শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বিক্ষোভ ছয় দিনে গড়াল

ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

হোয়াইট হাউসের সামনে পাথর-বোতল নিক্ষেপ হাঁটু গেড়ে মাথা নত করে ক্ষমা চাইল পুলিশ ফ্লয়েডের মৃতু্যর প্রতিবাদে বিক্ষোভ লন্ডন-বার্লিনে
যাযাদি ডেস্ক
  ০২ জুন ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০২ জুন ২০২০, ১০:৫৩
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপলিসে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড পুলিশি নির্যাতনে নিহত হওয়ার পর ফুঁসে উঠেছে পুরো যুক্তরাষ্ট্র। বিক্ষোভের ঢেউ এসে পড়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় হোয়াইট হাউসের সামনেও। রোববার হাজারখানেক বিক্ষোভকারী হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হয়ে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার বিচার দাবি জানায় -সিনহুয়া

পুলিশি নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃতু্যর প্রতিবাদে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে। বিক্ষোভ এসে পড়েছে হোয়াইট হাউসের সামনেও। রোববার রাতে হোয়াইট হাউসের পাশের রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। সহিংসতার মুখে অন্তত ৪০টি শহরে কারফিউ জারি হলেও তা ভেঙে রাস্তায় নেমেছে বিক্ষোভকারীরা। এই নিয়ে রোববার যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ-সহিংসতা ষষ্ঠ দিন পার করেছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এপি, রয়টার্স, এএফপি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, রোববার হোয়াইট হাউসের সামনে হাজার খানেকের বেশি বিক্ষোভকারী রাস্তার সাইন পোস্ট, পস্নাস্টিকের ডিভাইডার, গাছের শুকনো ডাল জড়ো করে তাতে আগুন ধরায়। এক বিক্ষোভকারী আবার তাতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পতাকা ফেলে দেয়। হোয়াইট হাউসের সামনের গেটেও পাথর ও বোতল ছোঁড়ে বিক্ষোভকারীরা। এরপর হোয়াইট হাউসের বাইরের সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। ট্রাম্পের পরামর্শদাতারা তাকে বলেছেন, তিনি যেন অবিলম্বে টিভিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তবে ট্রাম্প এখন পর্যন্ত সেই পরামর্শ মানেননি। তিনি টুইট করে বলেছেন, 'ডেমোক্রেট মেয়র ও গভর্নররা যেন কড়াভাবে বিক্ষোভের মোকাবিলা করেন।' তবে রোববার তিনি অন্তরালেই থেকেছেন। হোয়াইট হাউসেও কর্মীদের বলে দেওয়া হয়েছে, বিক্ষোভ চলতে থাকলে তারা যেন না আসেন। বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয় পুলিশের অত্যাচারে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃতু্যর পর থেকে। যত দিন যাচ্ছে, ততই বিক্ষোভ বাড়ছে। রোববার হোয়াইট হাউসের পাশের একটি পার্কেও বিক্ষোভকারীরা জড়ো হলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, পিপার স্প্রে ছোড়ে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেডও ফাটানো হয়। ওয়াশিংটন মনুমেন্টের কাছে বিক্ষোভকারীরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবনের কাচ ভেঙে দেয়, রাস্তায় গাড়ি উল্টিয়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফিলাডেলফিয়ায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর এবং মলোটভ ককটেল ছোড়ে। সান ফ্রান্সিসকোতে মুখোশ পরে কিছু লোক একটি বড় দোকানের দরজা ভেঙে ঢুকে লুটতরাজ করে। মিনেপোলিসে আবার এক ট্রাক ড্রাইভার বিক্ষোভকারীদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিয়েছে। এরপরই ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৭০০ জওয়ানকে নামানো হয়েছে। আর এই বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি বাড়াবাড়ির মুখে পড়ছেন সাংবাদিকরা। শুক্রবার সিএনএনের সাংবাদিক ও তার সঙ্গীদের বিক্ষোভের খবর লাইভ দেখানোর সময় গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার কেনটাকিতে 'ওয়েভ নিউজ'র এক সাংবাদিকের দিকে পিপার গান ছোড়ে পুলিশ। রয়টার্সের সিকিউরিটি অ্যাডভাইজারের গায়ে রবার বুলেট লেগেছে। গত তিনদিনে অন্তত দুই ডজন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। হাঁটু গেড়ে মাথা নত করে ক্ষমা চাইল পুলিশ মিনেসোটায় পুলিশি হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে যখন পুরো যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে, তখন প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নিউইয়র্ক ও মিয়ামির পুলিশ। শনিবার নিউইয়র্কে বিক্ষোভ চলাকালে প্রতিবাদকারীরা হাঁটু গেড়ে বসে নীরবতা পালন করার সময় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। মিয়ামিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে ৫০ জনের বেশি লোককে গ্রেপ্তার করলেও কয়েকজন পুলিশ সদস্য হাঁটু গেড়ে বসে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংহতি জানান। নিউইয়র্কে পুলিশ কর্মকর্তাদের সংহতি জানানোর ভিডিও ধারণ করেছেন আলিয়া আব্রাহাম। তিনি বলেন, 'আমি এমনটি প্রত্যাশা করিনি। কখনও এমনটি দেখিনি।' ফ্লয়েডের মৃতু্যর প্রতিবাদে বিক্ষোভ লন্ডন-বার্লিনেও এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃতু্যকে ঘিরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে বিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রোববার লন্ডন, বার্লিন এবং টোরান্টোর মতো শহরেও বিক্ষোভ করেছে শত শত মানুষ। যুক্তরাজ্যে লন্ডন শহরের কেন্দ্রস্থলে ট্রাফালগার স্কোয়ারে ন্যায়বিচার এবং শান্তির দাবিতে স্স্নোগান দিয়ে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। জার্মানির বার্লিনেও কয়েকশ' বিক্ষোভকারী যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেছে জর্জ ফ্লয়েডের ন্যায়বিচারের দাবিতে। 'কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা' বন্ধের দাবিতেও স্স্নোগান দেয় তারা। কানাডার টরেন্টো শহরেও চার হাজার বিক্ষোভকারী ফ্লয়েড হত্যা, বর্ণবাদ এবং পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীর মৃতু্যর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে