শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
স্বীকৃতি দিলেন ট্রাম্প

গোলান মালভূমি ইসরাইলি ভূখন্ড

প্রত্যাখ্যান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের
নতুনধারা
  ২৬ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২৭ মার্চ ২০১৯, ০০:০৬
ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে তা দেখান ট্রাম্প

যাযাদি ডেস্ক মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকা সিরিয়ার গোলান মালভূমিকে ইসরাইলি ভূখন্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন সফররত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে 'নির্বাচনে জয়ী হতে সহায়তা করতে' তিনি এ স্বীকৃতি দেন। এদিকে, গোলান মালভূমিকে ইসরাইলি ভূখন্ড হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে যে স্বীকৃতি দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় ইসরাইল। সামরিক কৌশলগভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই মালভূমিকে ইসরাইল ১৯৮১ সালে আইনিভাবে নিজেদের ভূখন্ডের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেও বিশ্ব সম্প্রদায় তা মেনে নেয়নি। কিন্তু সোমবার হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে 'গোলান মালভূমি ইসরাইলি ভূখন্ড' এই ঘোষণা দেয়া স্বীকৃতিপত্রে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। আনুষ্ঠানিক এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গোলান মালভূমির বিষয়ে তাদের কয়েক দশকের অনুসৃত নীতি থেকে সরে গেল। হোয়াইট হাউসে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা ইহুদি ধর্মাবলম্বী জ্যারেড কুশনারের উপস্থিতিতে এ সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। এর আগে টুইটারে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ইসরাইল রাষ্ট্র ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গোলান মালভূমির কৌশলগত ও নিরাপত্তাজনিত গুরুত্ব রয়েছে। অঞ্চলটিতে ইসরাইলি সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়ার এখনই সময়। এই স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ২০১৭ সালের ফেব্রম্নয়ারি থেকে ট্রাম্পের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার এক টুইটে গোলান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি বদলের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রিপাবলিকান এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর প্রতি প্রত্যক্ষ সমর্থনের ইঙ্গিত দিলেন। পঞ্চম মেয়াদের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নেতানিয়াহু আগামী ৯ এপ্রিল সাধারণ নির্বাচনের মুখোমুখি হচ্ছেন। স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গোলান মালভূমিকে ইসরাইলি ভূখন্ডের ট্রাম্পের স্বীকৃতির পর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ইসু্যতে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান। রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কাতার, লেবাননও ট্রাম্পের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা বিষয়ক দূত মিখাইল বোগডানোভ বলেন, গোলান নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এ ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'যুক্তরাজ্য গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি দখলদারিত্ব স্বীকার করে না। আমাদের এ সংক্রান্ত অবস্থান পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই।' ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি দখলদারিত্বের পক্ষে ট্রাম্প যে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফ্রান্স এই দখলদারিত্ব স্বীকার করে না। জার্মানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি দখলদারিত্বের স্বীকৃতি না দেয়ার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেছে কানাডা। কাতার সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গোলান মালভূমি থেকে ইসরাইলকে অবশ্যই সরে যেতে হবে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলেছেন, অন্য দেশের ভূখন্ডের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার বিদেশি নেতাদের নেই। গোলান মালভূমি গুরুত্বপূর্ণ যে কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম সিরিয়ার একটি পাথুরে মালভূমি হচ্ছে এই গোলান। জায়গাটা বেশি বড় নয়, কিন্তু এর কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ গোলান মালভূমি থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক শহর, এবং দক্ষিণ সিরিয়ার একটি বড় অংশ স্পষ্ট দেখা যায়। সিরীয় সেনাবাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য এটা এক আদর্শ জায়গা। তা ছাড়া পার্বত্য এলাকা বলে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর কোনো সম্ভাব্য আক্রমণের পথে এটা একটা চমৎকার প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে। গোলান- এটি প্রাকৃতিক পানির উৎস। এই মালভূমি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে জর্ডান নদীতে। এর এটি হচ্ছে ইসরাইলের পানি সরবরাহের এক তৃতীয়াংশের উৎস। তা ছাড়া জায়গাটি উর্বর এবং এখানে ফল ও আঙুরের চাষ হয়, পশুপালন হয়। সেখানে ৩০টির বেশি ইসরাইলি বসতি আছে, যাতে ২০ হাজার ইসরাইলি বাস করে। এ ছাড়াও সেখানে বাস করে প্রায় ২০ হাজার সিরীয় দ্রম্নজ সম্প্রদায়ের লোক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে