বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
শ্রীলংকায় সন্ত্রাসী হামলা

কট্টরপন্থিদের হাতকেই শক্তিশালী করবে

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার লক্ষ্যেই চালানো হয়েছে হামলার হোতারা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছে
যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
ইস্টার সানডেতে ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন যখন প্রার্থনা করছিলেন, তখন শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর সেইন্ট অ্যান্থনি গির্জায় চালানো হয় ভয়াবহ হামলা। বিস্ফোরণের প্রচন্ডতায় সেখানে থাকা মাতা মেরির মূর্তি এভাবে দুই টুকরা হয়ে যায় -রয়টার্স

শ্রীলংকায় ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলার পর নানা ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব শোনা যাচ্ছে, কারা আছে এই হামলার পেছনে তা নিয়ে। কিন্তু কোনো সঠিক দিশা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকরা এই হামলার কারণ নিয়ে কিছু বিশ্লেষণ করেছেন।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা: প্রথমেই প্রশ্ন উঠেছে, দেশটিতে এই হামলা চালানোর পেছনে কারণ কী? দেশটির অতীত সহিংসতা বিদীর্ণ হলেও বছর দশেক আগে এলটিটিইর পতনের পর স্থিতিশীলতার পথে অনেকটাই এগিয়েছিল তারা। মাঝেমধ্যে সাম্প্রদায়িক হানাহানি যে একেবারেই হয়নি তা নয়, কিন্তু তা এত ব্যাপক মাত্রায় ঘটেনি। তাই ২১ এপ্রিলের এই হামলা যে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার লক্ষ্যে চালানো হয়েছে, তা নিয়ে বিশেষ সন্দেহের অবকাশ নেই। যদিও শ্রীলংকায় এলটিটিই ও সরকারের সংঘাতের সময়ও অসংখ্য হানাহানির ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু সেই সংঘাতের সঙ্গে এই হামলার মিল কম। বরং এই হামলার সঙ্গে অনেক বেশি মিল রয়েছে আজকের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কাজের ধরনের সঙ্গে। যেমন আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস) যেভাবে হামলা চালায়। কিন্তু কিছু শ্রীলংকান আইএসে যোগ দিলেও ওই জঙ্গি সংগঠনের দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে উপস্থিতির কোনো উলেস্নখ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল শ্রীলংকার মাটিকে ফের নড়বড়ে করে ফেলা। দেশটিতে খ্রিস্টান এবং মুসলমান- এই দুই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ইদানিংকালে রেষারেষি বেড়েছে। পাশাপাশি, বৌদ্ধ সংখ্যাগুরু দেশটিতে জাতীয়তাবাদী জিগিরও শক্তিশালী হয়েছে। গত বছর, একটি মসজিদে বৌদ্ধ সমর্থকরা আক্রমণ চালানোর পর পরিস্থিতি বেশ খারাপ হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে, রাষ্ট্র কড়া হয়ে নাগরিক অধিকার ইত্যাদির ওপরে খড়গহস্ত হলে যে কায়েমি স্বার্থের সুবিধা, সে নিয়ে বিশেষ সন্দেহ নেই।

বিদেশিদের হত্যায় আন্তর্জাতিক দৃষ্ট আকর্ষণ: শ্রীলংকার অর্থনীতি অনেকটাই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। আর রোববারের হামলার ধরন, যেখানে লক্ষ্য করা হয়েছে সাধারণ মানুষ, এমনকি বড় হোটেলগুলোকেও, তাতে এটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না যে, একদিকে দেশটির অর্থনীতির ওপর আঘাত হানা ও অন্যদিকে বিদেশি পর্যটকদের হত্যার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এই হামলার হোতারা এভাবে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছে।

তবে সবচেয়ে বড় কারণটি হলো রাজনৈতিক। বর্তমানে শ্রীলংকার নেতৃত্ব বিভক্ত এবং দুর্বল। গত বছর ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রবল জনপ্রতিক্রিয়ায় বিক্রমাসিংহেকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন সিরিসেনা। কিন্তু দু'জনের মধ্যে সম্পর্ক যে স্বাভাবিক হয়েছে, সে কথা এখনো জানা যায়নি। ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহিন্দা রাজাপাকসেকে হারাতে হাত মিলিয়েছিলেন সিরিসেনা এবং বিক্রমাসিংহে। কিন্তু এখন এই দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়েছে যে, দেশের মানুষ সরকারের মধ্যে বিভাজন এবং সিরিসেনার অকর্মন্যতা নিয়ে বেশ বিরক্ত। রোববারের হামলা নিয়ে নাকি গোয়েন্দারা দিন দশেক আগেই সাবধান করেছিল কর্তৃপক্ষকে। তারপরও এই অঘটন থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রীলংকার সংবাদমাধ্যম থেকে সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহেও এই ঘটনাটিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে পরোক্ষভাবে সিরিসেনা প্রশাসনকেই দুষছেন। শ্রীলংকার বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থা যে সন্ত্রাসীদের আরও উদ্বুদ্ধ করেছে, তা নিয়েও কোনো দ্বিমত নেই। আর এর ফলে যে রাজাপাকসের মতো কট্টরপন্থি নেতাদের হাত আরও শক্ত হবে সে নিয়ে সন্দেহ নেই।

সংবাদসূত্র : ওয়ান ইনডিয়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46416 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1