বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-নেপাল দূরত্ব বাড়ছেই

নতুনধারা
  ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক

স্মরণাতীতকাল থেকে নেপাল আর ভারত ঐতিহাসিক, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। কিন্তু কিছু ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, নেপাল নিজেকে ভারতের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে শিথিল করার প্রচেষ্টা অবশ্য নতুন নয়। ১৯৬০ সালে দুই দেশের মধ্যে 'অভিন্ন বাজার' গঠনের যে চুক্তি হয়েছিল, ষাটের দশকেই সেটা বাতিল করে পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল। যেন সেটা যথেষ্ট হয়নি, তাই নেপাল সরকার ভারতের বাইরে তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য নতুন 'বাণিজ্য উদারীকরণ' নীতি গ্রহণ করেছিল। এটা ভিন্ন বিষয় যে, ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনায় না নেয়ায় এই নীতি কাজ করেনি। কিন্তু আবার একটা লম্বা সময় পর, বিভিন্ন খাতে আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে, যাতে নেপালকে ভারতের প্রভাব বলয় থেকে দূরে রাখা যায়।

উদাহরণ হিসেবে গত ৫ আগস্ট ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত করা হয়। পাকিস্তান ও চীন ছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ভারতের এ পদক্ষেপকে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়াতেও শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ ও ভুটান তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে। কিন্তু নেপাল এখন পর্যন্ত এই পদক্ষেপকে সমর্থন করেনি।

খুব বেশি দিন হয়নি, যখন নেপালের কিছু নেতা সার্কে চীনের সদস্য পদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। যদিও চীন দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ নয়। নেপাল সরকার ২০১৬ সালে চীনের 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়িটিভের' সঙ্গেও যুক্ত হয়েছে, যাতে এর অধীনে রেল ও সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ করে চীনের সঙ্গে আরও বেশি করে সংযুক্ত হওয়া যায় এবং ভারতের ওপর থেকে নির্ভরতা কমানো যায়।

সম্প্রতি নেপালের ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির একজন শীর্ষ নেতা চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই'র সঙ্গে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলেছিলেন, ইন্দো-প্রশান্ত কৌশলের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক নেই। যদিও জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে এই কৌশলের সঙ্গে ভারতও যুক্ত আছে। শুধু তাই নয়, নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (এনসিপি) দুই শতাধিক রাজনৈতিক নেতাকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক (জেনারেল সেক্রেটারি) শি জিনপিংয়ের চিন্তাধারা সম্পর্কে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে, যেটা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়।

২০১৯ সালে নেপাল সরকার ভারতীয়সহ সকল কর্মীর জন্য 'পার্মানেন্ট অ্যাকাউন্ট নাম্বার' (পিএএন) থাকাটা বাধ্যতামূলক করেছে, যেটা ভারতীয় কর্মীদের ওপর প্রভাব ফেলবে এবং নেপালে যে সব ভারতীয় ব্যবসায়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত, তাদের ওপরও প্রভাব ফেলবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, পূর্ব নেপালের বিরাটনগরে ভারতীয় দূতাবাসের যে ক্যাম্প অফিস ছিল, সেটাও ২০১৮ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০৮ সালে এই অফিসটি খোলা হয়েছিল, যখন ভয়াবহ বন্যায় নেপালের তেরাই এবং ভারতের বিহার অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

চলতি বছরের জুলাই মাসে কীটনাশক পরীক্ষার নামে ভারত থেকে সবজি ও ফলমূল আমদানি কমিয়ে দিয়েছে নেপাল। অন্যদিকে, ভারতের কোনো যানবাহন যেন বছরে ৩০ দিনের বেশি নেপালের ভেতরে থাকতে না পারে, সেজন্যও নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। এমনকি বাড়তি ফি (মাশুল) দিয়েও যানবাহনগুলো সেখানে থাকতে পারবে না। যেহেতু, নেপালে যানবাহনের খরচ অনেক বেশি, তাই এই পদক্ষেপ এক দেশ থেকে অন্য দেশে জনগণের যাতায়াতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে 'প্রতিবেশী প্রথম' নীতি ঘোষণা দেয়ার পরও নেপাল ও ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। নেপালে ভারতের প্রভাব মুছে দেয়ার জন্য কাঠমান্ডু সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের দিকে তাকালেই সেটা স্পষ্ট হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন দুই দেশের জন্যই সময় এসেছে, যাতে পরস্পরের মতপার্থক্য ঘোচানোর জন্য একটা ব্যবস্থা নেয়া হয়। তা না হলে, সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকলে সেটা উভয় দেশের স্বার্থের জন্যই ক্ষতিকর হবে। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71709 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1