শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
লক্ষ্য খালেদার মুক্তি

ডিসেম্বরে রাজপথে উত্তাপ ছড়ানোর ছক বিএনপির

শুধু আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়, তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। কারণ আইনি প্রক্রিয়ায় যা যা করা সম্ভব- আইনজীবীরা গত ২১ মাসে তার সব কিছুই করেছেন
নতুনধারা
  ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২৭ নভেম্বর ২০১৯, ২৩:৪৫

হাসান মোলস্না দীর্ঘদিন রাজপথের আন্দোলনে সুবিধা করতে না পারা বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তির মাস ডিসেম্বরে রাজপথ উত্তপ্ত করার পরিকল্পনা করছে। মূলত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ছক প্রস্তুত করা হচ্ছে। আন্দোলন সফলে সাংগঠনিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে জমা দিতে বলা হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনের পর এক তরফা নির্বাচনের প্রতিবাদে ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালের শুরুতে এবং এর পরের বছর ২০১৫ সালে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে বিএনপি। কিন্তু অপরিকল্পিত সেই আন্দোলন শুধু ব্যর্থই হয়নি, বরং মামলা ভারে দলের নেতাকর্মীরা নু্যব্জ হওয়ার পাশাপাশি দল এতটা বেকায়দায় পড়ে যে, দলীয়প্রধান খালেদা জিয়া দীর্ঘমেয়াদে কারাভোগের পরেও উলেস্নখযোগ্য কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। সরকারের অনমুতি ছাড়া আন্দোলন হতে পারে এমন বিষয়টি নেতাকর্মী ভুলতে বসেছেন। এজন্য রাজনৈতিক মহলে এমন আলোচনাও হয় যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য সরকারের অনুমতি না থাকায় বিরোধী নেতাদের দেখা যায়নি। বিএনপি সূত্রমতে, তাদের এমন বিপর্যস্ত অবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন। রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার সাহস না থাকলে স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি দেয়ারও দাবি উঠেছে তৃণমূল থেকে। সঙ্গত কারণে ডিসেম্বরের শুরু থেকে আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মূলত খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নতুন নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামতে চান তারা। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, সংসদ নির্বাচনের পরে দলকে ঘুরে দাঁড় করাতে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে বিএনপি। তাকে মুক্ত করতে আইনি লড়াই জোরদার, রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার ও প্রভাবশালী বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে কূটনৈতিক পর্যায় থেকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টাও হয়েছে। সব চেষ্টাই ব্যর্থ হওয়ায় এবার কঠোর আন্দোলনের বিকল্প ভাবছে না বিএনপি। এজন্য বিজয়ের মাসে ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। নেয়া হচ্ছে সাংগঠনিক প্রস্তুতিও। ডিসেম্বরের শুরু থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এনিয়ে জোট ও ফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। এ ঘরানার সর্বদলীয় ঐক্য নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করা হবে। আলাপকালে বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক নেতা বলেছেন, শুধু আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়, তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। কারণ, আইনি প্রক্রিয়ায় যা যা করা সম্ভব- তাদের আইনজীবীরা গত ২১ মাসে তার সব কিছুই করেছেন। এখন সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া শিগগিরই বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। সরকারকে চাপ দিতে হলে রাজপথেই নামতে হবে। আন্দোলনের ধরন প্রসঙ্গে বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, মানববন্ধন, মিছিল, কালো পতাকা মিছিল, অনশন, অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচির সূচনা হবে। বিএনপির প্রতিটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরের সব কটি ওয়ার্ড থেকে একযোগে মিছিল বের হবে। যেগুলোর প্রতিটির নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা থাকবেন। হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীরা বাসায় বসে থাকার কর্মসূচির চেয়ে রাজপথে জনবল নিয়ে শক্তি প্রদর্শনকে এখন বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে নতুন নির্বাচন ও নেত্রীর মুক্তির দাবিতে রাজধানীসহ দেশের যেকোনো স্থানে মিছিল সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে কার্যকরী রূপ দিতে চায় বিএনপি। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এখন থেকে মিছিল সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে। দলের এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত রোববার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুমতি না নিয়েই মিছিল-সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় এর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে মঙ্গলবার মিছিলসহ হাইকোর্টের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। সূত্রমতে, আন্দোলন সফলে সাংগঠনিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে যে ১৯টিতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে এসব কমিটির দায়িত্বশীল নেতাদের তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। ১৯টি আহ্বায়ক কমিটি হওয়া জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- নীলফামারী, হবিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নওগা, যশোর, বগুড়া, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সৈয়দপুর, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, নেত্রকোনো, পঞ্চগড়, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, ফেনী ও সিলেট। আসন্ন আন্দোলনের বিষয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলন আরও বেগবান হবে। দেশনেত্রীর মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। একই বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উলস্নাহ হাসান বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলন চলমান। এই আন্দোলন এতটাই তীব্র হবে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে