রোববার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

মৃতু্যর ১৪ বছর পর সমাহিত চীনের নেতা ঝাও জিয়াং

ছাত্র আন্দোলনে বলপ্রয়োগের বিরোধিতা করায় মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত গৃহবন্দি ছিলেন
যাযাদি ডেস্ক
  ২০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
মৃতু্যর ১৪ বছর পর সমাহিত চীনের নেতা ঝাও জিয়াং
ঝাও জিয়াং

১৯৮৯ সালের ছাত্র আন্দোলনে বলপ্রয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ঝাও জিয়াং। ঘটনার পর তাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল দল থেকে। ২০০৫ সালে মারা যান ঝাও। মৃতু্যর পর রীতি অনুযায়ী তাকে রাষ্ট্রীয় কবরস্থানে সমাহিত করতে দেয়নি চীনা শাসকরা। ১৪ বছরের ব্যবধানে অবশেষে শুক্রবার রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতির পর বেইজিংয়ের চাওপিং এলাকার তিয়ানসৌ গার্ডেন কবরস্থানে তার দেহভস্ম সমাহিত করা হয়েছে। একই সময় সমাহিত করা হয় তার স্ত্রীর দেহভস্মও। সংবাদসূত্র : বিবিসি

একদলীয় শাসনব্যবস্থার দেশ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকর্তাদের অনুমোদনক্রমে ছাত্রবিক্ষোভে বলপ্রয়োগের ঘটনায় ১৯৮৯ সালে শত শত শিক্ষার্থী নিহত হন। ওই ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন ফেলেছিল। চীনের ইতিহাস থেকেও সেই বিক্ষোভ মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ছাত্রবিক্ষোভে বলপ্রয়োগের বিরোধিতার পর ঝাও জিয়াংকে পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তখন থেকে মৃতু্যর আগ পর্যন্ত গৃহবন্দি ছিলেন তিনি।

শুক্রবার ঝাও-এর দেহভস্ম সমাহিত করার অনুষ্ঠানে কেবলমাত্র পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের উপস্থিত থাকতে দেয়া হয়। শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থকদের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেয়া হয়নি। ঝাওয়ের মেয়ে ওয়াং ইয়ানান বলেন, 'আজ (শুক্রবার) পারিবারিক শেষকৃত্যের পর বাবা-মাকে সমাহিত করেছি। পারিবারিক আবহে ছোট একটি অনুষ্ঠান করা হয়েছিল।' এই শেষকৃত্যের কথা আগেভাগে ঘোষণা না করায় দুঃখ প্রকাশও করেন তিনি। ওয়াং ইয়ানান বলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চিত ছিলেন তারা।

ঝাও ঝিয়াংকে সামনের কাতারে নিয়ে আসেন চীনের সাবেক সর্বোচ্চ নেতা দেং জিয়াওপিং। অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে বাইরের পৃথিবীর কাছে নিজ দেশের বাজারকে উন্মুক্ত করতে সক্ষম নতুন নেতা খুঁজতে গিয়ে তিনি ঝাও ঝিয়াংকে পান। ১৯৮৭ সালে তাকে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বানানোর পর তার অবস্থান সুনিশ্চিত বলেই বিবেচিত হচ্ছিল। তবে দুই বছর পর শিক্ষার্থী আর বেইজিংয়ের বাসিন্দাদের এক বিক্ষোভে দলের অভ্যন্তরের বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

১৯৮৯ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি নিয়ে বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে জড়ো হয় লাখ লাখ মানুষ। বিক্ষোভ মোকাবিলায় উদার মনোভাবের পরিচয় দেওয়ার পক্ষে ছিলেন ঝাও জিয়াং। তবে বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে ছিলেন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য। দেং জিয়াওপিং তখন সেনা অভিযানের নির্দেশ দিয়ে এক সময়কার প্রিয়পাত্র ঝাও জিয়াংকে আটক করেন।

সাধারণত ব্যাপক আড়ম্বরে চীনের রাষ্ট্রীয় নেতাদের শেষকৃত্য হয়ে থাকে। ২০০৫ সালে ঝাও জিয়াং মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকেও শেষকৃত্য রাষ্ট্রীয় নেতা ও সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের মতো করেই আড়ম্বরে করার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে কর্মকর্তারা তার দেহভস্ম সমাহিত করতে দেয়ার অনুমতি দেয়নি। বাধ্য হয়ে তার দেহভস্ম বাড়ি নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। তবে অনেক বছর ধৈর্য ধারণের পর অবশেষে তার সন্তানরা বাবা-মাকে একসঙ্গে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে