শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
কোভিট-১৯ মহামারি

বন্ধের মুখে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা

আক্রান্তের মাত্রা কমে আসায় পর্যাপ্ত সংক্রমণ পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে ভাইরাল সংক্রমণের হটস্পটগুলো যদি মুছে ফেলা যায়, তাহলে পরীক্ষা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে বাধ্য হয়ে আফ্রিকা এবং ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোর দিকে তাকাতে হচ্ছে বিজ্ঞানীদের
যাযাদি ডেস্ক
  ০৩ জুন ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৩ জুন ২০২০, ১০:৫৬

কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম ধাপের সংক্রমণের ঢেউ কমে আসায় ভ্যাকসিন নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ায় ভ্যাকসিন তৈরির কাজ, এমনকি পরীক্ষাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। সংবাদসূত্র : রয়টার্স ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কঠোর লকডাউন এবং সামাজিক দূরত্বের নিয়মের সাফল্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং অঞ্চলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা এতটাই কমে এসেছে যে, সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলোর পরীক্ষার জন্য রোগটির পর্যাপ্ত সংক্রমণ পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষা এবং ফলের জন্য এখন তাই আফ্রিকা এবং ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোর দিকে তাকাতে হচ্ছে বিজ্ঞানীদের। যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ'র পরিচালক ফ্রান্সিস কলিনস বলেন, 'ভাইরাল সংক্রমণের হটস্পটগুলো যদি আমরা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করে মুছে ফেলতে পারি, তাহলে আসলেই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।' গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে উৎপত্তি হওয়া করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে ৬২ লাখের বেশি মানুষ এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ ৭৫ হাজার। করোনায় থমকে যাওয়া অর্থনীতি এবং মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে বিশ্বনেতারা ভ্যাকসিনের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্পূর্ণ নতুন একটি রোগের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলোর ব্যাপক পরিসরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো দ্রম্নতই জটিলতার দিকে যাচ্ছে। মহামারির ওঠানামা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষায় অতিরিক্ত জটিলতা তৈরি করে। প্রাদুর্ভাব যখন হ্রাস পাচ্ছে, তখন এটিকে আরও জটিল করে তুলছে। যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিজনেস স্কুলের ওষুধ পুনরুৎপাদন বিশেষজ্ঞ আয়ফার আলি বলেন, এই পরীক্ষার জন্য কমিউনিটিতে মানুষের মাঝে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকা দরকার। যদি সাময়িকভাবে ভাইরাসটিকে দমন করা যায়, তাহলে এই পরীক্ষা নিরর্থক হবে। তিনি বলেন, এর সমাধান হলো, ভ্যাকসিনের পরীক্ষার জন্য এখন ব্রাজিল এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। বর্তমানে এসব দেশে কমিউনিটি পর্যায়ে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটছে। ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্য সাধারণত বিক্ষিপ্তভাবে জনগোষ্ঠীকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে ট্রিটমেন্ট গ্রম্নপের দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয় এবং অন্য কন্ট্রোল গ্রম্নপের মাঝে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ওষুধ দেয়া হয়। পরে এই দুই গ্রম্নপকেই কমিউনিটিতে ফিরিয়ে দেয়া হয়; যেখানে রোগটির বিস্তার ঘটে। পরে সেই কমিউনিটির মধ্যে সংক্রমণের হারের তুলনা করে দেখা হয় ভ্যাকসিনটি কার্যকর কিনা। কন্ট্রোল গ্রম্নপের মাঝে সংক্রমণের হার বেশি হবে বলে আশা করা হয়। এতে ভ্যাকসিনটি অন্যান্য গ্রম্নপকে সুরক্ষা দেবে কিনা সেটি বোঝা যায়। ইউরোপের দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাস সংক্রমণের সর্বোচ্চ চূড়া পেরিয়েছে। এসব দেশে এরই মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। যে কারণে যেসব দেশে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ওঠানামা করছে, সেসব দেশে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর জন্য ব্যাপক কমিউনিটি সংক্রমণের দরকার। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে ২০১৪ সালে ইবোলা ভাইরাস মহামারির সময়েও একই ধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এখন পর্যন্ত করোনার যে কটি ভ্যাকসিন পরীক্ষার দ্বিতীয় অথবা মাঝ পর্যায়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ প্রস্তুতকারক 'জায়ান্ট কোম্পানি' মডার্নার ভ্যাকসিনটি অন্যতম। এরপরই আছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি করা 'অ্যাস্ট্রাজেনেকার চ্যাডক্স-১ এনকোভ-১৯। যুক্তরাষ্ট্র আগামী জুলাই মাসে দেশটিতে ব্যাপক পরিসরে ২০ থেকে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পরিকল্পনা করছে। কলিনস বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সরকারি এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভাইরাসটির সর্বাধিক সংক্রমিত এলাকা শনাক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রেই প্রথমে পরীক্ষা চালাবে। কিন্তু দেশে যদি রোগের হার কমে যায়, তাহলে বিদেশে পরীক্ষা চালানোর বিষয়টি বিবেচনা করবেন তারা। তিনি বলেন, 'বর্তমানে আফ্রিকা কোভিড-১৯ এর ব্যাপক সংক্রমণের মুখে রয়েছে। আমরা খুব ভালোভাবেই সেখানে আংশিক ট্রায়াল চালাতে চাই। যেখান থেকে আমরা কার্যকরভাবে ডাটা সংগ্রহ করতে পারি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউটের পরিচালক আদ্রিয়ান হিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন টিমে রয়েছেন। তিনি বলেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি গত মাসে মাঝ পর্যায়ের পরীক্ষায় গেছে। এই পরীক্ষায় যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে প্রয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। হিল বলেন, যুক্তরাজ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমে আসায় ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফল পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংক্রমণ পাওয়া না গেলে ট্রায়াল চালানো সম্ভব হবে না। এটা খুবই হতাশাজনক। অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু এ রকম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে