শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সিরিয়ায় তুর্কি অভিযান

বাশারের হাতে কুর্দিদের হাত

তুরস্কের অভিযান রুখতে সেনা পাঠাচ্ছে দামেস্ক সরকার অভিযানের মধ্যেই বাকি সেনা সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বদলে গেছে সব সমীকরণ
যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
সিরিয়ার কুর্দি অধু্যষিত এলাকায় তুর্কি সামরিক যান

সিরিয়ার কুর্দি অধু্যষিত উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সামরিক অভিযানের মুখে চাপে পড়া কুর্দি গেরিলাদের সংগঠন 'সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস' (এসডিএফ) প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের সঙ্গে রোববার চুক্তি করে হাতে হাত মিলিয়েছে। চুক্তি অনুসারে, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে তাদের বিরুদ্ধে চলা তুরস্কের সামরিক অভিযান রুখতে সেখানে সেনাবাহিনী পাঠাতে বাশার সরকার সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে কুর্দিরা। ফলে তুরস্কের সঙ্গে সিরিয়ার সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষরা। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি

ওই এলাকার পরিস্থিতি 'অসমর্থনযোগ্য' হয়ে পড়েছে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সেখান থেকে অবশিষ্ট সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ওই এলাকায় যাচ্ছে। ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী এসডিএফ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র। কুর্দিরা ওই এলাকায় দীর্ঘদিনের অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সুরক্ষা হারানোর পর মিত্রপক্ষ পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছে, এই সমঝোতা চুক্তি থেকে এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে সিরীয় সরকার কুর্দিদের কী প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি।

তুরস্ক নিজের সীমান্তসংলগ্ন এলাকাগুলো থেকে কুর্দি বাহিনীগুলোকে হটিয়ে দিতে গত সপ্তাহ থেকে সিরিয়ায় উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। আঙ্কারা সমর্থিত সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনীগুলোও তুরস্কের এই অভিযানের অংশ হয়েছে। এরই মধ্যে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে তুরস্কের বাহিনীগুলো ব্যাপক গোলা ও বোমাবর্ষণ করেছে। প্রধান দুটি সীমান্তশহরে তুর্কি বাহিনী অগ্রগতিও অর্জন করেছে। দুই পক্ষের লড়াইয়ে বহু বেসামরিক ও উভয় পক্ষের বহু যোদ্ধা নিহত হয়েছে।

উত্তর সিরিয়ার কুর্দি নেতৃত্বাধীন প্রশাসন জানিয়েছে, সমঝোতার অংশ হিসেবে সীমান্তজুড়ে সিরিয়ার সেনাবাহিনী মোতায়েন করার কথা রয়েছে। সিরীয় সেনারা তুরস্কের 'আগ্রাসান প্রতিরোধে' এসডিএফকে সহযোগিতা করবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা। এই পদক্ষেপ 'আফরিনের মতো তুরস্কের বাহিনীর দখল করে রাখা অবশিষ্ট সিরীয় শহরগুলো মুক্ত করার পথও দেখাবে' বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। ২০১৮ সালে দুই মাসের এক অভিযানে তুরস্কের সামরিক বাহিনী ও তুরস্কপন্থি সিরীয় বিদ্রোহীরা কুর্দি যোদ্ধাদের হটিয়ে আফরিন দখল করে নেয়।

তুর্কি অভিযানের মধ্যেই বাকি

সেনা সরাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

এদিকে, তুরস্ক সিরিয়া অভিযানের আওতা দক্ষিণ-পশ্চিমে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করায় যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে বাদবাকি সেনাও প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেনারা এলাকা ছাড়ার প্রস্ততি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। 'এনবিসি নিউজ'কে ওই কর্মকর্তা বলেন, মাঠপর্যায়ে পরিস্থিতির দ্রম্নত অবনতি ঘটছে। জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের শত শত সমর্থক বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন বাহিনী সেখানে ঝুঁকির মধ্যে আছে। তাছাড়া, তুরস্কের সেনাদের সঙ্গেও মার্কিন সেনাদের সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে। আর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার রোববার 'সিবিএস নিউজ'র 'ফেস দ্য নেশন' অনুষ্ঠানে বলেছেন, 'প্রায় এক হাজার সেনা যত দ্রম্নত সম্ভব নিরাপদে ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাবে। তুরস্কের হামলা মোকাবিলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কুর্দি নেতৃত্বাধীন মিত্রবাহিনী এসডিএফ রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করার চেষ্টা করছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্ক এসপার।

তিনি বলেন, '২৪ ঘণ্টায় আমরা জানতে পেরেছি, তুর্কিরা আরও দক্ষিণ এবং পশ্চিমে এগিয়ে গিয়ে হামলার পরিকল্পনা করেছে। আর একই সময়ে আমরা এটাও জেনেছি, এসডিএফ উত্তরে তুর্কি হামলার পাল্টা জবাব দিতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করার চেষ্টা চালাচ্ছে।' সেখানকার পরিস্থিতি মার্কিন বাহিনীর জন্য খুবই নাজুক উলেস্নখ করে এসপার বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং তিনি উত্তর সিরিয়া থেকে সেনাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সেখানকার পরিস্থিতির সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সেইসঙ্গে সিরিয়ায় সক্রিয় বিদেশি শক্তিগুলোর প্রভাব-প্রতিপত্তির মাত্রাও নতুন করে স্থির হচ্ছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলে একদিকে যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাব কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে, রাশিয়া ও ইরান বাশার সরকারের মাধ্যমে সিরিয়ায় আরও প্রভাব বাড়াতে সক্ষম হচ্ছে।

তুরস্ক তার মিত্র দেশ রাশিয়া ও ইরানের মদদপুষ্ট বাশার প্রশাসনের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি কোনদিকে এগোবে, তা বলা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সতর্কবাণী সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান সীমান্তের দুই প্রান্তে কুর্দিদের দমন করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু সেই কাজ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় কার্যত একঘরে হয়ে পড়লে তুরস্কের স্বার্থ কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব, এরদোয়ানকে তার জবাবদিহি করতে হবে।

'পিস স্প্রিং' অভিযানের আওতায় সিরিয়ার মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এক 'নিরাপত্তা বলয়' সৃষ্টি করতে চায় তুরস্ক। কিন্তু অভিযানের শুরু থেকে অনেকে নিহত হয়েছে। এরমধ্যে বেসামরিক লোক থাকায় তুরস্কের ওপর চাপ বাড়ছে। মানুষ দলে দলে এলাকা ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। ফলে ইউরোপে আবারও শরণার্থী সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। ন্যাটো সদস্য দেশ হওয়া সত্ত্বেও তুরস্কের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তিকর। পরিস্থিতি যাতে আরও সংকটপূর্ণ না হয়ে ওঠে, সেই লক্ষ্যে কূটনৈতিক পর্যায়েও তুরস্কের ওপর চাপ বাড়ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সংকটের ফলে পরাজিত ও কোণঠাসা আইএস গোষ্ঠী আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এতদিন প্রায় ১২ হাজার আইএস জঙ্গি এসডিএফ বাহিনীর হাতে বন্দি ছিল। তুরস্ক তাদের দায়িত্ব নেয়ার ইঙ্গিত দিলেও কার্যক্ষেত্রে কী হবে, তা স্পষ্ট নয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71195 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1