বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত বিলুপ্ত করার পরামর্শ দিয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগ

যাযাদি রিপোটর্
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০৮
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য দেশের মানুষের কাছে ‘ক্ষমা না চাওয়ায়’ জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, যিনি যুদ্ধাপরাধে দÐিত শীষর্ জামায়াত নেতাদের আইনজীবী দলের নেতৃত্বে ছিলেন সময়ের দাবি অনুযায়ী ‘বাংলাদেশের ধমির্নরপেক্ষ সংবিধানের আওতায় ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে’ জামায়াতকে একটি গণতান্ত্রিক দল গড়ে তুলতে দলটির নেতাদের ব্যথর্তা নিয়ে পদত্যাগপত্রে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। রাজ্জাকের বড় ছেলে ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী জানান, শুক্রবার জামায়াতের আমির মকবুল আহমদকে ওই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তার বাবা। জামায়াতের একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, ঢাকায় তাদের আমিরের কাছে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগপত্র আসার কথা তিনিও জানতে পেরেছেন। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী নেতাদের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গত ছয় বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। জ্যেষ্ঠ বদরনেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফঁাসির ৫ দিন পর ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা ছাড়েন জামায়াতের অন্যতম এই শীষর্ নেতা। ব্রিটিশ নাগরিকত্বধারী এই আইনজীবী সেখান থেকেই জামায়াতের আমির মকবুল আহমদের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। আব্দুর রাজ্জাকের ব্যক্তিগত সহকারী কাউসার হামিদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দুটি কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেছেন। জামায়াত ’৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি এবং একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতার আলোকে এবং অন্যান্য মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের রাজনৈতিক পরিবতর্নকে বিবেচনায় এনে নিজেদের সংস্কার করতে পারেনি। এসেক্সের বারকিং থেকে ঢাকায় পাঠানো পদত্যাগপত্রে রাজ্জাক জামায়াতের আমিরকে ‘পরম শ্রদ্ধেয় মকবুল ভাই’ সম্মোধন করে লিখেছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাÑ পরবতীর্কালে জামায়াতের সকল সাফল্য ও অজর্ন ¤øান করে দিয়েছে। রাজ্জাক লিখেছেন, গত প্রায় দুই দশক তিনি জামায়াতকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা ও পাকিস্তান সমথের্নর কারণ উল্লেখ করে জাতির কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া উচিত। দলীয় ফোরামে কবে কখন কীভাবে তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, তার একটি তালিকা তুলে ধরে পদত্যাগপত্রে বলা হয়েছে, সবশেষে, ডিসেম্বরের নিবার্চনের পর জানুয়ারি মাসে জামায়াতের করণীয় সম্পকের্ আমার মতামত চাওয়া হয়। আমি যুদ্ধকালীন জামায়াতের ভূমিকা সম্পকের্ দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্ষমা চাওয়ার পরামশর্ দিই। অন্য কোনো বিকল্প না পেয়ে বলেছিলাম, জামায়াত বিলুপ্ত করে দিন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমার তিন দশকের সকল প্রচেষ্টা ব্যথর্ হয়েছে। রাজ্জাক লিখেছেন, একাত্তরের ভূমিকার জন্য ‘গ্রহণযোগ্য বক্তব্য প্রদানের ব্যথর্তা এবং ক্ষমা না চাওয়ার দায়ভার’ এখন তাদেরও নিতে হচ্ছে, যারা তখন ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত ছিল না, এমনকি যাদের তখন জন্মও হয়নি। এই ক্রমাগত ব্যথর্তা জামায়াতকে স্বাধীনতাবিরোধী দল হিসেবে আখ্যায়িত করার ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে। ফলে জামায়াত জনগণ, গণরাজনীতি এবং দেশবিমুখ দলে পরিণত হয়েছে। জামায়াতে যোগ দেয়ার পর দলের ভেতর থেকেই সংস্কারের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জানিয়ে রাজ্জাক লিখেছেন, দলের কাঠামোগত সংস্কার, নারীর কাযর্কর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং জামায়াতের উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা ও কমর্সূচিতে ‘আমূল পরিবতর্ন’ আনতে তার প্রস্তাবগুলো গত ৩০ বছরে ইতিবাচক সাড়া পায়নি। পদত্যাগপত্রে রাজ্জাক বলেছেন, অতীতে অনেকবার পদত্যাগের কথা ভাবলেও তিনি নিজেকে বিরত রেখেছেন এই ভেবে যে দলের সংস্কার করা সম্ভব হলে এবং একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াত জাতির কাছে ক্ষমা চাইলে তা হবে একটি ‘ঐতিহাসিক অজর্ন’। কিন্তু জানুয়ারি মাসে জামায়াতের সবের্শষ পদক্ষেপ আমাকে হতাশ করেছে। তাই পদত্যাগ করতে বাধ্য হলাম। এখন থেকে আমি নিজস্ব পেশায় আত্মনিয়োগ করতে চাই। সেই সাথে ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি সমৃদ্ধশালী ও দুনীির্তমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করব। জামায়াতের প্রতিক্রিয়া এদিকে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকসহ আমরা দীঘির্দন একইসঙ্গে এই সংগঠনে কাজ করেছি। তিনি জামায়াতে ইসলামীর একজন সিনিয়র পযাের্য়র দায়িত্বশীল নেতা ছিলেন। তার অতীতের সব অবদান আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’ শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এক বিবৃতিতে শফিকুর রহমান এ কথা বলেন। সকালে খবর আসে ব্যারিস্টার রাজ্জাক পদত্যাগ করেছেন। সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মমার্হত। পদত্যাগ করা যেকোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। আমরা দোয়া করি, তিনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা আশা করি, তার সঙ্গে আমাদের মহব্বতের সম্পকর্ অব্যাহত থাকবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে