শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
নতুন নির্বাচন দাবি

সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে উত্তাল বেলারুশ

আবার ভোট করার দাবি খারিজ প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর
যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ১৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০৫
প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো

বিতর্কিত পুনর্র্নির্বাচন ও প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর পদত্যাগ দাবিতে বেলারুশে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে রোববার। তবে এসবে থোড়াই কেয়ার রাশিয়া সমর্থিত এ একনায়কের। নিজের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন নিয়ে জনতার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন লুকাশেঙ্কো। রাজধানী মিনস্কের স্বাধীনতা চত্বরে এক সমাবেশে ৬৫ বছর বয়সি এ নেতা বলেছেন, 'চাপের মুখে নতুন নির্বাচন দিতে রাজি হলে রাষ্ট্র হিসেবে নিঃশেষ হয়ে যাবে বেলারুশ।' সংবাদসূত্র :বিবিসি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, এপি রোববার লুকাশেঙ্কো একটি জনসভা করেন। সেখানে বিরোধীদের আবার ভোট করার দাবি তিনি খারিজ করে দেন। উল্টো অভিযোগ করেছেন ন্যাটোর বিরুদ্ধে। তার দাবি, 'ন্যাটো বেলারুশের সীমান্তে কামান ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।' বেলারুশের প্রেসিডেন্ট বলেন, 'আমাকে রক্ষা করার দরকার নেই। আপনারা দেশকে রক্ষা করুন।' প্রেসিডেন্টের জনসভায় ছিল হাজার পাঁচেক মানুষ। তিনি যখন দেশরক্ষার আহ্বান জানাচ্ছিলেন, তখন বেলারুশের বিভিন্ন শহরে লাখো লোক রাস্তায় নামে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর দাবিতে। এদিন বেলারুশে প্রেসিডেন্টে লুকাশেঙ্কোর জনসভার তুলনায় অনেক বড় মিছিল করেছে বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছে, তাদের পাশে বেশি মানুষ আছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী শ্বেতলানা এখন লিথুয়ানিয়াতে আছেন। তার দাবি, আবার ভোট গণনা করতে হবে। আর ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্য একটা জাতীয় পরিষদ গঠন করতে হবে। ন্যাটোর অস্বীকার : এদিকে, ন্যাটো জানিয়েছে, তারা বেলারুশের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে, কিন্তু তারা পূর্ব ইউরোপে নতুন করে সামরিক উপস্থিতি বাড়ায়নি। ন্যাটোর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পূর্ব ইউরোপে জোটের যে বহুজাতিক উপস্থিতি আছে, তা কাউকে বিপদে ফেলার বা ভয় দেখানোর জন্য নয়। ওটা আত্মরক্ষার জন্য এবং কেউ যাতে শান্তি ভঙ্গ করতে না পারে এবং কোনো বিরোধ যাতে না হয় তার জন্য। প্রায় আট দিন হয়ে গেল বেলারুশ বিক্ষোভে উত্তাল। লুকাশেঙ্কো জয়ের দাবি করার পর থেকেই তার বিরোধীরা রাস্তায় নেমেছে। দুই জন প্রতিবাদকারী মারাও গেছে। কয়েক হাজার প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১০ দিন আটক করে রাখার পর বেলারুশে ডিডাবিস্নউ'র সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ : গত ২৬ বছর ধরে বেলারুশ শাসন করছেন লুকাশেঙ্কো। তার দাবি, নির্বাচনে কোনো কারচুপি হয়নি। বিদেশি শক্তিগুলো এখন হস্তক্ষেপ করে ঝামেলা পাকাচ্ছে। লুকাশেঙ্কো বলেছেন, 'আমরা যদি তাদের কাছে নতি স্বীকার করি, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না। আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব লোপ পাবে। আমাদের মাতৃভূমি সংকটে।' প্রেসিডেন্ট যখন এই কথা বলছিলেন, আর সামনে সমবেত শ্রোতারা জাতীয় পতাকা আন্দোলিত করতে করতে স্স্নোগান দিয়েছে, 'আমরা এক'। প্রেসিডেন্টের এক সমর্থক বলেন, 'আমি লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে আছি। আমি বুঝতে পারছি না, কেন তার বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ হচ্ছে? আমরা তো তার জন্য পেনশন ও বেতন সময়ে পাচ্ছি।' বিরোধী মিছিলে লাখো লোক : অন্যদিকে, বিরোধীরা এদিন 'স্বাধীনতার জন্য' মিছিলের ডাক দিয়েছিল। সেই মিছিলেই যোগ দেয় লাখো লোক। রাজধানী মিনস্কেই এক লাখের বেশি লোক মিছিলে ছিল। তারা হাতে ফুল ও বেলুন নিয়েছিল। অধিকাংশই পরেছিল সাদা পোশাক। বেলারুশে সাদাই হলো বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদের রং। অনেকের হাতে ছিল পস্ন্যাকার্ড। তাতে লেখা, 'আমরা সহিংসতার বিরুদ্ধে', 'নির্যাতন ও মৃতু্য নিয়ে লুকাশেঙ্কোকে জবাব দিতে হবে'। অন্য ছোট বড় শহরেও বিশাল মিছিল হয়েছে। ডিডাবিস্নউর মস্কো প্রতিনিধি এমিলি শেরউইন টুইট করে বলেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেল থেকে প্রচুর উচ্চপদস্থ কর্মী ইস্তফা দিয়েছেন এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে বিক্ষোভের ছবিও দেখানো হয়েছে। পাশে ইইউ : ইইউ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অবাধ হয়নি। তাই তারা ভোট-পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ টুইট করে বলেছেন, 'ইইউ'র উচিত বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করা। তারা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অধিকারের জন্য লড়ছে।' জার্মানির অর্থমন্ত্রী বলেছেন, 'লুকাশেঙ্কো একজন ডিক্টেটর। তিনি লোকের আস্থা হারিয়েছেন।' জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, 'আমরা যে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চাই, তা বেলারুশের লোকের বিরুদ্ধে নয়। যারা নির্বাচনে রিগিং (কারচুপি) করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে