শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
চাপ বাড়ছে তেহরানের

মধ্যপ্রাচ্যে ঐক্যের ডাক খামেনির

হামলা প্রতিরোধে নিজেদের সম্পর্ক উন্নয়নেরও আহ্বান সর্বোচ্চ নেতার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ চড়াও নিরাপত্তা বাহিনী উত্তেজনা অবসানে রাজি ইরান :কাতারি আমির
যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি

মধ্যপ্রাচ্যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি। তিনি বলেছেন, 'মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে একত্র হতে হবে এবং বিদেশি শক্তির প্রভাব এড়িয়ে চলতে হবে।' সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র উত্তেজনা চলছে। এর মধ্যেই ইরানে ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংকট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোববার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি

যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্রদেশগুলোর কারণে বিভিন্ন দেশের মধ্যে যে যুদ্ধ, হাঙ্গামা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তা প্রতিহত করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানোরও আহ্বান জানান দেশটির ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। এক বার্তায় খামেনি বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ এড়িয়ে চলতে হবে।'

অন্যদিকে, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহর। ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানে রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ হয়েছে। এদিনের বিক্ষোভ আরও জোরদার ছিল। আর বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরাও বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের গুলি করার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ইরানের সামরিক বাহিনী দায় স্বীকার করার পর দেশটির ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ শুরু হয়। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। ইরানের এই বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এই বিক্ষোভকে অনুপ্রেরণামূলক বলে উলেস্নখ করেছেন। এছাড়া তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না করতে ইরান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, 'ইরানের নেতাদের উদ্দেশে বলছি, আপনারা বিক্ষোভকারীদের হত্যা করবেন না। আপনারা এর মধ্যেই কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা বা বন্দি করেছেন। বিশ্ব আপনাদের দেখছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেছে।'

গত সপ্তাহে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের বিপস্নবী গার্ডের প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়। সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে বুধবার ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই রাজধানী তেহরানের ইমাম খামেনি বিমানবন্দরের কাছে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

প্রথমদিকে বিমান ভূপাতিত করার কথা অস্বীকার করা হলেও পরে ইরানের সামরিক বাহিনী এর দায় স্বীকার করে। ওই দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৮২ জনই ইরানি নাগরিক। ৬৩ জন কানাডীয়, ১০ জন সুইডেনের, চারজন আফগানিস্তানের, তিনজন জার্মানির এবং তিনজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ক্ষমতাসীনরা প্রথমদিকে কেন মিথ্যা বলেছেন, তা নিয়েই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ইরান। এরপরই খামেনিসহ ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ইরানে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শহরে ব্যাপক আকারে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে রোববার পুলিশের উপস্থিতি উপেক্ষা করেই বিক্ষোভকারীদেরকে বিক্ষোভে জড়ো হতে দেখা গেছে। বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীরা সরকারবিরোধী স্স্নোগান দিচ্ছে। তাদের বলতে শোনা গেছে, 'তারা (ক্ষমতাসীনরা) বলে, আমাদের শত্রম্ন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আমাদের শত্রম্নতো এখানেই আছে।' অনেক নারীও এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।

বিমান ভূপাতিত করা নিয়ে মিথ্যা বলায় ইরানে শুরু হওয়া বিক্ষোভে পদত্যাগের জন্য নেতাদের ওপর চাপ বাড়ছে। বিক্ষোভকারীরা সরকার-বিরোধী স্স্নোগান দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরখাস্তের দাবি জানাচ্ছে। কর্মকর্তাদের মিথ্যাবাদী বলে অভিহিত করছে তারা। তাদের কাছ থেকে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার জবাবদিহি চায় বিক্ষুব্ধরা।

ইরানের অনেক পত্রপত্রিকাতেই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটিকে 'লজ্জাজনক' এবং 'ক্ষমার অযোগ্য' বলা হয়েছে। আবার সরকারপন্থি কয়েকটি পত্রিকায় ইরানের ভুলের 'সৎ' স্বীকারোক্তির প্রশংসা করা হয়েছে। তবে স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের চলমান বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত ইরানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকেই শক্তিশালী করবে। এরই মধ্যে তারা বিক্ষোভের জন্য ওয়াশিংটনকে দায়ী করা শুরু করেছে। ইরানের কট্টরপন্থিরা দেশের বিক্ষোভের নেপথ্যে সব সময় যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে আসছে।

উত্তেজনা অবসানে রাজি ইরান : কাতারি আমির

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানা ১০ দিনের তীব্র উত্তেজনার পর নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছে ইরান। রোববার তেহরান সফররত কাতারের আমিরের সঙ্গে এক বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এই ইঙ্গিত দেন। বৈঠকে উত্তেজনা প্রশমনই আঞ্চলিক সংকট সমাধানের একমাত্র পথ বলে মন্তব্য করেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি।

কাতারি আমির বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমনের একমাত্র সমাধান হলো সংলাপ।' আর এতে রাজি হয়েছে তেহরান। বাগদাদে কাসেম সোলাইমানির হত্যার পর ইরাকে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঘিরে উপসাগরীয় অঞ্চলে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি এবং অন্য নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রোববার তেহরান সফরে যান শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84285 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1