শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
অবরুদ্ধ কাশ্মীর

স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানোর চেষ্টা

দুই সপ্তাহ পর উপত্যকায় খুলল সরকারি অফিস, ফাঁকা বেশিরভাগ স্কুল শ্রীনগরে রাতভর সংঘর্ষ আরও অস্থিরতার আশঙ্কা
যাযাদি ডেস্ক
  ২০ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
গত ৫ আগস্ট ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর সোমবার কিছু স্কুল, সব সরকারি অফিস খুললেও তাতে কোনো স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল না। বেশিরভাগ স্কুলেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। জম্মুর একটি স্কুলের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থীর এই চিত্রই বলে দিয়েছে সব অচল হয়ে আছে -এনডিটিভি

দুই সপ্তাহ টানা 'ঘরবন্দি' থাকার পর স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকা। সোমবার কিছু স্কুল, সব সরকারি অফিস খুললেও তাতে যেন স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব। অধিকাংশ স্কুলেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বাড়িতে রেখে দেয়ায় স্কুলগুলোর অধিকাংশ শ্রেণিতেই কোনো শিক্ষার্থী ছিল না। আর সরকারি অফিসেও হাজিরা ছিল নামমাত্র। কারফিউ উঠলেও মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া নজরদারি বহাল ছিল। মোবাইল-ইন্টারনেটও বন্ধ ছিল এদিন। গ্রেপ্তার হওয়া শতাধিক রাজনৈতিক নেতাকে ছাড়া হয়নি। সব মিলিয়ে শ্রীনগরসহ উপত্যকাজুড়ে এখনও থমথমে পরিবেশ। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, ইনডিয়ান এক্সপ্রেস, পিটিআই, রয়টার্স

প্রশাসনের পক্ষ থেকে শনিবারই ঘোষণা করে দেয়া হয়েছিল, সোমবার থেকে সব সরকারি অফিসে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হবে। তালা খুলবে উপত্যকার প্রায় ২০০ স্কুলের। সোমবার দেখা গেছে, সরকারি অফিসে কর্মীদের হাজিরা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। তার চেয়েও নগণ্য সাধারণ মানুষের উপস্থিতি। হাতে গোনা দুই-একজন কাজে এসেছিলেন কিছু অফিসে। তার বাইরে সিংহভাগ অফিস ছিল সুনসান।

স্কুলগুলোর অবস্থা ছিল আরও শোচনীয়। শ্রীনগরের ৯০০ স্কুলের মধ্যে খুলেছিল মাত্র ১৯৬টি। কিন্তু সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত কম। শিক্ষকদের হাজিরাও পর্যাপ্ত ছিল না। ফলে অনেক স্কুলে নির্ধারিত সময়ের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। ওইসব স্কুলে শিক্ষকরাও বাড়ির পথ ধরেছেন নির্ধারিত সময়ের আগেই। একজন শিক্ষার্থীও আসেনি, এমন স্কুলও রয়েছে কয়েকটি। তবে বেসরকারি কোনো স্কুল খোলেনি। গত দুই দিনে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের জেরে অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে রাজি হননি। শুধুমাত্র বেমিনাতে পুলিশ পাবলিক স্কুল এবং কয়েকটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা বেশি ছিল। একটি স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর বাবা গুলজার আহমেদ বলেন, 'কীভাবে আমরা সন্তানদের জীবনের ঝুঁকি নেব?' তিনি বলেন, 'গত সপ্তাহগুলোতে সেনারা ছোট ছোট শিশুদেরও গ্রেপ্তার করেছে এবং কয়েকটি শিশু আহতও হয়েছে। বাড়ির ভেতরে শিশুরা নিরাপদ আছে। তারা স্কুলে গেলে কে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে?'

শ্রীনগরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শাহিদ ইকবাল বলেন, 'নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করার পর কিছু স্কুল খুলে দেয়া হয়েছিল। অভিভাবকদের কাছে আমরা আবেদন জানিয়েছি, যেসব স্কুল খুলেছে, সেখানে যেন নির্ভয়ে সন্তানদের পাঠান। নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের।' কিন্তু সেই আশ্বাস এবং আবেদনে যে তেমন কাজ হয়নি, উপস্থিতির হারেই তার প্রমাণ।

কেন কাজ হয়নি, উপত্যকার সামগ্রিক চিত্রটা বোঝার চেষ্টা করলেই তার উত্তর মিলবে। জম্মু-কাশ্মীর শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে বলে প্রশাসন যতই দেখানোর চেষ্টা করুক, বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যে চলছেই, তার প্রমাণ মিলেছে রোববার রাতেও। শ্রীনগরে রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে নিরাপত্তা কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে। তার জেরে শ্রীনগরের বেশকিছু এলাকায় ফিরে এসেছে কারফিউয়ের মতো পরিস্থিতি। মোবাইল-ইন্টারনেট চালু করেও বহু জায়গায় ফের বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে প্রশাসনের দাবি, উপত্যকার এক-তৃতীয়াংশ ল্যান্ডলাইন খুলে দেয়া হয়েছে। যদিও তার সঙ্গে বাস্তবের খুব একটা মিল খুঁজে পায়নি কাশ্মীরিরা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কয়েক দফা পর্যালোচনা করার পরই মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে প্রশাসনের শীর্ষ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। যদিও নির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ এখনো জানানো হয়নি।

জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুলস্নাহ ও মেহবুবা মুফতিসহ যে শতাধিক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে, তাদের এখনো ছাড়া হয়নি। কবে ছাড়া হবে, সে বিষয়েও মুখ খুলতে চাইছেন না প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যসচিব রোহিত কানসাল বলেন, পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরই দীর্ঘস্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হবে। দুই-তিনটি বিক্ষোভের ঘটনার কথা স্বীকার করেও কানসালের দাবি, মাত্র দু'জন সামান্য আহত হয়েছেন। তবে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বিলোপ করায় ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের জেরে আরও অস্থিরতা দেখা দিতে বলে আশঙ্কা করছেন ?শ্রীনগরের বাসিন্দারা।

উলেস্নখ্য, গত ৫ আগস্ট এক ঘোষণায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অঞ্চলটিকে পুরোপুরি ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দেয়। এরপর সেখানে নিরাপত্তা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। তখন থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63064 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1