বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
করোনাভাইরাস মহামারি

ইতালি-স্পেনে বিভীষিকাময় দিন

সংক্রমণ এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি, সতর্কবার্তা ইতালির স্বাস্থ্য সেবা প্রধানের বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে
যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৯ মার্চ ২০২০, ১১:০১
ইতালিতে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা -ফাইল ছবি

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এ একদিনে এত মৃতু্য আগে কখনো দেখেনি ইতালি ও স্পেন। শুক্রবার ইতালিতে মারা গেছে ৯৬৯ জন আর স্পেনে ৭৬৯ জন। ইউরোপের এই দুই দেশে মৃতু্যর মিছিল বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যাকে ২৮ হাজার ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্যানুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত বিশ্বে মৃতু্য হয়েছে ২৮ হাজারের বেশি মানুষের। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক লাখ ৩৭ হাজারের বেশি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স ইতালিতে রেকর্ড মৃতু্যর পর দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের প্রধান সতর্ক করেছেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি। দেশটির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থার তথ্য মতে, করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৬৯ জনের মৃতু্যতে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৩৪ জনে। একই সময়ে নতুন করে ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে চার হাজার ৪০১ জনের, মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬ হাজার ৪৯৮ জনে। (প্রতিদিন বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় ইতালি তথ্য হালনাগাদ করায় শনিবারের হালনাগাদ তথ্য জানা যায়নি)। অন্যদিকে, স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সাত হাজার ৮৭১ জনের এই ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৫৯ জনে। আর এই ২৪ ঘণ্টায় ৭৬৯ জনের মৃতু্যতে স্পেনে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ১৩৮ জনে। ইতালির 'সুপিরিয়র হেলথ ইন্সটিটিউট'র প্রধান সিলভিও ব্রম্নসাফেরো বলেন, আক্রান্তের সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে, নতুন সংক্রমণের হার 'কমছে', যা গৃহীত কঠোর পদক্ষেপগুলো ফলপ্রসূ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এসব বিধি-নিষেধ শিথিল করা হলে অবস্থা খারাপ হতে পারে বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, 'আমরা এখনো চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাইনি।' পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতেই প্রথম মানুষের চলাচল সীমিত করা হয় এবং এই বিধিনিষেধ ৩ এপ্রিলের পরও বাড়ানো হবে বলে দেশটির কর্মকর্তারা শুক্রবার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইউরোপে ইতালির পরে নভেল করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত দেশ স্পেনের সরকার জরুরি অবস্থা অন্তত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে। দেশটিতে মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ দোকান ও ব্যবসা-বাণিজ্য। স্পেনের নার্সিং হোমের বাসিন্দারাই বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির ৯০০ নার্সিং হোমে অন্তত এক হাজার ৫১৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। নার্সিং হোম, হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র জীবাণুমুক্ত করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। দেশটিতে ৯ হাজার ৪৪৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। বেশ কয়েকদিন ধরে চিকিৎসক ও নার্সরা পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছেন। এদিকে, যুক্তরাজ্যেও একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যকের মৃতু্য হয়েছে। নতুন ১৮১ জনকে নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫৯ জনে। আর আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড ফিলিপ নতুন সংক্রমণের ঝুঁকি অতি উচ্চমাত্রায় বলে সতর্ক করেছেন। দেশের পূর্বাঞ্চলে শুরু হওয়া মহামারি এখন প্যারিস অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ফ্রান্সের হাসপাতাল ফেডারেশন বলছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানী প্যারিসের হাসপাতালগুলো রোগী ধারণ ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। শনিবার পর্যন্ত ফ্রান্সে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে দুই হাজারের বেশি লোকের মৃতু্য হয়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোর সবার ওপরে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এক লাখের বেশি মানুষের এই রোগ ধরা পড়েছে, প্রাণ হারিয়েছে এক হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে নিউইয়র্ক, তবে নিউ অরলিন্স, শিকাগো ও ডেট্রোয়েটেও দ্রম্নত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ইরাক, লেবানন, ওমান, কুয়েত ও মিসরে শুক্রবার ২৬৯ জনের করোনাভাইরাস ধরা পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯২ জন শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এদের নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১০৪ জনের বেশি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে