বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিনা শর্তেই মিয়ানমার ফিরতে চান হিন্দু শরণার্থীরা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
কক্সবাজারের ক্যাম্পে অবস্থানরত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু ধর্মাবলম্বী শরণার্থীরা -যাযাদি

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে জুড়ে দিয়েছে নানা শর্ত। ইতোমধ্যে ওইসব শর্ত পূরণের নিশ্চয়তা পাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা মিয়ানমারে ফিরতে অস্বীকৃতিও জানিয়েছে। তবে শুধু নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে বিনা শর্তেই নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান কক্সবাজারের ক্যাম্পে অবস্থানরত হিন্দুধর্মাবলম্বী শরণার্থীরা। তারা বলছেন, 'মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। শুধু সন্ত্রাসীদের নির্যাতন থেকে বাঁচার নিশ্চয়তা পেলেই আমরা মিয়ানমারে ফিরে যাব।' কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে বসবাস করছেন ১১৩টি হিন্দু পরিবারের ৪৭০ জন শরণার্থী। গত মঙ্গলবার উখিয়ার কুতুপালং- এ হিন্দু শরণার্থী শিবিরে ঢুকতেই দেখা হয় পরিমল ধরের সঙ্গে। এক চোখ অন্ধ পরিমল তখন ক্যাম্পের ভেতর হাঁটছিলেন। পরিমল জানান, মিয়ানমারের আকিয়াবের মংডুর চারমাইল এলাকায় ছিল তার বাড়ি। সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে পরিমলও পরিবারসহ বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। কিন্তু এখানে আসার ৬ মাসের মধ্যে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় বর্তমানে তার শরীরের একপাশ অনেকটা অচেতন হয়ে গেছে। তাই পরিষ্কার করে কথাও বলতে পারেন না। কিন্তু এখানে যথাযথ চিকিৎসাও পাচ্ছেন না তিনি। তিনি বলেন, 'আসার পর থেকে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছি; কিন্তু যেতে পারছি না। এখানে আমি ভালো নেই। সাত ছেলেমেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আমাকে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।' শুধু পরিমল নন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহ এবং নানা শর্তের কারণে প্রত্যাবাসন দুই দফা আটকে গেলেও একই সময়ে এখানে আশ্রয় নেয়া হিন্দু শরণার্থীদের অবস্থা ভিন্ন। তারা নিরাপত্তা পেলে কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে আগ্রহী। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং হিন্দুপাড়া সংলগ্ন হিন্দু শরণার্থী ক্যাম্পের সভাপতি শিশু শীল (৩২) বলেন, ১২৬ পরিবার থেকে ১৩ পরিবার চলে গেছে। বর্তমানে ১১৩টি পরিবারের ৪৭০ জন হিন্দু শরণার্থী এখানে আছেন। এরা সবাই চলে যেতে আগ্রহী। তিনি বলেন, 'মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের বিরোধ ছিল না। সরকার আমাদের নির্যাতন করেনি। আমাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। কারণ আমরা তাদের কথা শুনি নাই। তারা আমাদের দুটি হিন্দু গ্রামের অনেক মানুষকে হত্যা করে। সরকারের কাছ থেকে কার্ড চাইতে আমাদের বাধ্য করার চেষ্টা করে, কিন্তু আমরা চাইনি। তাই তারা আমাদের ওপর নির্যাতন চালায়। যে কারণে আমরা এখানে পালিয়ে আসি।' 'শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার নিশ্চয়তা পেলে বিনা শর্তেই সবাই মিয়ানমারে ফিরে যাবেন,' যোগ করেন শিশু শীল। ক্যাম্পে বসবাসরত সোনারাম পাল নামে এক হিন্দু শরণার্থী বলেন, 'সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসেছিল। আমরা তাদের বলেছি, সেখানে আমাদের নিরাপত্তার জন্য একটা সেনাবাহিনীর থানা করে দিলে আমরা চলে যাব। আমাদের আর কোনো দাবিদাওয়া নেই। সরকারের ইচ্ছে হলে জায়গাজমি দিবে, না দিলেও সমস্যা নেই। সরকার আমাদের যেখানে নিয়ে যাবে, আমরা সেখানেই চলে যাব।' এই ক্যাম্পের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রুদ্র বলেন, 'আমরা এখানে আসার দুই বছর হয়ে গেছে। আসার পর থেকেই মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা শুধু নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলেই চলে যেতে চাই।' মিন্টু আরও বলেন, এই ক্যাম্পে বসবাসরত প্রত্যেককে প্রতিমাসে ডবিস্নউএফপির (জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি) পক্ষ থেকে ৭৭০ টাকার একটি কার্ড দেয়া হয়। কিন্তু একজন মানুষ কী এই টাকায় চলতে পারে? অন্য ক্যাম্পগুলোতে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও এখানে তা নেই। 'এখানে আমরা ভালো নেই। মিয়ানমারে ফিরে গেলে আমরা কাজকর্ম করে খেতে পারব,' যোগ করেন মিন্টু। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিন্দু শরণার্থী বলেন, 'বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কুতুপালং বাজারে যেতে হয়। সেখানে কিছু রোহিঙ্গা আমাদের হুমকি-ধমকি দেয়। এখানে আসার পর এখন তারা বলছে, তাদের কথা ছাড়া আমরা যেন বাংলাদেশ থেকে না যাই।' কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, হিন্দু ক্যাম্পসহ সব ক্যাম্পেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে অবাধে বাইরে না আসতে পারে, সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও ক্যাম্পগুলোকে ঘিরে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে