বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিক্ষোভে বাগদাদে জনসমুদ্র

সেনা প্রত্যাহার দাবি জ্জ প্রভাবশালী নেতা মুকতাদার ডাকে এগিয়ে আসে শিয়া, সুন্নি, কুর্দি ও আরবসহ সবাই জ্জ কয়েক দশকের মধ্যে বড় বিক্ষোভ জ্জ ইরাকে সেনা মোতায়েনের চুক্তি সরকারের সঙ্গে :ওয়াশিংটন
যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদ। লাখো মানুষের জমায়েতে শুক্রবারের এ বিক্ষোভ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুকতাদা আস-সাদরের ডাকা 'মিলিয়ন-ম্যান মার্চ' নামে এই বিক্ষোভে কাঁপছে গোটা বাগদাদ। কয়েক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী এত বড় বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি। সংবাদসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা

শুক্রবার দুপুরের আগ থেকেই বাগদাদের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্ষোভে যোগ দিতে থাকেন ইরাকিরা। রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন প্রদেশ থেকেও এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে থাকেন শিয়া, সুন্নি, কুর্দি ও আরব-নির্বিশেষে সব গোত্র-সম্প্রদায়ের ইরাকিরা। দুপুর নাগাদ বাগদাদে জড়ো হয় লাখ লাখ মানুষ।

মার্কিন সেনা উপস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন তারা। সম্প্রতি মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির সঙ্গে এক ইরাকি গোষ্ঠীর প্রধান নিহত হওয়ায় মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে। বিক্ষোভে স্স্নোগান ওঠে- 'যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক, ইসরাইল নিপাত যাক', 'ইরাক থেকে বের হয়ে যাও মার্কিন সেনারা'।

ইরানপন্থি সাদর ইরাকে মার্কিন সেনার অব্যাহতি চেয়ে দাবি জানিয়ে আসছেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে শুকার আল হুরিয়া চত্বর ও প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে অনেকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মী বলেন, 'আমরা চাই তারা সবাই চলে যাক-যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও আমাদের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদরা।'

বিক্ষোভে সবার হাতে লাল, সাদা ও কালো কাপড় ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনবরত স্স্নোগান দিচ্ছিলেন তারা। তবে এই মিছিল মার্কিন দূতাবাসের দিকে অগ্রসর হয়েছিল কি না তা স্পষ্ট নয়। বাগদাদের মূলপথ ও গ্রিন জোনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এ শান্তিপূর্ণ মহাবিক্ষোভকে ১৯২০ সালে অনুষ্ঠিত ইরাকের ইসলামী বিপস্নব বা গণ-অভু্যত্থানের সঙ্গে তুলনা করেছে। সে সময় ইরাক ও ইরানের প্রখ্যাত শিয়া ও সুন্নি আলেমদের আহ্বানে ব্রিটিশ দখলদারির বিরুদ্ধে ইরাকের সর্বত্র গণপ্রতিরোধ শুরু হয়।

গত ৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বাগদাদে ইরানের বিপস্নবী গার্ডের কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে চোরাগোপ্তা কায়দায় হত্যা করে। ওই হত্যাকান্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইরাককে দু'পক্ষের যুদ্ধক্ষেত্র বানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছে ইরাকিরা।

কর্মসংস্থানের সংকট, নিম্নমানের সরকারি পরিষেবা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাগদাদের রাজপথে নামে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত এই বিক্ষোভে নিহত হয় সাড়ে চারশরও বেশি মানুষ। বিক্ষোভের জেরে প্রায় দুই মাস আগে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি। তবে রাজনৈতিক দলগুলো এখন পর্যন্ত নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগে সম্মত হতে না পারায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

ইরাকে সেনা মোতায়েনের চুক্তি

সরকারের সঙ্গে: ওয়াশিংটন

ইরাকের পার্লামেন্টে দেশটিতে মোতায়েনকৃত মার্কিন সেনাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বানের প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন বলেছে, ইরাকে সেনা মোতায়েনের জন্য দেশটির সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, দেশটির পার্লামেন্টের সঙ্গে নয়। ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিরোধী সামরিক জোটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত জেমস জেফ্রি বলেন, 'আমরা বারবার বলে আসছি ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারে কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি ইরাকের সিদ্ধান্ত। ভবিষ্যতে ইরাকে মার্কিন ও জোট সেনাদের উপস্থিতির বিষয়ে তাদেরকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জেমস জেফ্রি আরও বলেন, আমরা এটি স্বীকার করছি। তবে আমরা আলোচনায় বসা ও প্রত্যাহার নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নই। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কিত কোনো আলোচনায় যদি ইরাকিরা বসতে চায় তাহলে আমরা মনে করি তা উভয় দেশের পুরো সম্পর্কে হবে, যা শুধু সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি ছাড়িয়ে যাবে।

বাগদাদে ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যার পর জানুয়ারির শুরুতে ইরাকের পার্লামেন্টে দেশটির আইনপ্রণেতারা একটি ঐচ্ছিক প্রস্তাবনা পাস করেন মার্কিন সেনাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য।

কিন্তু জেফ্রি দাবি করেছেন, ২০১৪ সালের যে চুক্তির আওতায় মার্কিন ও জোট সেনারা অবস্থান করছেন তা ইরাকের সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয়েছে, দেশটির পার্লামেন্টের সঙ্গে নয়। এটি সরকারে সঙ্গে সরকারের চুক্তি। যাতে পার্লামেন্ট প্রত্যক্ষ বা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত নয়। এর ভিত্তিতেই যুক্তরাষ্ট্রে সেখানে অবস্থান করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<85793 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1