বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রস্তাবিত বহিঃসমর্পণ বিল

চীনবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হংকং

'পাস হলে হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে'
যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ জুন ২০১৯, ০০:০০
বহিঃসমর্পণ বিলের বিরুদ্ধে হংকংয়ের প্রতিবাদকারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি বুধবার সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। হংকংয়ের সরকারি দপ্তরগুলোর আশপাশের প্রধান প্রধান সড়কে অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ এদিন তাদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে, এর পাল্টায় বিক্ষোভকারীরাও পুলিশের দিকে ইট-পাথর ছোড়ে -ডেইলি মেইল

বিচারের জন্য লোকজনকে চীনের মূল ভূখন্ডে পাঠানোর সুযোগ রেখে প্রস্তাবিত একটি বহিঃসমর্পণ বিলের বিরুদ্ধে হংকংয়ের হাজার হাজার বাসিন্দা রাস্তায় নেমে এসেছে। প্রতিবাদকারীরা বুধবার হংকংয়ের সরকারি দপ্তরগুলোর আশপাশের প্রধান প্রধান সড়কে অবস্থান নেয়ায় শহরের অর্থনৈতিক কেন্দ্রস্থলটি অচল হয়ে পড়েছে। তবে ব্যাপক আন্দোলনের মধ্যেই গত সোমবার অঞ্চলটির শাসক বেইজিংপন্থি হিসেবে পরিচিত ক্যারি ল্যাম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলে কোনো কাটছাঁট করা হবে না। বুধবার তার কার্যালয়-সংলগ্ন রাস্তায়ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিক্ষুব্ধ মানুষ। এ সময় সেখানে মোতায়েন দাঙ্গা পুলিশের শত শত সদস্য তাদের আর সামনে অগ্রসর না হওয়ার হুশিয়ারি দেয়। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি

পরিস্থিতি সামলাতে হংকংয়ের ৭০ আসন বিশিষ্ট আইন পরিষদ বিতর্কিত এ বহিঃসমর্পণ বিল নিয়ে দ্বিতীয় দফার বিতর্ক স্থগিত করেছে। বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা থেকে এ বিতর্ক শুরু হওয়ার কথা ছিল। আইন পরিষদ বলেছে, বিতর্কের নতুন সময় সদস্যদের পরে জানিয়ে দেয়া হবে। আগামী সপ্তাহেই এ বিলটি নিয়ে চূড়ান্ত ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। বেইজিংপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় আইন পরিষদে এটি সহজেই পাস হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উলেস্নখ্য, ২০১৮ সালের এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিলটি তৈরি করা হয়। তাইওয়ানে ছুটি কাটানোর সময় অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে হংকংয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে হংকংয়ের বন্দি বিনিময়ের কোনো চুক্তি না থাকায় সেই ব্যক্তিকে এখন তাইপেতে বিচারের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না। কিন্তু এখন তাইওয়ানও জানিয়েছে, সন্দেহভাজন সেই খুনের মামলার আসামিকে ফেরত নিতে চায় না তারা। কেননা এটি এমন এক উদাহরণ তৈরি করবে, যা চীন ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে।

চীন ও তাইওয়ানে অপরাধী প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত এই বিলের বিপক্ষেই বিক্ষোভে উত্তাল হংকং। তবে বিক্ষোভকারীদের মূল ক্ষোভ চীনের সঙ্গে এ ধরনের সমঝোতা নিয়ে। বেইজিংয়ের দুর্বল আইন এবং মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে সেখানে কাউকে ফেরত পাঠানো নিরাপদ মনে করছে না হংকংয়ের সাধারণ মানুষ। তারা মনে করছে, বিলটি পাস হলে তা হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে।

হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল পর্যন্ত অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন, স্বাধীনতা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা অটুট রাখার প্রতিশ্রম্নতি আদায় করে নিয়েছিল। হংকংয়ের কারণেই চীনকে 'এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনা' নীতিতে চলতে হচ্ছে। ১৫০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে থাকার পর লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষে ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই অঞ্চলটি চীনের কাছে ফেরত দেয়া হয়। তখন যুক্তরাজ্যকে প্রতিশ্রম্নতি দিলেও নিজেদের ভূখন্ডভুক্ত হওয়ার পর থেকেই বেইজিং হংকংয়ের গণতান্ত্রিক সংস্কারে বাধা, স্থানীয় নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও বিরোধীদের ওপর দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ সমালোচকদের। তবে চীন শুরু থেকেই তাদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। হংকংয়ের এ সপ্তাহের বিক্ষোভে 'বিদেশি শক্তির ইন্ধন'ও দেখছে চীনের গণমাধ্যমগুলো। বহিঃসমর্পণ বিল নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে বিদেশি শক্তি চীনের ক্ষতি করতে চাইছে বলে দাবি তাদের।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বুধবার ভোররাত থেকেই হংকংয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন বিক্ষোভে যোগ দেয়ার জন্য আসতে শুরু করে। শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও ধর্মঘট শুরু করার প্রস্তুতি নিতে থাকে। প্রস্তাবিত বিলটি নিয়ে জনগণের উদ্বেগ প্রশমিত করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন ক্যারি লাম। তিনি জানিয়েছেন, তার প্রশাসন বিলটিতে অতিরিক্ত সংশোধনী এনে তাতে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করবে।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া বেশিরভাগই তরুণ ও শিক্ষার্থী। হংকংয়ের ব্যবসায়ীরাও বহিঃসমর্পণ বিলের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। কর্মীদের বিক্ষোভে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিতে বুধবার শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের অফিসগুলো বন্ধ রাখারও ঘোষণা দেয়। ধর্মঘটে শামিল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রায় চার হাজার শিক্ষকও। প্রতিবাদকারীরা যেখানে জড়ো হয়েছেন, তার খুব কাছেই হংকং সাংহাই ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কিছু কোম্পানির কার্যালয়।

বিরোধী আইনপ্রণেতা হুই চি ফাং বলেন, সরকার বহিঃসমর্পণ বিলটি জোর করে পাস করতে চাইছে, এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে তরুণরা এখানে এসেছে। কালো মুখোশ ও দস্তানা পরা এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'বিলটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা সরছি না। ক্যারি লাম আমাদের অবমূল্যায়ন করেছেন। আমরা তাকে বিলটি পাস করতে দেব না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53262 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1