আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলীয় গজনি শহর দখলের পাশাপাশি দেশটির অন্যান্য স্থানেও হামলা অব্যাহত রেখেছে তালেবান। বুধবার বাঘলান প্রদেশের এক সামরিক ফঁাড়িতে তালেবান সদস্যদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৪৪ সদস্য নিহত হয়েছে। এদিকে, গজনি শহরে তালেবান ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘষের্র তীব্রতা বেড়েই চলেছে। এখন পযর্ন্ত দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইয়ে আনুমানিক ৪০০ সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অগণিত। যদিও গজনি শহর থেকে তালেবান যোদ্ধাদের সম্পূণর্ভাবে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শহর গজনিতে তীব্র লড়াই সত্তে¡ও আগামী সপ্তাহে ঈদুল আজহার ছুটিতে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয়ার কথা ভাবছে তালেবান। এ বিষয়ে এখন পযর্ন্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও শীষর্ নেতারা বুধবার বসে অস্ত্রবিরতির বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন বলে জানিয়েছেন আফগান তালেবানের ঊধ্বর্তন দুই কমর্কতার্। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টাসর্, এবিসি নিউজ
সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, বুধবার সকালের দিকে প্রদেশের বাঘলান-ই-মারকাজি জেলার এক সামরিক ফঁাড়িতে হামলা চালায় তালেবান সদস্যরা। হামলায় অন্তত ৩৫ সেনা ও ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বাঘলানের প্রাদেশিক পরিষদের প্রধান মোহাম্মদ সফদার মোহসেনি বলেন, জঙ্গিরা হামলা চালানোর পর ফঁাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। হামলা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ হামলার দায় স্বীকার করেছেন। এরআগে, সোমবার ফারইয়াব প্রদেশে ‘ক্যাম্প চিনায়া’ নামে পরিচিত এক সামরিক ঘঁাটিতে তালেবানের হামলায় অন্তত ১৭ সেনা নিহত হয়।
গজনিতে তীব্র লড়াই : নিহত ৪০০
এদিকে, গজনিতে তালেবান ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে। দুই পক্ষের মধ্যে এই লড়াইয়ে আনুমানিক ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে। সংঘষের্র কারণে ঘরবাড়ি হারিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
জানা গেছে, মাকির্ন সমথির্ত আফগান বাহিনী অবিরত লড়াই করে যাচ্ছে তালেবানের বিরুদ্ধে। দুই পক্ষের লড়াইয়ে প্রাণহানি হচ্ছে অসংখ্য মানুষের। স্থানীয়রা বঁাচার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না। টানা পঞ্চম দিনেও দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে। তালেবানের উদ্দেশ্য শহরের দখল নেয়া। যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি সম্পকের্ নিশ্চিত করে কিছু জানা যাচ্ছে না। তবে জাতিসংঘ ও আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পযর্ন্ত লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছে আনুমানিক ৪০০ মানুষ। এর মধ্যে বেসামরিক রয়েছেন প্রায় ১৫০ জন। যদিও আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চিরুনি অভিযান চালিয়ে তালেবানকে শহর ছাড়া করা হয়েছে। এখন শহরের আশপাশে তালেবান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
গত ১০ আগস্ট ভোরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূণর্ দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গজনিতে তালেবান হামলা শুরু করলে এর ওপর আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যায়। গজনি শহরে নিয়ন্ত্রণ জোরালো করতে মঙ্গলবার পাল্টা হামলা চালায় আফগান বাহিনী। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মুখপাত্র নাসারাত রহিমি এক পযাের্য় জানান, গজনির প্রতিটি ইঞ্চিতে পালিয়ে থাকা তালেবান সদস্যদের খেঁাজা হচ্ছে। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গফুর আহমাদ জাভিদ চিরুনি অভিযানে শহরটিকে তালেবানমুক্ত করার দাবি করে বলেন, কয়েকদিনের সংঘষের্ অন্তত ৩২৬ তালেবানযোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছে। তিনি জানান, সংঘষের্ ক্রসফায়ারে পড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন বেসামরিক আফগান নাগরিক নিহত হয়। তবে ওই মুখপাত্র তালেবানের বিরুদ্ধে সংঘষের্ নিহত সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি সম্পকের্ কিছু জানাননি। জাভিদ দাবি করেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণ জোরালো হওয়ার পর গজনি শহরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে এসেছে।
অস্ত্রবিরতির কথা ‘ভাবছে’ তালেবান
এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে অস্ত্রবিরতির কথা ভাবছে তালেবান। তাদের সঙ্গে সুসম্পকর্ থাকা বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ ও গোষ্ঠী অস্ত্রবিরতিতে রাজি হতে চাপ দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তালেবান নেতারা। তারা রাজি হলে গজনি প্রদেশেও অস্ত্রবিরতির ঘোষণা আসতে পারে। আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূবার্ঞ্চলীয় এ প্রদেশটির রাজধানীর আশপাশের বেশিরভাগ জেলার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে বলে দাবি করছে তালেবান।
এর আগে জুনে ঈদুল ফিতরে তিন দিনের অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছিল আফগান সরকার ও তালেবান, যাকে ২০১৫ সালে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর প্রথম কোনো কাযর্কর অগ্রগতি হিসেবে দেখা হয়েছিল।