বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রতিবেদনে দাবি

মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের প্রমাণ নেই

রুশ সংযোগের তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে রবার্ট মুলারকে দায়িত্ব থেকে পদচু্যতি করার চেষ্টা করেছিলেন বলে প্রমাণ মিলেছে
যাযাদি ডেস্ক
  ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

রবার্ট মুলারের বহুল প্রতিক্ষীত তদন্ত প্রতিবেদনে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে রাশিয়ার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবিরের আঁতাতের প্রমাণ না পাওয়া গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিশেষ কাউন্সিলর রবার্ট মুলারকে তদন্তের দায়িত্ব থেকে পদচু্যত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে প্রমাণ মিলেছে এবং ট্রাম্প-রুশ সংযোগ নিয়ে জনমানসে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ২৩ মাসের তদন্ত শেষে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে আনা হয়। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি

২০১৬ সালের নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনে রুশ সংযোগের বিষয়টি অনেকদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে। নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতাতে মস্কো প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছিল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে আশঙ্কা করছিলো সে দেশের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই। সংস্থাটির পরিচালকের পদ থেকে জেমস কোমিকে বরখাস্তের পর এই তদন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের দিকে মোড় নেয়। ২০১৭ সালের মে মাসে এ সংক্রান্ত তদন্তের দায়িত্ব পান সাবেক এফবিআই পরিচালক রবার্ট মুলার। মার্চে দেশটির আইনমন্ত্রীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার প্রায় সাড়ে চারশ' পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জনসম্মুখে আনা হয়। প্রতিবেদনটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমভাগে রয়েছে নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত আলোচনা। বহুল প্রতিক্ষীত প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সে দেশের গোয়েন্দারা মার্কিন নির্বাচন প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। হিলারি ক্লিন্টনকে হারিয়ে ট্রাম্পকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত ছিল ক্রেমলিন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রুশ উদ্দেশ্য সফল করতে ট্রাম্পের প্রচারণা দলের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি তাদেরকে ট্রাম্প-পুতিন কথোপকথন, দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন, রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দেয়া হয়। উইকিলিকস কর্তৃক হিলারি ক্লিন্টন ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইমেইল ফাঁসেও রাশিয়ার সংযোগ পেয়েছেন মুলার।

এদিকে, মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে রবার্ট মুলারের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রচারণা শিবির বারবারই বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছেন। এ ধরনের ১১ বারের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সেই সঙ্গে এ ধরনের কর্মকান্ডকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে একে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে কংগ্রেসের প্রতি পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

প্রতিবদন অনুযায়ী বিচার বাধাগ্রস্ত করার যেসব প্রচেষ্টা হয়েছে, তার মধ্যে আছে: মুলারকে বরখাস্ত করতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা, ট্রাম্পের নির্দেশে সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির বরখাস্ত হওয়া, মুলারের তদন্তের পর্যালোচনা ছিনিয়ে নিতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা। মুলারকে যে ট্রাম্প বরখাস্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তা অস্বীকার করতে হোয়াইট হাউসের কাউন্সেল ডোনাল্ড ম্যাঘানের প্রতি ট্রাম্পের নির্দেশ; মাইকেল ফ্লিন, পল মানাফোর্ট এবং মাইকেল কোহেনসহ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত সহযোগীদের প্রতি ট্রাম্পের আচরণ।

প্রতিবেদনের প্রথমভাগে রয়েছে নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত আলোচনা। বহুল প্রতিক্ষীত প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি, প্রচারণায় সহায়তার প্রস্তাব, পুতিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো, রুশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ট্রাম্পর প্রচারণা দলের বৈঠক, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কোন্নয়নে নীতিগত আলাপের প্রচেষ্টা ছিল। উইকিলিকস কর্তৃক হিলারি ক্লিন্টন ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইমেইল ফাঁসেও রাশিয়ার সংযোগ পেয়েছেন মুলার।

মুলারের প্রতিবেদনে ট্রাম্পের প্রচারণা দলে থাকা ব্যক্তিদের একাংশের সঙ্গে রুশ সরকারের প্রতিনিধিদের বেশকিছু সংযোগ খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে প্রাপ্ত আলামত ট্রাম্প শিবিরকে অপরাধী প্রমাণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নয়। ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির যে রুশ সরকারের সঙ্গে নির্বাচনি হস্তক্ষেপের ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল কিংবা এ সংক্রান্ত সহযোগিতা দিয়েছে, তা তদন্তে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। মুলার বলেছেন, 'আমার যেটুকু আইনি স্বাধীনতা ছিল, তাতে রুশ হস্তক্ষেপের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রচারের সম্পর্ক ছিল কি না, বলা সম্ভব নয়।'

মুলার বলেছেন, 'তদন্তকারীদের সামনে এমন কিছু কঠিন পরিস্থিতি ছিল যার ফলে সত্যিই বলা মুশকিল যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ হস্তক্ষেপ বিষয়ে তদন্তে বাধা দিয়েছিলেন কি না। কংগ্রেস চাইলে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যেতে পারে।' ২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের রুশ সংযোগের তদন্ত প্রতিবেদন হোয়াইট হাউস খতিয়ে দেখেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ওই প্রতিবেদন নিয়ে এরইমধ্যে দেশটির বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে হোয়াইট হাউস। সংবাদসূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস

এর মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউসের তৎপরতার খবর সামনে এলো। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্পকে আইনি সুবিধা দেয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই ওই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করেছে হোয়াইট হাউস। তবে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন হোয়াইট হাউস এবং বিচার বিভাগের মুখপাত্র।

২০১৯ সালের ২৩ মার্চ বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলার ট্রাম্পের রুশ সংযোগ সংক্রান্ত এ তদন্ত প্রতিবেদন বিচার বিভাগে জমা দেন। তবে শুরু থেকেই ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে এ তদন্তের সমালোচনা করা হচ্ছিল। মুলারকে অনির্বাচিত একজন ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে দফায় দফায় প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প।

অন্যদিকে, ২০১৬ সালের নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনে রুশ সংযোগের বিষয়টি অনেকদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে। নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতাতে মস্কো প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছিল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকে বরখাস্তের পর এই তদন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের দিকে মোড় নেয়। তবে ট্রাম্পের পাশাপাশি রাশিয়াও বরাবরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে তদন্তকারী রবার্ট মুলারের প্রতিবেদন নিয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ৪২০ জন আইনপ্রণেতা কংগ্রেস ও জনগণের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনটি উন্মুক্ত করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ওই প্রস্তাবের বিপক্ষে কোনও ভোট পড়েনি। তদন্ত প্রতিবেদন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেছেন, 'এটা বাইরে আসতে দিন। মানুষকে দেখতে দিন। তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দেয়া হবে কি না, সেটা নির্ভর করছে আইনমন্ত্রীর ওপর। আমরা দেখব কী ঘটে। আমরা দেখব এটা ন্যায়সঙ্গত কি-না।' অতীতের ধারাবাহিকতায় ট্রাম্প মুলারের তদন্ত কর্মের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেছেন, 'আমাদের দেশের ইতিহাসে আমার জয় ছিল সবচেয়ে বড় নির্বাচনি সাফল্যগুলোর একটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46057 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1