শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
বিশেষ প্রতিবেদন

লতাপাতা খেয়ে বঁাচার চেষ্টা!

ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ
যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক শিশুর ওজন নেয়া হচ্ছে

গাছের পাতা খেয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে বহু পরিবার বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। লতাপাতা পানিতে সেদ্ধ করে টক স্বাদের সেই পেস্ট খাচ্ছেন তারা। সম্প্রতি উত্তর ইয়েমেনের আসলাম জেলায় সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে।

সেখানকার প্রধান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, ক্ষীণকায় এক শিশুর ওজন করা হচ্ছে। জেলার প্রধান এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে দেখা যায়, অনেক ক্ষীণকায় শিশু চিকিৎসার জন্য এসেছে। মারাত্মক রোগা, কিন্তু বড় বড় চোখের ক্ষীণকায় শিশুদের প্লাস্টিকের গামলায় বসিয়ে নাসর্ ওজন মাপছেন। নাসর্ তাদের হাতের বাহু মাপছিলেন। মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার মাপ পাওয়া যাচ্ছিল। চেহারা, শরীর আর নাসের্র লিখিত তথ্য বলছে, মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত ইয়েমেনের শিশুরা।

চলতি বছর এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে প্রায় ২০টি শিশু ক্ষুধায় মারা গেছে। তবে সরকারি হিসেবের বাইরেও দুভিের্ক্ষ মৃত্যুর ঘটনা যে রয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। বাড়িতে বাড়িতে মৃত্যুর ঘটনা অহরহ ঘটছে।

সেখান থেকে কাছের একটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল সাত মাসের মেয়ে জাহরা কেঁদেই চলেছে। হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে মায়ের দুধ খাওয়ার জন্য। কিন্তু জাহরার মা-ও মারাত্মক অপুষ্টির শিকার। ঠিকমতো মেয়েকে বুকের দুধ খেতে দিতে পারছেন না। সেই মা কষ্ট নিয়ে বলেন, ‘মেয়েটা জন্মের পর থেকে ওর জন্য দুধ বা ওষুধ কিনতে পারিনি।’ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান মাকিয়ে মাহদি বলেন, ‘জাহরাকে সম্প্রতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর সে আবার শুকিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘অথর্কড়ি না থাকার কারণে জাহরার বাবা-মা তাকে গাড়িতে করে পুনরায় ক্লিনিকে আনতে পারছেন না। তারা যদি মেয়েকে ক্লিনিকে না আনতে পারেন, তবে চোখের সামনে জাহরা মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়বে। আমরা একুশ শতকে বাস করছি। অথচ যুদ্ধ আমাদের এই পরিণতি দিয়েছে। আমি যখন গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরি, দৃশ্যগুলো দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। মানুষ গাছের লতাপাতা সেদ্ধ করে খাচ্ছে। তাই বাড়ি ফিরে খেতে বসে আমি মুখে খাবার নিতে পারি না।’

আসলাম শহরের এমন চিত্র প্রমাণ করছে স্থানীয় প্রশাসনের চাপের মুখে আন্তজাির্তক ত্রাণ সহযোগিতা সবখানে ঠিক মতো বিতরণ হচ্ছে না। এছাড়া কতৃর্পক্ষ দুভিের্ক্ষর কারণে যে মানবিক বিপযের্য়র আশঙ্কা করছিল, তা সত্যি বলে প্রমাণ হচ্ছে।

প্রদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান ওয়ালিদ আল শামসান বলেন, ‘হাজ্জাজ প্রদেশের এই আসলাম শহরে প্রথম ছয় মাসে ১৭ হাজার অপুষ্টির শিকার মানুষের তালিকা নথিভুক্ত হয়েছিল। অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রথম ছয় মাসের এই সংখ্যা অনেক বেশি। প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে; যেখানে স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য ঠিক মতো পেঁৗছানো সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মৃত্যুর হার বেশি।’

ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চল দখল করে রেখেছে হুতি বিদ্রোহীরা। তারা ইয়েমেন সরকার ও সৌদি আরব পরিচালিত জোটের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করছে। বিগত তিন বছরের এই গৃহযুদ্ধে দেশটির অভ্যন্তরে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মক কমে গেছে। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে যে খাদ্য সাহায্য আসছে, সেটা অপ্রতুল এবং যুদ্ধের কারণে সঠিকভাবে বিতরণ করাও সম্ভব হচ্ছে না।

ধারণা করা হচ্ছে, ইয়েমেনে এখন প্রায় ২৯ লাখ নারী ও শিশু অপুষ্টির শিকার। ক্ষুধাতের্র সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। সাম্প্রতিক অচলাবস্থার কারণে আরও প্রায় চার লাখ শিশুর নতুন করে অপুষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, আরব দেশ ইয়েমেনে প্রায় তিন কোটি মানুষের বাস। ২০১৫ সাল থেকে সেখানে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হুতি বিদ্রোহী ও সরকার। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের পশ্চিমের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রেসিডেন্ট আবদরাব্বু মনসুর হাদিকে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার পর থেকে দেশটিকে ঘিরে সংঘাত মারাত্মক আকার ধারণ করে। হুতিদের সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে উদ্বিগ্ন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ তেহরানের প্রভাব কমাতে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে হাদির পক্ষে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ শুরু করে। তিন বছর ধরে চলা সংঘষর্ ১০ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে, এদের দুই-তৃতীয়াংশই বেসামরিক। আর এই যুদ্ধের কারণে সেখানে চলছে সীমাহীন খাদ্য সংকট। সংবাদসূত্র : এপি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13713 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1