শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দর কষাকষির কৌশলে তালেবান

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

আফগান সরকার এবং দেশটিতে অবস্থানরত ন্যাটোর সামরিক কমান্ডারদের দারুণভাবে বিস্মিত করেছে তালেবান। কাবুলের সঙ্গে দেশটির পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান সড়কের ওপর অবস্থিত কৌশলগত জনপদ গজনিতে হামলা করে চমকে দিয়েছে তালেবান। ঈদুল আজহা নিয়ে আরেকটি অস্ত্রবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে কাবুল ও ওয়াশিংটন যখন কিছুটা মাথা ঘামাচ্ছে, তখনই এই অপ্রত্যাশিত হামলা চালালো তালেবান।

জানা গেছে, গজনি শহরের সবগুলো প্রধান সরকারি ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে তালেবান। সরকারি বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে হতাহতও হয়েছে প্রচুর। এছাড়া, অন্যান্য প্রদেশের দুবর্ল সরকারি আউটপোস্টগুলোতেও সামরিক হামলা চালিয়েছে তালেবান। তাদের হামলার মুখে সরকারি বাহিনী মূলত অকাযর্কর হয়ে পড়ে।

বিগত বেশ কয়েক মাসে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশটির উল্লেখযোগ্য এলাকার নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে তারা। তাছাড়া, তারা ওয়াশিংটনের ধারণাকেও ভুল প্রমাণিত করেছে; যারা বলে আসছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দক্ষিণ এশিয়া নীতি তালেবানকে কাবুলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য করবে।

ফারাহের পর গজনিই জনসংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় শহর, যেটা বিগত তিন মাসের মধ্যে তালেবানের হস্তগত হলো। এই শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করা তালেবানদের উদ্দেশ্য নয়, বরং তারা এসব জায়গায় হামলা করে নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিতে চায়। এখন

সবাই ভাবছে, পরবতীর্ শহর কোনটি হবে।

আফগান সরকার তাদের পদক্ষেপের ব্যাপারে ব্যথর্ হয়েছে এবং পরিস্থিতি এখন তালেবানের অনুক‚লে।

প্রতিটি তালেবানি হামলার মুখে সরকারি বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে গেছে। কাবুলের নেতারা এখন ন্যাটোর বিমান সহায়তার প্রতীক্ষায় অসহায় তাকিয়ে আছে। এছাড়া হারানো অবস্থানের উদ্ধারের জন্য এলিট স্পেশাল ফোসের্র ওপর অতিমাত্রায় নিভর্র করছে কাবুল। তবে এলিট ফোসের্র শক্তি এরই মধ্যে যথেষ্ঠ হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি আফগান কমান্ডো বাহিনীতে বড় ধরনের লোকক্ষয় হতে দেখা গেছে। কারণ তালেবান তাদের কৌশল রপ্ত করেছে এবং তাদের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বকে ছাড়িয়ে গেছে।

১৯৯৪ সাল থেকে তালেবান বাড়তি কোনো সামরিক শক্তি অজর্ন করেনি বা অতিরিক্ত কোনো অত্যাধুনিক বিমান বিধ্বংসী মিসাইলেরও অধিকারী হয়নি। তাদের শক্তির উৎস হলো কাবুলের অকাযর্কর সরকারের কমর্ক্ষমহীনতা। একটা অভিজাত শ্রেণি সরকার চালাচ্ছে, যাদের কিছুই হারানোর নেই। সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও তারা আফগানিস্তান শাসন করে যাবে এবং স্থিতিশীল আফগানিস্তান থেকে সুফল ভোগ করবে। আর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে তারা দেশ ছেড়ে চলে যাবে এবং মূলত পশ্চিমা দেশগুলোতে তাদের দ্বিতীয় বাসস্থানে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে থাকবে।

এছাড়া আফগানিস্তানের মতো দরিদ্র একটি দেশে ছয় বিলিয়ন (৬০০ কোটি) ডলারের মতো বিশাল সামরিক বাজেটের কারণে নিরাপত্তা খাতে দুনীির্ত ও স্বজনপ্রীতি বেড়ে গেছে। সিনিয়র সামরিক এবং বেসামরিক কমর্কতার্রা ব্যক্তিগত অজের্নর জন্য তীব্র প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আফগানিস্তানের বহু শীষর্ সামরিক জেনারেল মেদবহুল এবং দুগর্ম পাহাড়ি এলাকায় তারা কয়েক কিলোমিটারও হঁাটতে পারেন না। যুদ্ধক্ষেত্রে কখনো তাদের পা পড়েনি। অন্যদিকে এ খাতের বেসামরিক নেতৃত্বের কাছে যুদ্ধের কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাই নেই। যুদ্ধক্ষেত্রের ব্যাপারে তাদের জ্ঞান যেটুকু আছে, তা এসেছে হলিউডের ছবি থেকে!

এই ধরনের নেতৃত্বের হাতে পড়ে সাহসী যোদ্ধারা যেখানে ডজন ডজন নিহত হচ্ছে, সে অবস্থায় বড় ধরনের কোনো অজের্নর প্রত্যাশা করছে না আফগানরা। শীষর্ অবস্থানের হাতে গোনা কিছু নেতৃত্বের ভুলের কারণে তরুণ আফগান যোদ্ধাদের এত প্রাণক্ষয়ের বিষয়টিও সহ্য করতে পারছে না।

বাস্তবতা হলো, তালেবান সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের ববর্র হামলা অব্যাহত রাখবে, যতক্ষণ না যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর কষাকষির ক্ষেত্রে একটা সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে পারে। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে দেখে মনে হচ্ছে, বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগই নেই। নিজের দেশে নিজের অবস্থানের চেয়ে আন্তজাির্তক অঙ্গনে একজন মাকির্ন নাগরিক হিসেবে নিজের ভাবমূতির্ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি যেন অনেক বেশি ব্যস্ত।

ফলে আফগানরা আশঙ্কা করছে, বেশ কতগুলো শহরে আরও বড় পরিসরে তালেবানি সমন্বিত হামলার মধ্য দিয়ে কাবুল সরকারের পতন ঘটে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশটিতে আরও বড় ধরনের রক্তপাত বয়ে যাবে। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8118 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1