বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় 'রেড অ্যালার্ট' জারি

করোনাভাইরাস মহামারি রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে, সতর্কতা জারি করা দুই দেশেই চীনের বাইরে সর্বোচ্চ মৃতু্য ইরানে, ৮ জন উহানে চিকিৎসকের মৃতু্য
যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

প্রাণঘাতী কভিড-১৯ করোনাভাইরাস চীনের পর সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালিতে। এরই মধ্যে ইতালিতে দুইদিনে দুইজনের মৃতু্য হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ জনের বেশি ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে, রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে দক্ষিণ কোরিয়াতেও। তাই দুই দেশেই জারি করা হয়েছে 'সর্বোচ্চ সতর্কতা' বা 'রেড অ্যালার্ট'। সংবাদসূত্র : ডয়চে ভেলে, এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স

দুই নাগরিকের মৃতু্যতে করোনাভাইরাস ঠেকাতে নড়েচড়ে বসেছে ইতালির সরকার। বেশ কয়েকটি শহরকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ভেনিসের বিখ্যাত কার্নিভালও। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে শুধু লোম্বার্দি অঞ্চলেই ৮৯ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সেখানকার কোডোনিওতে শনিবার এক নারীর মৃতু্য হয়েছে। তার আগে মারা গেছেন আরেকজন পুরুষ।

দেশটির উত্তরাঞ্চলের প্রায় এক ডজন শহরের পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষকে ঘরে অবস্থানের অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। সেখানকার রাস্তাঘাট এরই মধ্যে ফাঁকা হয়ে গেছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সরকারি ভবন। ভেনিসের কার্নিভালের আয়োজনও বন্ধ করা হয়েছে।

এর আগে মিলানের কাছের কোডোনিওতে সর্বপ্রথম এই রোগে আক্রান্ত ৩৮ বছর বয়সী একজনকে শনাক্ত করা হয়েছিল। তিনি গত ২১ জানুয়ারি চীন থেকে আসা একজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, করোনার প্রাদুর্ভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা বা রেড অ্যালার্ট জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। তিনজনের মৃতু্য ও ১৬৯ জন নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার পর রোববার তিনি এই ঘোষণা দেন। এ নিয়ে দেশটিতে ৬০২ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার থেকে শনিবারের মধ্যে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। সেখানে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন।

পরিস্থিতি 'ভয়াবহ' হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী চুং সায়ে-কিউনও। এই পরিস্থিতিতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানসহ যে কোনো জনসমাগম এড়িয়ে চলতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দায়েগুর একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং একটি হাসপাতালের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। দায়েগু ও তার পার্শ্ববর্তী চেওংডোকে 'স্পেশাল কেয়ার জোন' ঘোষণা করা হয়েছে। আতঙ্কে দায়েগু শহরের সব রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে। ওই শহরে একটি চার্চে প্রার্থনায় যোগ দেওয়া দেড় শতাধিক মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ওই সম্প্রদায়ের ৯ হাজার সদস্য স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার এবং পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

চীনের বাইরে সর্বোচ্চ

মৃতু্য ইরানে, ৮ জন

এদিকে, ইরানে করোনাভাইরাসে শনিবার নতুন করে আরও দুইজনের মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮ জনে দাঁড়িয়েছে। সরকারিভাবে ১১ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত ইরানে এ ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। আর ২২ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যেই ২৯ জনের সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেল। এর মধ্যে ৮ জনের মৃতু্য হয়েছে। চীনের বাইরে এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এটিই সর্বোচ্চ। মৃতদের সবাই ইরানি।

শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুস জাহানপুর বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আরও দুইজনের মৃতু্য হয়েছে। এছাড়া এদিন আরও ১০ জনের শরীরে এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। ইরানে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃতু্যর ঘটনা 'খুবই উদ্বেগজনক' বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাবিস্নউএইচও) প্রধান ড. টেড্রোস অ্যাডহ্যানম গেব্রেইসুস। শনিবার তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ডবিস্নউএইচও বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।

মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। তবে এ অঞ্চলে ইরানেই প্রথম এ ভাইরাসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। শনিবার রাতে মারকাজি প্রদেশের গভর্নর আলি আঘাজাদেহ বলেন, আরাক শহরে মারা যাওয়া ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল। তার হার্টেও সমস্যা ছিল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোম, তেহরান ও গিলান প্রদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম দুই ব্যক্তি কোমে মারা গেছেন। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, ইরানে ওই শহর থেকেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। শহরটিতে চীনা শ্রমিক রয়েছে। তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি স্থানীয়দের দেহে প্রবেশ করতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে অন্তত ১১ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে প্রথম এ ভাইরাস ধরা পড়ে গত ২৮ জানুয়ারি। তখন সফররত একটি চীনা পরিবারের চার সদস্যের দেহে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশই চীনা নাগরিক। তবে আক্রান্তদের কোথায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, বা তারা দেশটির কোন কোন স্থানে গিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে মুখ খোলেনি আমিরাতি কর্তৃপক্ষ।

উহানে আক্রান্ত আরেক চিকিৎসকের মৃতু্য

অন্যদিকে, চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন আরও এক চিকিৎসক। শিয়া সিসি নামে এই নারী গত ১৯ জানুয়ারি থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্থানীয় সময় রোববার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে মারা যান তিনি।

শিয়া সিসি উহানের শিয়েহে জিয়াংবেই হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝংনান হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মৃতু্যর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89786 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1