শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্লেষণ

মোদি ম্যাজিক কাজ করছে না!

যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির শক্তির ভরকেন্দ্র উত্তর ভারতের হিন্দি ভাষাভাষী কয়েকটি রাজ্য। সে রকম তিনটি রাজ্যÑ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়। গত মঙ্গলবার বিরোধী কংগ্রেসের কাছে হারানোর পর ২০১৯ সালের সাধারণ নিবার্চনে বিজেপি আবার উতরাতে পারবে কিনা, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। লোকসভা নিবার্চনের মাত্র কয়েক মাস আগে তাদের ‘হাটর্-ল্যান্ডে’ এই নিবার্চনী বিপযের্য় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বিজেপির মধ্যে।

দলের অন্যতম মুখপাত্র কে জে আলফনসো বলেছেন, ‘আমাদের এখন ড্রয়িং বোডের্ ফিরে গিয়ে দেখতে হবে, কোথায় সমস্যা হয়েছে।’ কী সমস্যা হলো বিজেপির যে, সবচেয়ে অনুগত ভোটাররা দলকে প্রত্যাখ্যান করলো? চার বছরের মাথায় নরেন্দ্র মোদির সম্মোহনী শক্তিতে কি তাহলে ঘুণ ধরতে শুরু করেছে?

দিল্লির লেখক-কলামিস্ট নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়, যিনি মোদির জীবনী লিখেছেন, তিনি বলছেন, ‘মোদি ম্যাজিক’ শেষ হতে চলেছে কিনা, এখনই বলা কঠিন, তবে মঙ্গলবারের নিবার্চনী ফল বিজেপির জন্য অবশ্যই একটি অশনি সঙ্কেত।

২০১৪ সালের লোকসভা নিবার্চনে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের ৬৫টি আসনের ৬২টি জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু মঙ্গলবারের বিধানসভার ফলের চিত্র যদি আগামী লোকসভা নিবার্চনেও দেখা যায়, তাহলে এই তিনটি রাজ্য থেকে বিজেপির আসন আসবে বড়জোর ৩০টি।

নীলাঞ্জন বলেন, ভারতে কৃষকের ওপর চাপ দিন দিন বাড়ছে এবং বিজেপি সরকার সেটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। কোনো কোনো রাজ্যে কৃষকদের আত্মহত্যার প্রবণতা ভয়াবহ পযাের্য় পেঁৗছেছে। ফলে, কৃষকরা ব্যাপক সংখ্যায় বিজেপির কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

কৃষকরা যে তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেন না, সে সম্পকের্ বলা হচ্ছে, বেশ কয়েকটি রাজ্যে কৃষকরা এখন পাইকারদের কাছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে বড়োজোর এক রুপিতে। দিল্লিতে গিয়ে সেটা হয়তো ২০ রুপি হচ্ছে, কিন্তু কৃষক পাচ্ছেন এক রুপি। এ ছাড়া নোট বাতিল (ডিমনিটাইজেশন) ছোট-বড় ব্যবসা, কারখানা এবং সেই সঙ্গে কৃষকদের ভীষণ ক্ষতি করেছে। আর শহরাঞ্চলে বেকারত্ব, মধ্যবিত্ত সমাজকেও ক্ষুব্ধ করেছে। ২০১৪ নিবার্চনে জেতার পর মোদি ‘মেক ইনডিয়া’ নামে এক প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না আসায়, চাকরির সুযোগ তৈরি হয়নি।

কৃষক অসন্তোষের সঙ্গে যোগ হয়েছে দলিত, অথার্ৎ নিম্নবণের্র হিন্দুদের ক্ষোভ। গরুর নামে যে শুধু মুসলমানরাই হামলার শিকার হচ্ছে তাই নয়, দলিতদেরও নানা হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। সে কারণে তিনটি রাজ্যেরই দলিত এবং আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার ভোটাররা বিজেপিকে ভোট দেয়নি।

নীলাঞ্জন বলেন, এসব কারণে এমন একটি ইমেজ বিজেপি সরকারের সম্পকের্ তৈরি হয়েছে যে, তারা শুধু প্রতিশ্রæতির ফুলকি ছোটায়, কিন্তু তা পূরণে কিছু করে না। ফলে হিন্দুত্ববাদ এই তিন রাজ্যের নিবার্চনে বিজেপিকে খুব বেশি রাজনৈতিক সুবিধা দিতে পারেনি। যেমন, ভারতের একমাত্র গো-মন্ত্রী ওতারাম দেওয়াসি হেরে গেছেন ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে।

গত বছরের ডিসেম্বরে মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটে খুব কষ্টে জিততে হয়েছিল বিজেপিকে। পুরো ২০১৮ সাল ধরে বিভিন্ন রাজ্যে লোকসভা এবং বিধানসভার যেসব উপনিবার্চন হয়েছে, তার ৯০ শতাংশই বিজেপির বিপক্ষে গেছে। বিজেপির শক্তির আরেকটি ভরকেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের অবস্থাও সুবিধার নয়। সেখানেও অসন্তোষ বাড়ছে। নীলাঞ্জনের মতে, মোদি যদি দ্রæত নাটকীয় কোনো বিকল্প রাজনৈতিক কৌশল হাজির না করতে পারেন, তাহলে ২০১৪ সালের লোকসভা নিবার্চনে পাওয়া ২৮২ আসন ১৫০ থেকে ১৮০টিতে নেমে আসতে পারে।

কিন্তু আগামী কয়েক মাসে নতুন কী কৌশল তার থলে থেকে বের করতে পারবেন মোদি? কট্টর হিন্দুত্ববাদের রাজনীতিতে রাশ টানার সম্ভাবনা কি রয়েছে? নীলাঞ্জনের মতে, সে সম্ভাবনা কম। তিনি বরং মনে করেন, হিন্দুত্ববাদের প্রচারণা আগামীতে জোরদার করতে পারে বিজেপি। দুনীির্তর বিরুদ্ধে জোরালো কথাবাতার্ও শোনা যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তজাির্তক নিরাপত্তা ইস্যুকে আরও জোরালোভাবে সামনে আনা হতে পারে। কিন্তু এসব করে আগামী তিন মাসে ২০১৪ নিবার্চনের আগের সেই ‘মোদি ম্যাজিক’ কতটা শাণিত করতে পারবেন তিনি, তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ করছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<27447 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1