোখে পড়ল না। ক্যাথলিক গির্জাগুলো খোলাই ছিল; যদিও ভক্তদের জন্য কোনো সেবা দেওয়ার সুযোগ ছিল না। রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু পোপও ঘরবন্দি করেছেন নিজেকে। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94928 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1