মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধের চেয়েও খরায় বেশি উদ্বাস্তু হচ্ছে আফগানরা : জাতিসংঘ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

আফগানিস্তানে চলতি বছরের ভয়াবহ খরায় বিপুলসংখ্যক মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে, এই সংখ্যা সরকারি বাহিনী ও তালেবান বিদ্রোহীদের মধ্যে হওয়া সংঘষের্ ঘর ছাড়াদের তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতের আশপাশের উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে খরায় বিপযর্স্ত অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি

জরুরি প্রয়োজনে বানানো এমনই একটি উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেয়া ৭০ বছর বয়সী সাদি মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা তৃষ্ণাতর্ ও ক্ষুধাতর্। বাড়ি ছাড়ার সময় অল্প কিছু জিনিস সঙ্গে নিতে পেরেছিলাম, সেগুলোর বেশিরভাগই পথে হারিয়েছি। এখন কিছুই নেই আমাদের। আমরা আটজন এই ছোট তঁাবুতেই থাকছি। স্ত্রী ও ভাই মারা গেছে। আমাদের সন্তানদের অধের্ক এখানে, বাকিদের পেছনে ফেলে এসেছি।’

চলতি বছরের ভয়াবহ খরায় উত্তর ও পশ্চিম আফগানিস্তানে সাদির মতো প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে এমন এক সময় এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুযোর্গ আঘাত হানল, যখন এর জনগণ দেড় যুগের বেশি সময় ধরে নানামুখী সংঘাতে বিপযর্স্ত।

২০১৪ সালে আন্তজাির্তক বাহিনী দেশটিতে অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি টানার পর থেকে দেশটিতে সংঘষের্র পরিমাণ আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। ২০০১ সালে মাকির্ন বাহিনীর অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে চলতি সময়েই তালেবান আফগানিস্তানের সবচেয়ে বেশি অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘষের্র ঘটনায় এ বছর যত মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে, খরা এরচেয়েও বেশি মানুষকে উদ্বাস্তু করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

হেরাতে বৈশ্বিক এই সংস্থাটির খাদ্য কমর্সূচির (ইউএনএফপিএ) সমন্বয়ে সহায়তা করা কাদির আসেমিও খরায় ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে আসা মানুষের জোয়ার বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দুযোের্গর মাত্রার কারণে এটা (খাদ্য সহায়তা) খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে।’

খরায় বিপযর্স্ত প্রায় ২২ লাখ মানুষের জন্য জাতিসংঘ এখন পযর্ন্ত তিন কোটি ৪৬ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে। খাবায় কেনার জন্য ইউএনএফপি এখন ক্ষতিগ্রস্তদের অথর্ দিচ্ছে। উদ্বাস্তু শিবিরের বাইরের নিবন্ধন কেন্দ্রে আসা আফগানিদের মধ্যেও দেখা গেছে মরিয়া ভাব।

উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ ফারিয়াব থেকে চার শিশু সন্তানকে নিয়ে উদ্বাস্তু শিবিরে আসা এক নারী জানান, ‘দুভার্গ্যই তাদের এখানে টেনে এনেছে’। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যদি সামান্য টাকাও থাকতো, তাহলেও আমরা কখনোই এখানে আসতাম না। এক বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে (ফারিয়াব) কোনো বৃষ্টি নেই। সব শুকিয়ে গেছে। শিশুদের দেয়ার মতো পানিও পাইনি আমরা। ওপরের দিকে সেনাবাহিনী ও তালেবানের লড়াই চলছে। চারদিকেই বিশৃঙ্খলা।’

আগামী ২০ অক্টোবর পালাের্মন্ট নিবার্চনের তারিখ নিধাির্রত থাকলেও দেশটির অনেক নাগরিকই বলছেন, তারা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, রাজনৈতিক নেতারা সেসব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। হেরাতের লাখ লাখ মানুষকে এখন প্রতিনিধি ঠিক করার চেয়েও বেশি ভাবতে হচ্ছে আসন্ন শীতের মাসগুলোকে নিয়ে।

উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়া মানুষজন শিগগিরই বাড়িঘরে ফিরতে পারবেনÑ এমন সম্ভাবনা না দেখায় শীত নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগের’ কথা জানালেন আসেমিও। বড় মাত্রার এ ধরনের দুযোর্গ গত ১৮ বছরে দেখা যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া খুবই রূঢ় হয়ে উঠবে। এই লোকজন তঁাবুতে অবস্থান করে টিকে থাকতে পারবে না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18219 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1