বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
জরিপের ফল

মোদির কাজে অসন্তুষ্ট ভারতীয়রা

ভারতের দুই লাখ ৭৩ হাজার ৪৮৭ ভোটারকে নিয়ে করা এই জরিপে কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে প্রায় সব খাতেই অসন্তোষ রয়েছে
নতুনধারা
  ২৬ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২৬ মার্চ ২০১৯, ২০:৪৭
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

যাযাদি ডেস্ক ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রম্নতি যেমনই দিয়ে থাকুন, বাস্তবে নরেন্দ্র মোদির সরকারের কাজের ফল নিয়ে আদৌ সন্তুষ্ট নন ভারতীয়রা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগ-মুহূর্তে এমন এক জরিপের তথ্যই মোদি-অমিতদের কপালে ভাঁজ ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। দেশব্যাপী তিন লাখের কাছাকাছি মানুষের মধ্যে করা জরিপের ফলে দেখা গেছে, কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বা পানি, মানুষের সবচেয়ে বেশি চাহিদার জায়গাগুলোতে মাঝারিরও নিচে নম্বর পেয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। জরিপটি চালিয়েছিল দিলিস্নভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস' (এডিআর)। ভারতের মোট ৫৩৪ লোকসভা কেন্দ্রের দুই লাখ ৭৩ হাজার ৪৮৭ ভোটারকে নিয়ে এই জরিপ চালিয়েছে এডিআর। জরিপ অনুযায়ী, দেশটির নিরাপত্তা বা সন্ত্রাসী হামলার চেয়েও জনগণ অনেক বেশি চিন্তিত কর্মসংস্থান, চিকিৎসা, পানির মতো বিষয়গুলো নিয়ে। জরিপটি করা হয়েছিল ২০১৮ সালের অক্টোবর এবং ডিসেম্বর মাসে। সে সময় যদিও পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি। আরও একটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, এটি মূলত সাধারণ জনগণ সরকারের কাছ থেকে কী চান, এর ওপর করা। ফলে এই জরিপ থেকে এটা বোঝা সম্ভব নয়, ওই তিন লাখ ভোটার বিজেপিকে ভোট দেবেন কিনা। কারণ, সেটা তাদের থেকে জানতে চাওয়া হয়নি। এডিআরের জরিপের তালিকার শীর্ষে রয়েছে কর্মসংস্থান। ভোটাররা তালিকায় দ্বিতীয় অগ্রাধিকার দিয়েছেন চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তাকে। তৃতীয়, পানি এবং এরপর যথাক্রমে রাস্তাঘাট, যানবাহন, সেচের পানি, কৃষিকাজে ঋণের সুবিধা, কৃষিজাত দ্রব্যের ক্রয়মূল্য বাড়ানো, সার এবং বীজে ভর্তুকি এবং আইন-শৃঙ্খলা বা বিভিন্ন পলিসির প্রয়োজনীতার কথা জানিয়েছেন ভোটাররা। শহর এবং গ্রামে এই তালিকায় একটু হেরফের হলেও দুই ক্ষেত্রেই ভোটাররা কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ২০১৭ সালে 'অল ইনডিয়া মিডটার্ম' নামে ঠিক এমনই একটা জরিপ করেছিল এডিআর। ২০১৮ সালে এডিআর-এর জরিপের সঙ্গে তার তুলনা করলে ফল আরও মারাত্মক বেরিয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, তখনো জনগণের জন্য চাকরি সুযোগ দেয়া এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা- এই দুই ক্ষেত্রেই সবচেয়ে ব্যর্থ ছিল সরকার। এই পুরো বিষয়টিকে এডিআর ১, ২, ৩ করে ৫ পর্যন্ত রেটিং করেছে। ৫-এর অর্থ ভালো। ৩-এর অর্থ মাঝারি এবং ১-এর অর্থ খারাপ। যে প্রথম ১০ প্রয়োজনীতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন ভোটাররা, সেসব ক্ষেত্রে সরকার কেমন কাজ করেছে, সেটা বোঝানোর জন্যই এই রেটিং। এডিআর-এর জরিপ অনুযায়ী, দেখা গেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারের নম্বর মাঝারির থেকেও কম। এমনকি তালিকার এই ১০টি ক্ষেত্রেই সরকারের নম্বর এক বছরে বাড়ার বদলে বরং কমেছে। কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকারের নম্বর যেখানে ২০১৭ সালে ছিল ৩.২, সেখানে ২০১৮ সালে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ২.২। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই নম্বর ২০১৭ সালের জরিপের ৩.৭ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২.৪। সে রকম পানীয় জল এবং রাস্তাঘাটের ক্ষেত্রেও ২০১৭ সালের চেয়ে নম্বর কমেছে সরকারের। এর মধ্যে রাজ্য অনুযায়ী দেখলে, বিহার, ছত্তিশগঢ়, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরাখন্ড এবং উত্তরপ্রদেশ- এই সাত রাজ্যে কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা অন্য রাজ্যগুলোর তুলনায় বেশি। তেমনই ওড়িশা, কর্ণাটক এবং দমন-দিউয়ে পানীয় জলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়তার কথা ভোটাররা জানিয়েছেন। ঠিক যেমন চন্ডিগড়ে ভোটারদের অগ্রাধিকার পানি এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, দিলিস্নর যানজট, মেঘালয়ের কৃষি বীজ ও সারে ভর্তুকি এবং ত্রিপুরায় ভোটাররা অগ্রাধিকার দিয়েছেন কৃষিকাজের জন্য ঋণের সুযোগকে। পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররা কোন প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, সেটা অবশ্য আলাদা করে এডিআর-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত জরিপের রিপোর্টে উলেস্নখ নেই। চলতি মাসেই বেকারত্বের বৃদ্ধি নিয়ে আরও একটি পরিসংখ্যান বেরিয়েছিল। 'সেন্টার ফর মনিটারিং ইনডিয়ান ইকোনমি'র (সিএমআইই) জরিপে তখন দেখা গিয়েছিল, গত এক বছরে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৭.২ শতাংশ। যেখানে গত বছর ঠিক এই সময় বেকারত্বের হার ছিল ৫.৯ শতাংশ। মোদি যতই কর্মসংস্থানের হিসাব দিন না কেন, বাস্তবে যে ততটা সহজ নয়, এডিআরের এই জরিপ থেকে সেটা আরও একবার স্পষ্ট হলো। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে