শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ধর্ষণের পর পাবনা থানায় বিয়ে

ওসি প্রত্যাহার, এসআই বরখাস্ত: গ্রেপ্তার আরও ২

পাবনা প্রতিনিধি
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
ওসি ওবায়দুল হক

পাবনায় থানার ভিতরে গণধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূকে ধর্ষকের সাথে বিয়ে দেয়ার ঘটনায় সদর থানার ওসি ওবায়দুল হককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই অভিযোগে উপপরিদর্শক (এসআই) একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ধর্ষণের মামলায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ জনে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, থানা কম্পাউন্ডে বিয়ে দেয়ার ঘটনায় ওসি ওবায়দুল হককে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেই সাথে কাজী ডেকে থানায় বিয়ে দেয়ার সংশ্লিষ্টতা থাকায় উপপরিদর্শক (এসআই) একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে আলী হোসেন ও সঞ্জু হোসেন নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে ৫ আসামির মধ্যে পৃথক অভিযানে চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো। প্রসঙ্গত, পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামের তিন সন্তানের জননীর সাথে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক ছিল একই গ্রামের রাসেল আহমেদ নামের এক যুবকের। গত ২৯ আগস্ট রাতে বিয়ের প্রলোভনে ডেকে নিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ করে রাসেল ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনার মীমাংসার জন্য ধর্ষিত ওই গৃহবধূ স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ঘন্টুর অফিসে যান। সেখানে তিন দিন আটকে রেখে ঘন্টু ও তার অন্য সহযোগীরা পালা করে ধর্ষণ করে। গেল ৫ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ঘন্টুর কাছ থেকে পালিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরপর গত ৬ সেপ্টেম্বর ওই গৃহবধূ থানায় অভিযোগ দেন। কিন্তু মামলা নথিভুক্ত না করে মীমাংসা করতে অভিযুক্ত যুবক রাসেলের সাথে গৃহবধূকে বিয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন এবং ধর্ষণ মামলা নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয় জেলা পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূকে ধর্ষণের মামলা দায়ের ও অভিযুক্ত যুবক রাসেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার সকালে মামলার আরেক আসামি দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ঘন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযোগের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় জেলা পুলিশ ওসিকে প্রত্যাহার ও এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি এদিন সকালে মামলার অন্য দুই আসামি হোসেন আলী ও সঞ্জু হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ রোডস্থ পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে জেলা মহিলা পরিষদের ব্যানারে এক মানববন্ধন ও পথ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, বিচার প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত নারীকে আইনি সহায়তা না দিয়ে উল্টো থানার মধ্যেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতাকে বিয়ে দেয়ায় গণধর্ষণের সাথে জড়িত এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। মানববন্ধন চলাকালে মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা একাত্মতা প্রকাশ করেন। জানা যায়, গত মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ করেছেন পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম। একই সাথে বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্ত নারীর সাথে কথা বলেন জেলা মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। একই সাথে তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন এদিকে পাবনায় গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও ধর্ষকের সঙ্গে থানার মধ্যে বিয়ে দেয়ার ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার পাবনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের সমন্বয়ে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশক্রমে পাবনার এই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ নেওয়াজকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। বাকি সদস্যরা হলেন, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. একেএম আবু জাফর ও পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবনে মিজান। জেলা প্রশাসক বলেন, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো ঘটনা তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনা করা হয়। ওই কমিটিতে প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) মো. ফিরোজ আহমেদ। অন্য দু সদস্য হলেন- কোর্ট ইন্সপেক্টর ও ডিআই-১। তিন কার্য দিবসে ওই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় বৃহস্পতিবার পাবনা সদর থানার ওসি ওবায়দুল হককে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত ও উপপরিদর্শক (এসআই) একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এমন তথ্য নিশ্চিত করেন পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম পিপিএম-বিপিএম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে