মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নিমাের্ণর জন্য জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করতে যাচ্ছেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডাসর্ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সরকারের ‘শাটডাউন’ বা অচলাবস্থা এড়াতে শুক্রবার ট্রাম্প একটি সীমান্ত নিরাপত্তা বিলে স্বাক্ষর করবেন। কংগ্রেসকে পুরোপুরি পাশ কাটিয়ে দেয়াল নিমাের্ণর জন্য সামরিক তহবিল ব্যবহার করবেন তিনি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্
সারাহ স্যান্ডাসর্ বলেন, ‘আগে যেমনটা বলেছিলেন, সেই মতোই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরকারি অথার্য়ন বিলে স্বাক্ষর করবেন। জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্তে মানবিক সংকট বন্ধ নিশ্চিত করতে তিনি জরুরি অবস্থা জারিসহ অন্যান্য নিবার্হী পদক্ষেপ নেবেন। সীমান্ত সুরক্ষা ও আমাদের মহান দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রেসিডেন্ট আবারও তার সীমান্তে দেয়াল নিমার্ণ প্রতিশ্রæতি পূরণে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।’
সীমান্তে দেয়াল নিমাের্ণর প্রশ্নে অনড় অবস্থানে রয়েছেন ট্রাম্প। গত ১১ ফেব্রæয়ারি টেক্সাসে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেছেন, যেকোনোভাবেই হোক, দেয়ালটি নিমার্ণ করা হবেই। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নিমাের্ণর জন্য ডেমোক্রেটরা ট্রাম্পকে প্রায় ১৪০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিতে সম্মত হয়েছে। এর মানে হলো ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২১৫ মাইল এলাকাজুড়ে কংক্রিটের দেয়াল নিমাের্ণর কথা থাকলে বরাদ্দকৃত অথর্ দিয়ে ৫৫ মাইল জায়গায় ধাতব পাত দিয়ে বেড়া নিমার্ণ করা সম্ভব হবে।
অবৈধ অভিবাসন রুখতে প্রেসিডেন্ট নিবার্চনের প্রচারে সীমান্তে যেকোনো মূল্যে স্থায়ী বেষ্টনী নিমাের্ণর প্রতিশ্রæতি ছিল ট্রাম্পের। নিমার্ণকাজ শুরু করতে চলতি বছর কংগ্রেসের কাছে ৫৭০ কোটি ডলারও চেয়েছিলেন তিনি।
ডেমোক্রেটদের সঙ্গে এ নিয়ে মতদ্বৈততায় গত বছরের শেষ থেকে টানা ৩৫ দিন কেন্দ্রীয় সরকারের এক-চতুথার্ংশ বিভাগ ও সংস্থায় ‘অচলাবস্থা’ দেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আরেক দফা অচলাবস্থার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে দেয়ালের জন্য ১৩০ কোটি ডলারের বরাদ্দ দিয়ে ফেব্রæয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে কংগ্রেস সদস্যরা নতুন একটি চুক্তিতে পেঁৗছলেও সেটা ট্রাম্পের মন মতো না হওয়ায় ‘জরুরি অবস্থা’ জারির সম্ভাবনা প্রকট হয়ে ওঠে। বুধবার মাকির্ন প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের রিপাবলিকান-ডেমোক্রেট সদস্যদের মধ্যে সমঝোতায় ‘অখুশি’র কথা জানিয়েছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী, এ-সংক্রান্ত বিলটি সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়ার পর এতে স্বাক্ষর করবেন কিনা, তা নিয়ে ‘সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন’ বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের দুই কক্ষে বড় ব্যবধানেই সীমান্ত নিরাপত্তা বিলটি পাস হয়। হোয়াইট হাউস পরে জানায়, ‘অচলাবস্থা’ এড়াতে ট্রাম্প ওই বিলে স্বাক্ষর করবেন। প্রেসিডেন্ট একই সঙ্গে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সেনা খাতের বরাদ্দ দেয়াল নিমার্ণ খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা।
ডেমোক্রেটরা এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে এর মাধ্যমে ট্রাম্প ‘ক্ষমতার চ‚ড়ান্ত অপব্যবহার’ ও ‘বেআইনি কাযর্ক্রম’ করতে যাচ্ছেন বলে সতকর্ করেছে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা জারি করলে সেটা আইনি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা পযের্বক্ষকদের। বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটের ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার এক যৌথ বিবৃতিতে ওই সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়েছে।
দুই ডেমোক্রেট শীষর্ নেতা বলেছেন, ‘জরুরি অবস্থা জারি হবে একটি বেআইনি কাজ, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার চ‚ড়ান্ত অপব্যবহার। এটি হবে তার দেয়া প্রতিশ্রæতি ভাঙার একটি মরিয়া চেষ্টা, যেখানে দেয়াল নিমাের্ণর অথর্ মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায়ের কথা দিয়েছিলেন তিনি। তিনি মেক্সিকোকে রাজি করাতে পারেননি। এখন মাকির্ন জনগণ ও তাদের নিবাির্চত প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তিনি তার এই অকাযর্কর ও দেয়ালের অথর্ নিতে চান। করদাতাদের অথের্ দেয়াল নিমাের্ণর কাজ শুরু করতে এখন প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের চারপাশ ঘিরে মরিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন।’ মাকির্ন কংগ্রেস যেকোনো মূল্যে ‘সাংবিধানিক কতৃর্ত্বকে রক্ষা করবে’ বলেও প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন তারা।
রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা শুরুর দিকে চুক্তি অনুযায়ী, সীমান্ত সুরক্ষা বিলে স্বাক্ষরে প্রেসিডেন্টের প্রতি আহŸান জানালেও পরে ‘জরুরি অবস্থা’ জারির ব্যাপারেও তাদের সম্মতির কথা খোলামেলাই বলেছেন। সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, ‘সীমান্তে সুরক্ষা নিশ্চিতে যেকোনো পদ্ধতি ব্যবহারের বিষয়টিই বিবেচনা করতে পারেন প্রেসিডেন্ট।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, জরুরি অবস্থা জারি হলে প্রেসিডেন্টের হাতে কিছু বিষয়ে অগাধ ক্ষমতা চলে আসবে, যেটা ব্যবহার করে তিনি কংগ্রেসকে পাশ কাটাতে পারবেন। ওই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সামরিক কিংবা দুযোর্গ খাতের বরাদ্দের অথর্ দেয়াল নিমাের্ণ নিয়ে যেতে পারবেন।
মেক্সিকো সীমান্তের বতর্মান পরিপ্রেক্ষিতেই ‘জরুরি অবস্থা’ জারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করছেন ট্রাম্প। কেবল নভেম্বরেই প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে হয় ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সমথর্করা একে ‘চরম সংকটপূণর্ অবস্থা’ অ্যাখ্যা দিলেও একমত নন ট্রাম্পবিরোধীরা। তাদের মতে, দশককাল আগেও একবার একই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সেবার হন্ডুরাস ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রতিদিনই হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী মাকির্ন সীমান্তে ভিড় করেছিল। সে সময় জরুরি অবস্থা জারি না করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেলে, এখনো সম্ভব বলে মন্তব্য তাদের।