মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেওয়া কঠোর পদক্ষেপের কারণে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ কোনো না কোনোভাবে বিধিনিষেধের বেড়াজালে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫২ জনে। এছাড়া মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২২ হাজার ২৮ জনে। পাশাপাশি এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৮২ জন। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, ডেইলি মেইল
চারদিকে আতঙ্ক ছড়ানো এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, 'একটি সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টাই শুধু পারে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রকোপ থামাতে।' করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের নেওয়া পদক্ষেপে বুধবার পর্যন্ত বিশ্বের ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষ লকডাউনে থাকা এলাকাগুলোতে আছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এসব এলাকার মানুষের চলাচল যেমন সীমিত হয়েছে; তেমনি রাশ পড়েছে দৈনন্দিন জীবনব্যবস্থায়ও। ইতালির পর স্পেনেও করোনায় মৃতু্যর সংখ্যা চীনকে ছাড়িয়েছে; তিন মাস আগে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকেই ভাইরাসটি ছড়াতে শুরু করেছিল। ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা হাজারের ঘর অতিক্রম করে দেড় হাজারের দিকে ছুটছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস বিশ্বের দরিদ্র মানুষদের জন্য দুই বিলিয়ন ডলারের একটি সহায়তা তহবিল খুলতে গিয়ে বলেন, 'মহামারি মোকাবেলায় সমগ্র বিশ্বকে এক হয়েই লড়তে হবে।' তিনি বলেন, 'কোভিড-১৯ সমগ্র মানবজাতির জন্য হুমকি, তাই সমগ্র মানবজাতিকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এই মুহুর্তে বৈশ্বিক পদক্ষেপ ও সংহতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিচ্ছিন্নভাবে একেকটি দেশের প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নয়।'
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের এক হিসাবে বিশ্বের অন্তত ৮২টি দেশ সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে। এদের মধ্যে ভারতেরই আছে ১৩০ কোটি মানুষ। তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউনে যাওয়া জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ দেশটিকে এখন মানুষের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বুধবার করোনায় আক্রান্ত আরও দুই রোগীর মৃতু্যর খবর দেওয়া রাশিয়াও লকডাউনের পথ ধরতে যাচ্ছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন আগামী সপ্তাহের সব কার্যদিবসে ছুটি ঘোষণা করেছেন, সংবিধান সংশোধনের গণভোট স্থগিত করেছেন। মানুষকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলারও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাজ্যেও আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। বুধবার ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে; অবশ্য তার সংক্রমণ মৃদু বলে কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন। সংকট মোকাবেলায় বিশ্ব কী পদক্ষেপ নেবে, তা ঠিক করতে গতকাল বৃহস্পতিবার জি-২০ দেশগুলো ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক জরুরি বৈঠকে বসেছে। বৈঠক করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা ২৭ দেশও।
স্পেনে একদিনে ৭৩৮ জনের মৃতু্যর পর দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৪০০ অতিক্রম করেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিকিৎসা উপকরণ কিনতে দেশটি বেইজিংয়ের সঙ্গে ৪৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের একটি চুক্তিও করেছে।
ইতালিতে মোট মৃতু্যর সংখ্যা শেষ খবর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫০৩ জনে। ফ্রান্স করোনাভাইরাসে বুধবার নতুন আরও ২৩১ জনের মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছে; দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৩০০ পেরিয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে প্যারিসে মেট্রো ও রেল চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করে সফলতার কাছাকাছি পৌঁছানো চীনের পরিস্থিতি এখন একেবারেই অন্যরকম। ডিসেম্বরের শেষদিকে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি দেশটির যে প্রদেশ থেকে ছড়িয়েছিল, সেই হুবেই প্রদেশে মানুষের চলাচলের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনমাস পর ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া মানুষদের চাপে বাস ও ট্রেনে ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে।
চীনের অবস্থা স্বস্তিদায়ক হলেও করোনাভাইরাস মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। ইরানে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার পেরিয়েছে; আফ্রিকার মালি তাদের দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগীর সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে। সংক্রমণ রুখতে মহাদেশটির বেশ কয়েকটি দেশ জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
জাপানের রাজধানী টোকিওর গভর্নর করোনাভাইরাসের বিস্ফোরণ ঠেকাতে বাসিন্দাদের সপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ঘরেই থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার ও মৃতু্যর সংখ্যা পাঁচ জনে দাঁড়ানোর পর ইসরাইলেও নাগরিকদের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জেরুজালেমের চার্চ অব হোলি সেপুলক্রে।