বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
ভারতে আগামী লোকসভা নিবার্চন

মোদি ঠেকাতে রাহুলের হাতে সময় খুবই কম

কংগ্রেস তাদের ভাবনায় নতুন কিছু আমদানি করতে পারেনি। তারা এখনো সেই হিন্দুধমর্ বনাম হিন্দুত্বের ভাবনা নিয়েই খেলছে, রাহুল গান্ধী একের পর এক মন্দিরে গিয়ে মাথা ঠেকাচ্ছেন। কিন্তু এতেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে মোদি-শাহ জুটিকে সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো কিছু হচ্ছে বলে মনে হয় না...
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী দেশটির আগামী লোকসভা নিবার্চনে নরেন্দ্র মোদিকে কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবেন, সেটা নিয়ে আবার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

গত ছয় মাসের মধ্যে প্রথমে গুজরাটে ও পরে কণার্টকে যেভাবে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস প্রচার চালিয়েছে এবং মোটামুটি ভালোই ফল করেছেÑ এতে অনেকেই বলছেন, কংগ্রেস সভাপতি তার ‘উদাসীন রাজনীতিক’র তকমা এতদিনে অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতেও তিনি এখন বেশ সক্রিয়Ñ রাজনৈতিক জনসভাতেও প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ করছেন বারবার। কিন্তু মোদি-অমিত শাহ জুটিকে বিপদে ফেলতে হলে রাহুল গান্ধীকে যে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, সেটা নিয়েও পযের্বক্ষকদের কোনো সংশয় নেই।

কিছুদিন আগে দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে এক রাজনৈতিক সভায় রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, পালাের্মন্টে দঁাড়িয়ে মাত্র ১৫ মিনিট বলার সুযোগ পেলে তিনি প্রতিরক্ষা বা ব্যাংকিং খাতে দুনীির্ত নিয়ে সরকারকে এমন আক্রমণ করবেন যে, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ভয়ে সেখানে দঁাড়াতেই পারবেন না’। মোদি নিজে এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে পরে রাহুলকে ব্যঙ্গবিদ্রƒপ করেছেন, এমনকি তার দলও ভারতের প্রধান বিরোধী নেতাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে ছাড়েনি।

বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের কথায়, ‘১৫ বছর ধরে যিনি এমপি, তিনি আজ মাত্র ১৫ মিনিট বলতে চান। আসলে গত ১৫ বছর ধরে কাগজে লিখে রিহাসার্ল দিচ্ছেন মায়ের সামনে, বলছেন দেখো তো মাম্মি ঠিক হলো কিনা! এখনো পাস করতে পারেননি। যে ১৫টি লাইনঅবধি ঠিকমতো লিখতে পারে না, তার মুখে এ রকম হুমকি মানায় না!’

বিজেপি অবশ্য রাহুল গান্ধীকে নিয়ে এ ধরনের তাচ্ছিল্য করে আসছে বহুদিন ধরেই। ‘পাপ্পু’ বলতেই উত্তর ভারতে যে বোকাসোকা, অপদাথর্ লোককে বোঝানো হয়, সেই নামে রাহুল গান্ধীকে ডাকার পেছনেও বিজেপি ও তাদের তথ্যপ্রযুক্তি সেলের বড় ভ‚মিকা রয়েছে। তবে দিল্লির সিনিয়র সাংবাদিক সোমা চৌধুরী বলেন, গত কয়েক মাসে রাহুল গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে নিজের সেই ইমেজ অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। তিনি বলেন, আগে মনে হতো, তিনি একজন সাময়িক, ‘ড্রপ ইন-ড্রপ আউট’ রাজনীতিক। কথায় কথায় বিভিন্ন পাটিের্ত চলে যেতেন, বিদেশে ছুটি কাটাতে যেতেন। লোকজনের সঙ্গে সম্পকর্ও রাখতেন না। কিন্তু গুজরাট নিবার্চনের সময় থেকেই দেখা যাচ্ছে তার কথাবাতার্, আচরণে বেশ ধারাবাহিকতা চলে এসেছে। পিআর ম্যানেজমেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল সবই আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে।

অথার্ৎ, রাজনীতিতে তিনি একটা উপযুক্ত চরিত্র ও কণ্ঠস্বর হিসেবে উঠে আসতে চেষ্টা করছেন, যেটা মোদির সঙ্গে টক্কর দিতে পারে। এটা যে তার জন্য নতুন তরতাজা একটা ‘লুক’ সন্দেহ নেই। কিন্তু এতে রাহুল গান্ধীর ব্যক্তিগত ‘মেকওভার’ হলেও দলের জন্য কিন্তু কোনো মেকওভার হয়নি বলে জানান সোমা চৌধুরী।

কন্নড় অভিনেত্রী রাম্যা তথা দিব্যা স্পন্দনাকে রাহুল গান্ধী সম্প্রতি দলের সোশ্যাল মিডিয়া দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন; তিনিও বলেন, যারাই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন, তারাই তার রসবোধ, জ্ঞানের পরিধি সম্পকের্ অবহিত। রাম্যা বলেন, এখন সেটাই তিনি টুইটারে বের করে আনছেন, যেটা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তার আগে একটা দ্বিধা ছিল।

তরুণ কংগ্রেস এমপি ও রাহুল গান্ধীর ‘ইয়ং ব্রিগেড’র সদস্য মৌসম বেনজির নূরও মনে করেন, ‘শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতেই নয়, রাজনীতিতেও তাদের নেতা দারুণভাবে উঠে এসেছেন। বিভিন্ন জায়গায় কংগ্রেসের অবস্থা ভালো হচ্ছে। গুজরাটে খুব কম মাজিের্নই আমরা হেরেছিলাম। আর কণার্টকেও কিন্তু ফল খুব একটা খারাপ হয়নি। যদি কেউ মোদিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, তাহলে রাহুলজিই সেটা পারবেন, তার নেতৃত্বের ওপর আমাদের পূণর্ আস্থা আছে।’

কিন্তু রাহুল গান্ধী রাজনীতি নিয়েই ‘সিরিয়াস’ নন, তার কথাবাতার্র কোনো গুরুত্ব নেইÑ এই চিত্রটা কি আদৌ পাল্টাচ্ছে? নূর বলেন, ‘অবশ্যই পাল্টাচ্ছে। রাজনীতির বাইরের বহু লোকের সঙ্গেও আমার কথা হয়, তারা সবাই বলছেন, রাহুলজির মধ্যে অনেক পরিবতর্ন এসেছে। যদি কেউ পারেন তাহলে তিনিই পারবেন। যেমন ধরুন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপিরই প্রাধান্য ছিল। কিন্তু সেখানেও এখন রাহুলজির নেতৃত্বে আমরাই এজেন্ডা ঠিক করছি, বিজেপিকে তা ডিফেন্ড করতে হচ্ছে।’

তবে কণার্টকে কংগ্রেস তাদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ার পর বিজেপি এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছে, রাহুল গান্ধী দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই নিয়ে কংগ্রেস মোট ২৭টা নিবার্চনে হারল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোমা চৌধুরী বলেন, মোদি-অমিত শাহর টক্কর নিতে হলে রাহুল গান্ধীকে আরও অনেক কিছু করতে হবে। তার মতে, ‘মোদির মতো রাজনীতিক, আর অমিত শাহ্র মতো কৌশলবিদÑ এই জুটির মোকাবেলা করতে হলে যে ধরনের কমর্কাÐ দরকার, অনেক বছর বা অনেক মাস আগে থেকে পরিকল্পনা করে এগোনো দরকার, রাহুল গান্ধীর মধ্যে সেটা এখনো দেখছি না। অমিত শাহ যেমন ভোটের আগে একটা রাজ্যে ঘঁাটি গেড়ে বসে পুরো সংগঠনটিকে কিকস্টাটর্ করে দেন, সে রকম কিছু কংগ্রেসে হচ্ছে কোথায়?’

‘এ ছাড়া কংগ্রেস তাদের ভাবনায় নতুন কিছু আমদানি করতে পারেনি। তারা এখনো সেই হিন্দুধমর্ বনাম হিন্দুত্বের ভাবনা নিয়েই খেলছে, রাহুল গান্ধী একের পর এক মন্দিরে গিয়ে মাথা ঠেকাচ্ছেন। কিন্তু এতেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে মোদি-শাহ জুটিকে সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো কিছু হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না।’ বলেন সোমা।

ফলে নিধাির্রত সময় ভোট হলে ভারতে সাধারণ নিবার্চনের আর বছরখানেকও বাকি নেই। সেই ভোটে প্রধানমন্ত্রীর পদে বিরোধী শিবিরের সবর্সম্মত প্রাথীর্ হয়ে উঠতে হলে রাহুল গান্ধীর এখনো অনেক কাজ বাকি, কিন্তু সময় হাতে খুবই কম। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<3844 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1