শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চার পথেই ঢাকায় ঢুকছে ইয়াবা

খিলক্ষেত-আব্দুলস্নাহপুর এলাকা বা মিরপুরে যেসব চালান ঢোকে সেসব মাদক ওই এলাকায়ই বণ্টন শেষ হয়ে যায়। যে চালান যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢোকে তার প্রথম হাতবদল হয় দৈনিক বাংলা মোড়ের আবাসিক হোটেলগুলোতে। এরপর ধীরে ধীরে ছোট চালান হিসেবে ছড়িয়ে দেয়া হয় রাজধানীতে
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
ইয়াবা

নীরব ঘাতক ইয়াবা; নানা কৌশলে মিয়ানমার থেকে আসা এই মাদক কক্সবাজার হয়ে ঢুকছে রাজধানী ঢাকায়। এরপর ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ঢাকায় এসব ইয়াবা আনতে ব্যবহৃত হচ্ছে সড়ক, রেল ও নৌপথ, বাদ যাচ্ছে না আকাশপথও। ইয়াবার বেশ কিছু চালান ধরাও পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। তবু কমছে না ইয়াবার কারবারিদের দৌরাত্ম্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ ও উখিয়ায় যে ইয়াবা আসে, সেটা ভাগে ভাগে কাঠের ট্রাকে করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়। সাতকানিয়া থেকেই বদল হয় মাদক ছড়িয়ে দেয়ার রুট। সূত্র জানায়, কিছু চালান সড়কপথে চট্টগ্রাম থেকে কার্গোবাহী বড় লরি, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইভেটকারে করে ঢাকায় ঢোকে। সাধারণত লরি বা কাভার্ড ভ্যান খুব বেশি তলস্নাশি হয় না বললেই চলে। এই সুবিধাই নেয় চোরাকারবারি চক্র। এরমধ্যে কিছু চালান নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে ঢুকে খিলক্ষেত ও আব্দুলস্নাহপুর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায়। কিছু চালান ঢোকে ইজতেমা মাঠের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে উত্তরা ১৫ ও ১৭ নম্বর সেক্টর হয়ে মিরপুরে। আর কিছু চালান ঢোকে যাত্রাবাড়ী হয়েও। খিলক্ষেত-আব্দুলস্নাহপুর এলাকা বা মিরপুরে যেসব চালান ঢোকে সেসব মাদক ওই এলাকায়ই বণ্টন শেষ হয়ে যায়। যে চালান যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢোকে তার প্রথম হাতবদল হয় দৈনিক বাংলা মোড়ের আবাসিক হোটেলগুলোতে। এরপর ধীরে ধীরে ছোট চালান হিসেবে ছড়িয়ে দেয়া হয় রাজধানীতে। আবার ঢাকায় ঢোকার আগে কিছু চালান চট্টগ্রাম থেকে ট্রাকে করে আনা হয় নারায়ণগঞ্জের পাগলা পর্যন্ত। সেখান থেকে কেরানীগঞ্জ দিয়ে নৌযানে করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা হয়ে এই মাদক রাজধানীতে ঢোকে। নৌপথকে ব্যবহার করা হয় চট্টগ্রাম থেকেও। বন্দরনগরী থেকে বিভিন্ন নৌযানে বরিশাল, লক্ষ্ণীপুর, চাঁদপুরে পাঠানো হয় ইয়াবা। সেখান থেকে আবার নৌপথেই ঢাকায় ঢোকে এই নীরব ঘাতক। নৌপথে তেমন কোনো চেকপোস্ট নেই এই সুযোগই লুফে নেয় মাদক কারবারিরা। রেলপথে কারবারিরা চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে করে ইয়াবা নিয়ে আসে গাজীপুরের টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে। কিছু চালান তারা চট্টগ্রাম থেকে পেস্ননে নীলফামারীর সৈয়দপুরে নিয়ে যায়। সেখান থেকেও ট্রেনে আনা হয় ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে। আবার মাঝেমধ্যে কিছু চালান সৈয়দপুর থেকে পেস্ননেই ঢাকায় আসে। এর বাইরে যাত্রীবাহী বাস বা অন্য পরিবহনেও ইয়াবার চালান ঢাকায় ঢোকে। সেসব চালানের হাতবদল হয় মহাখালী, শ্যামলী, মিরপুর ও ভাষানটেকের মতো এলাকাগুলোতে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন অ্যান্ড মিডিয়া) আলমগীর হোসেন বলেন, গত ১৫ মাসে প্রায় ৪০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। আটক হয়েছে ৮০ জন। মামলা হয়েছে ৬০টির মতো। কখনো স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে যুগল আসে চালান নিয়ে। বেশিরভাগ সময় পাকস্থলী, পায়ুপথ, যৌনাঙ্গে তলস্নাশি করে ইয়াবা পেয়েছেন। এগুলো সাধারণত ননমেটাল হওয়ার কারণে ট্রাডিশনাল স্ক্যানিং সিস্টেমে ধরা পড়ে না। তিনি বলেন, গোপন তথ্য ও গোয়েন্দা নজরদারির কারণে এদের চিহ্নিত করতে পারেন। চিহ্নিত হলে এক্স-রের মাধ্যমে ইয়াবা শনাক্ত করা হয়। ইয়াবা আসছে ধরাও পড়ছে। তাদের নজরদারি উপেক্ষা করে যাওয়া কঠিন। তবে, শতভাগ ইয়াবা চালান প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। আলমগীর হোসেন বলেন, কক্সবাজারে তাদের নিজস্ব সোর্সের দেয়া তথ্য ও সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে ইয়াবার চালান ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। হ্নীলা, উখিয়া, টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান আসছে। তারা এর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। এ পর্যন্ত ইয়াবা বহনের ঘটনায় পাঁচ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এমনও পেয়েছেন, নিজে বহন করে ও নিজেই ব্যবসা করে। আবার শুধু বহনকারীও পেয়েছেন। এক্ষেত্রে, কক্সবাজারের যৌনকর্মীদের ভাড়া করার প্রবণতাও দেখা গেছে। র্ যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক (এএসপি) মিজানুর রহমান বলেন, তাদের অভিযান অব্যাহত আছে। সব রুটে নজরদারি আছে। এ বিষয়ে তারা অনেক বেশি তৎপর। ইয়াবা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত তাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। গত আট মাসে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে ২ হাজার ৩১৩টি। ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে ৪৭ লাখ ৭৯ হাজার ১৪০ পিস। আটক হয়েছে নারী-পুরুষসহ ৩ হাজার ৭২৩ জন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সব ধরনের মাদকের বিষয়ে তাদের সতর্কতা আছে। প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। অভিযানে মাদক বিক্রেতাদের আটক ও মামলা করা হচ্ছে। আগে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে মামলা হতো ৭০০-৮০০। এখন আগস্ট মাসেই প্রায় দুই হাজার মামলা হয়েছে। প্রতিটি রুটে তাদের নজরদারি আছে। তিনি বলেন, সীমিত লোকবল নিয়েই তারা নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ইন্টিলিজেন্সের লোকজনও কাজ করছেন। আগের তুলনায় এখন মাদকের প্রভাব অনেক কম। বিক্রেতারা লুকিয়ে স্বল্প পরিমাণে মাদক বিক্রি করছে। মাদকের বিষয়ে কোনো কিছু নজরে এলেই তারা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে