শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেট্রোরেলের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ মে ২০১৯, ০০:০০
মেট্রোরেলের নির্মাণযজ্ঞ -ফাইল ছবি

সড়কজুড়ে দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। অধিকাংশ পিলারের ওপর বসছে স্প্যান। মেট্রোরেলের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল পাইলিং। সব চ্যালেঞ্জ জয় করে প্রতিনিয়তই এগিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মিরপুর, শেওড়াপাড়া এবং আগারগাঁওয়ে পিলারের ওপর দৃশ্যমান হয়েছে স্প্যান। ম্যাসর্ যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-৬) নির্মাণকাজ হচ্ছে দুটি ধাপে। উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও রুটে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৩৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়েই সম্পন্ন হবে বলে দাবি করছে মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ত) আবদুল বাকি মিয়া বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রম্নতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু দেশে নয়, জাপানেও মেট্রোরেল প্রকল্পের কিছু অংশের কাজ হচ্ছে, যেমন- কোচ নির্মাণকাজ। মেট্রোরেলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কাজই চ্যালেঞ্জিং। এরপরও প্রধান চ্যালেঞ্জ ইতোমধেই সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকা দেখলে সবাই বুঝতে পারছেন প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে। একের পর এক স্প্যান পিলারে বসছে। বর্তমানে স্টেশন নির্মাণকাজও এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়েই প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করতে পারব। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ সংশোধিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। তবে সার্বিক গড় অগ্রগতি ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেলের এই অংশ প্যাকেজ-৩ এবং প্যাকেজ-৪ এর আওতায়। মোট দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩। এই অংশে মোট ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। উভয় প্যাকেজের কাজ ২০১৭ সালের ১ আগস্ট শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিষেবা স্থানান্তর, চেকবোরিং, টেস্ট পাইল এবং মূল পাইল সম্পন্ন হয়েছে। মোট ৭৬৬টি পাইল ক্যাপের মধ্যে ৬০০টি পাইল ক্যাপ, ৩৯৩টি পিয়ার হেডের মধ্যে ৩০৩টি পিয়ার হেডের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়াও ১০৮টি আই-গার্ডারের মধ্যে ৯৬টি আই-গার্ডার, পাঁচ হাজার ১৪৯টি প্রিকাস্ট সেগম্যান্ট কাস্টিংয়ের মধ্যে দুই হাজার ৫৪৯টি প্রিকাস্ট সেগম্যান্ট কাস্টিং নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। তিন হাজার ৯৩০ মিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। প্যাকেজ-৮ এর আওতায় রেল কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ এগিয়ে চলছে। এই প্যাকেজের বাস্তব কাজ ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। বর্তমানে রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের আওতায় সম্পূর্ণ নকশা সম্পন্ন হয়েছে। জাপানে মেট্রোরেলের মকআপ রিভিউ সম্পন্ন হয়েছে। বগি নির্মাণের কাজ চলতি বছরের ১৬ ফেব্রম্নয়ারি জাপানে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের এয়ার কন্ডিশন, ব্রেক ওট্রেন ইনফরমেশন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেম প্যাকেজ-৭ এর আওতায় ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেম সরবরাহ ও নির্মাণকাজ ২০১৮ সালের ১১ জুলাই শুরু হয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেম সরবরাহ ও নির্মাণকাজের আওতায় ডেভিনিটিভ নকশা সম্পন্ন হয়েছে। হাইভোল্টেজ ফিডার ক্যাবল স্থাপনের জন্য টেস্ট পিট খনন, উত্তরা রিসিভিং সাবস্টেশন (আরএসএস) নির্মাণ এবং টঙ্গি ও মানিকনগর গ্রিড সাবস্টেশনে বে নির্মাণের কাজ চলছে। রেল ও ৩৩ কেভি ক্যাবলস, ১৩২ কেভি ক্যাবলস জাহাজিকরণ করা হয়েছে। ব্যালাস্টপ্রি শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) সম্পন্ন হয়েছে। এসব কাজের বাস্তব অগ্রগতি সাড়ে ৭ শতাংশ। ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন প্যাকেজ-১ এর আওতায় এই কাজ। বাস্তব কাজ ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে নির্ধারিত সময়ের ৯ মাস পূর্বে গত ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি সমাপ্ত হয়েছে। বাস্তব অগ্রগতি শতভাগ। ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ প্যাকেজ-২ এর আওতায় চলমান। বাস্তব কাজ ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার পূর্ত কাজ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। বাস্তব অগ্রগতি ৩০ শতাংশ। প্যাকেজ-৫ এই প্যাকেজের আওতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণকাজ চলমান। এই প্যাকেজের বাস্তব কাজ ২০১৮ সালের ১ আগস্ট শুরু হয়েছে। বর্তমানে এই অংশে পরিষেবা স্থানান্তর, চেকবোরিং ও টেস্ট পাইল সম্পন্ন হয়েছে। মূল পাইল নির্মাণের জন্য ২১০টি ট্রায়াল পিটের মধ্যে ১০৮টি ট্রায়াল পিট এবং ৪৫২টি বোরড পাইলের মধ্যে ৬৭টি বোরড পাইল সম্পন্ন হয়েছে। জাপানের সব থেকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১০৪টি স্ক্রু পাইল ফাউন্ডেশনের মধ্যে ১২টি স্ক্রু পাইল ফাউন্ডেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। বাস্তব অগ্রগতি ৭ শতাংশ। প্যাকেজ-৬ কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৪টি স্টেশন নির্মাণকাজ চলমান। এই প্যাকেজের বাস্তব কাজ ২০১৮ সালের ১ আগস্ট শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে এই অংশে পরিষেবা স্থানান্তর, চেকবোরিং ও টেস্ট পাইল সম্পন্ন হয়েছে। মূল পাইল নির্মাণের জন্য ১৬০টি ট্রায়াল পিটের মধ্যে ৭৯টি ট্রায়াল পিট এবং ৬৫২টি বোরড পাইলের মধ্যে ১৪৪টি বোরড পাইল সম্পন্ন হয়েছে। জাপানের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৩৮টি স্ক্রু পাইল ফাউন্ডেশনের মধ্যে ৩৬টি স্ক্রু পাইল ফাউন্ডেশন সম্পন্ন হয়েছে। বাস্তব অগ্রগতি ৭ শতাংশ। ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রম্নততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। এই প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এই এলাকায় বসবাসকারী লাখো নগরবাসী মেট্রোরেল ব্যবহার করে গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রকল্পে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে যাত্রী নিয়ে। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। চলতি বছরেই খুলে যাবে প্যাকেজ-৩ এবং প্যাকেজ-৪। এর আওতায় উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। উভয় প্যাকেজের কাজ ২০১৭ সালের ১ আগস্ট শুরু হয়েছে। সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ফলে চলতি বছরেই স্বপ্নের মেট্রোরেলে চড়বে ঢাকাবাসী। বাংলানিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে