শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৭৭৮ থেকে শুরু হয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রক্রিয়া

যাযাদি রিপোটর্
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:১২

কায়েমী স্বাথর্বাদী মহল ও ভাষা সংস্কৃতিতে আক্রমণকারী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের মূল আঘাতটি ১৯৫২ সালে হলেও এ আন্দোলন একদিনে হয়ে উঠেনি। বাঙালির দীঘির্দনের সংগ্রামের ফসল এ আন্দোলন। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৭৭৮ সালে ব্রিটিশ লেখক ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড ব্রিটিশ কোম্পানি সরকারের পক্ষে বাঙালিদের ইংরেজি শেখার জন্য ‘অ এৎধসসবৎ ড়ভ ঃযব ইবহমধষ ষধহমঁধমব’ নামক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তখন ভারতীয় উপমহাদেশের রাষ্ট্রভাষা ছিল ফাসির্। হ্যালহেড তার ব্যাকরণের ভূমিকায় ফাসির্র পরিবতের্ বাংলাকে সরকারি কাজ-কমের্ ব্যবহারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে, কোম্পানি সরকারের সুবিধা হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে ফাসির্র পরিবতের্ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। এ যাবৎ পাওয়া ইতিহাস থেকে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তাব এটাই। তাও একজন ব্রিটিশ কমর্কতার্-লেখকের জবানিতে। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক বাংলা ভাষার পক্ষে প্রথম উচ্চারণ হয় রাজশাহী থেকে। ‘নুর-আল-ইমান’ পত্রিকার প্রথম বষর্, ৩য় সংখ্যায় ওই পত্রিকার সম্পাদক মিজার্ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ‘বঙ্গীয় মোসলমান ভাই বহিনের খেদমতে নুর-আল-ইমানের আপীল’ নামক সম্পাদকীয়তে উদুর্ বাঙালি অনুগতদের ‘খেদমৎগার’ হিসেবে উল্লেখ করে লিখেন, শরীফ সন্তানেরা এবং তাহাদের খিদমাৎগারগণ উদুর্ বলেন, বাঙ্গলা ভাষা ঘৃণা করেন, কিন্তু সেই উদুর্ জবানে মনের ভাব প্রকাশ করা তো দূরে থাকুক, পশ্চিমা লোকের গিলিত চবির্ত লিখিত শব্দগুলিও অনেকে যথাস্থানে শুদ্ধ আকারে যথাথর্ অথের্ প্রয়োগ করিতেও অপারগ। অথচ বাঙ্গলায় মনের ভাব প্রকাশ করিবার সুবিধা হইলেও ঘৃণা করিয়া তাহা হইতে বিরত হন। সতেজ স্বাভাবিক বাঙ্গলা ভাষা স্বাধীনতা পাইলে তৎসঙ্গে পল্লীবাসী মোসলমান সমাজের উন্নতির যুগান্তর উপস্থিত হইবে। বঙ্গের মোসলমান ভ্রাতাভগ্নিগণ, বাঙ্গলা ভাষাকে হিন্দুর ভাষা বলিয়া ঘৃণা না করিয়া আপনাদের অবস্থা ও সময়ের উপযোগী করিয়া লউন। ১৯০৬ সালে ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে, সে অধিবেশনেও রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটি ওঠে। ১৯০৭ সালে বিপ্লবী আবদুর রসুল ও আবদুল হালিম গজনবীর উদ্যোগে একটি কোম্পানি লিমিটেড কতৃর্ক প্রকাশিত ‘দি মুসলমান’ পত্রিকার সম্পাদক মজিবর রহমান উদুর্ভাষী বাঙালিদেরকে ঘৃণা করে ‘দি মুসলমান’ পত্রিকায় কলম ধরেছেন। এ সম্পকের্ সত্যেন সেন (১৯০৭-১৯৮১) ‘ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা’ নামক গ্রন্থে লেখেন, ‘শিক্ষিত মসুলমান একটি চিন্তাধারা লক্ষ্য করা যেত তাদের মধ্যে অনেকেই উৎপত্তি ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে নিজেদের বাঙালি পরিচয় বলে স্বীকার করতে চাইত না এবং বাংলাভাষী হওয়া সত্তে¡ও উদুের্ক নিজেদের ভাষা বলে দাবি করতেন। ‘দি মসুলমান’ পত্রিকা সব সময় এই লজ্জাকর মনোবৃত্তির উপর তীব্র কষাঘাত করে এসেছে।’ মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের দাবিটি সম্ভবত প্রথম তুলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। ১৯১৮ সালে ভাষা বিতকর্ চলাকালে ‘আল ইসলাম’ পত্রিকার আশ্বিন ১৩২৫ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বনাম বঙ্গীয় মুসলমান’ নামক প্রবন্ধে লিখেন, ‘মাতৃভাষাকে জাতীয় ভাষার স্থলে বরণ করা ব্যতিত কোনো জাতি কখনো উন্নতির সোপানে আরোহণ করতে পারে না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে